২০২৩ সাল

ছয় মাসে ১৮১ দিনের মধ্যে ১৩৭ দিনই ছিল লোডশেডিং

বিশেষ প্রতিনিধি: গত বছর জুলাইয়ে শুরু হয় আনুষ্ঠানিক লোডশেডিং। জ্বালানি সংকটই এর মূল কারণ। তবে এর ব্যাপকতা এতটাই ছিল যে, পৌষের শীতেও লোডশেডিং হয়েছে। তবে চলতি বছর লোডশেডিংয়ের প্রবণতা অনেক বেড়েছে। বিশেষ করে এপ্রিলে রোজায় সর্বোচ্চ উৎপাদনের রেকর্ডের পরও রেকর্ড লোডশেডিং হয়। আর জুনে লোডশেডিং সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যায়। জ্বালানি সংকটে পায়রাসহ বিভিন্ন কেন্দ্র বন্ধের প্রভাবে এ সময় বিদ্যুৎ সরবরাহে বড় বিপর্যয় দেখা যায়।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) তথ্যমতে, চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে (জানুয়ারি-জুন) ১৮১ দিনের মধ্যে ১৩৭ দিনই লোডশেডিং ছিল। এর মধ্যে জানুয়ারি মাসে লোডশেডিং হয় ২২ দিন, ফেব্রুয়ারিতে ২৫ দিন, মার্চে ১৮ দিন, এপ্রিলে ২১ দিন, মে মাসে ২৫ দিন ও জুনে ২৬ দিন। যদিও ২০২২ সালের প্রথম ছয় মাসে আনুষ্ঠানিক কোনো লোডশেডিং ছিল না।

এদিকে দেশের ইতিহাসে গত ৭ জুন রেকর্ড তিন হাজার ৪১৯ মেগাওয়াট লোডশেডিং হয়। এর আগে ৬ জুন সর্বোচ্চ তিন হাজার ২৮৭ মেগাওয়াট ও ৫ জুন তিন হাজার ২১৫ মেগাওয়াট লোডশেডিং করা হয়। তার আগে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ লোডশেডিং হয় ৩ জুন দিবাগত রাত ১২টায়। ওই সময় লোডশেডিংয়ের পরিমাণ ছিল তিন হাজার ৮১ মেগাওয়াট। ওইদিনই প্রথম লোডশেডিং তিন হাজার মেগাওয়াট অতিক্রম করে।

এর আগে দেশে সর্বোচ্চ লোডশেডিং হয়েছিল গত ১৩ মে। ঘূর্ণিঘড় মোখার কারণে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) সরবরাহ বন্ধ থাকায় বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাস সরবরাহ কমে যায়। ওইদিন রাত ১২টায় দুই হাজার ৯২৫ মেগাওয়াট লোডশেডিং হয়। এছাড়া গত ১৫ এপ্রিল দুই হাজার ৫০৬ মেগাওয়াট ও গত বছর ৮ অক্টোবর দুই হাজার ১০৭ মেগাওয়াট লোডশেডিং হয়েছিল; যা দেশের ইতিহাসে ওই সময়ের রেকর্ড ছিল।

বাংলাদেশ পাওয়ার গ্রিড কোম্পানির (পিজিসিবি) তথ্যমতে, চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে নেট বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ ছিল (আমদানিসহ) চার হাজার ১৬৬ কোটি ৯ লাখ কিলোওয়াট ঘণ্টা। ২০২২ সালের একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল চার হাজার ৩৩২ কোটি ২৫ লাখ কিলোওয়াট ঘণ্টা। অর্থাৎ চলতি বছর ছয় মাসে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমেছে প্রায় ১৬৬ কোটি ১৬ লাখ কিলোওয়াট ঘণ্টা বা তিন দশমিক ৮৪ শতাংশ। এই ছয় মাসের মধ্যে শুধু জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে উৎপাদন বেড়েছে। তবে বাকি চার মাস উৎপাদন আগের বছরের চেয়ে কমেছে।

পিজিসিবি বলছে, চলতি বছরের জানুয়ারিতে ৫৮৭ কোটি ৯৮ লাখ কিলোওয়াট ঘণ্টা বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়। গত বছরের জানুয়ারিতে এর পরিমাণ ছিল ৫৭৫ কোটি ৩০ লাখ কিলোওয়াট ঘণ্টা। অর্থাৎ ওই মাসে উৎপাদন বাড়ে ১২ কোটি ৬৮ লাখ কিলোওয়াট ঘণ্টা বা দুই শতাংশের কিছু বেশি। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় ৫৮৭ কোটি ৯৪ লাখ কিলোওয়াট ঘণ্টা। গত বছরের একই মাসে উৎপাদন হয়েছিল ৫২৮ কোটি ৪৭ লাখ কিলোওয়াট ঘণ্টা। অর্থাৎ ফেব্রুয়ারিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন বেড়েছে ৫৯ কোটি ৪৭ লাখ কিলোওয়াট ঘণ্টা বা ১১ দশমিক ২৫ শতাংশ।

যদিও মার্চে প্রায় ৫১ কোটি ইউনিট বা ছয় শতাংশের বেশি উৎপাদন কমে যায়। ওই মাসে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে ৭১৬ কোটি ৬২ লাখ কিলোওয়াট ঘণ্টা। গত বছরের একই মাসে যার পরিমাণ ছিল ৭৬৭ কোটি ৩৫ লাখ কিলোওয়াট ঘণ্টা। এপ্রিলে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমার রেকর্ড হয়। ওই মাসে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় ৭৬৫ কোটি ৬৩ লাখ কিলোওয়াট ঘণ্টা। গত বছরের একই মাসে যা ছিল রেকর্ড ৮৫৯ কোটি ৭৫ লাখ কিলোওয়াট ঘণ্টা। অর্থাৎ চলতি বছর এপ্রিলে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমেছে ৯৪ কোটি ১২ লাখ কিলোওয়াট ঘণ্টা বা প্রায় ১১ শতাংশ।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত অক্টোবরেই এক প্রতিবেদনে এর আশঙ্কা করা হয়েছিল। ওই সময় পিডিবি জানায়, এপ্রিলে রোজা ও গ্রীষ্মকাল হওয়ায় বিদ্যুতের চাহিদা অনেক বেশি হবে। সে অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহে গ্যাস ও ফার্নেস অয়েল পর্যাপ্ত পরিমাণে সরবরাহ করতে হবে। তা না হলে রেকর্ড লোডশেডিং হবে। বাস্তবেও সে পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয় পিডিবিকে।

এদিকে গত মে মাসে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় ৭৬৮ কোটি ৫৩ লাখ কিলোওয়াট ঘণ্টা। গত অর্থবছরের একই মাসে যার পরিমাণ ছিল ৭৭৩ কোটি ১৮ লাখ কিলোওয়াট ঘণ্টা। ওই মাসে সামান্য কমলেও জুনে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমেছে ৮৮ কোটি ৮১ লাখ কিলোওয়াট ঘণ্টা বা ১০ দশমিক ৭২ শতাংশ। ওই মাসে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় ৭৩৯ কোটি ৩৯ লাখ কিলোওয়াট ঘণ্টা। গত বছরের জুনে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ৮২৮ কোটি ২০ লাখ কিলোওয়াট ঘণ্টা।

পিডিবির কর্মকর্তারা বলছেন, জুনে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ধস নামার অন্যতম কারণ পায়রা বন্ধ হয়ে যাওয়া। কয়লা সংকটে এ বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় রেকর্ড ঘাটতি দেখা দেয়। এতে জুনে রেকর্ড লোডশেডিংও করতে হয়।