প্রতিনিধি, কুষ্টিয়া : উপমহাদেশের প্রখ্যাত বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহের স্মরণোৎসব শুরু হচ্ছে আগামীকাল গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে। এ উপলক্ষে কুষ্টিয়ার কুমারখালীর ছেঁউড়িয়ায় ইতিমধ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। তবে প্রতিবছর তিন দিনব্যাপী বর্ণাঢ্য আয়োজন থাকলেও এ বছর পবিত্র রমজানের কারণে একদিনে শুধুমাত্র আলোচনা সভা এবং বাউলদের আপ্যায়নের মধ্যদিয়ে শেষ হবে এই উৎসব। দর্শনার্থীদের জন্য থাকছে না সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও গ্রামীণ মেলা। সাংস্কৃতিক বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় লালন একাডেমির আয়োজনে দর্শনার্থীদের জন্য কোনো উৎসব না থাকলেও সাধুসঙ্গ চলবে প্রচলিত রীতি অনুযায়ী।
জানা গেছে, মরমি সাধক লালন শাহ তার জীবদ্দশায় দোল পূর্ণিমার রাতে শিষ্যদের নিয়ে কালীগঙ্গার তীরে সাধুসংঘে বসতেন। তারই ধারাবাহিকতায় লালন শাহের তিরোধানের পরও প্রতিবছর ফাল্গুন মাসের শেষদিকে লালন শাহের আখড়াবাড়িতে দোলপূর্ণিমা উদযাপন করা হয়। এতে দেশ-বিদেশ থেকে লাখো ভক্তবৃন্দ জড়ো হন আখড়াবাড়িতে। অষ্টপ্রহরে গুরুকার্যের মধ্যদিয়ে শুরু সাধুসঙ্গ।
সরেজমিন দেখা যায়, দোল পূর্ণিমার উৎসব উপলক্ষে কয়েক দিন আগে থেকেই আখড়বাড়িতে আসতে শুরু করেছেন বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহের ভক্তবৃন্দ। কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে লালনের গান। দলে দলে বিভক্ত বাদ্যযন্ত্রের তালে গান পরিবেশন করছেন তারা।
এ সময় লাল্টু সাধু বলেন, সারাবছর এই দিনের অপেক্ষায় থাকি। দোল উৎসবে দেশ-বিদেশের বাউল ও সাধুরা আখড়াবাড়িতে আসেন। মিলন মেলা বসে। একে অপরের মধ্যে ভাব বিনিময় হয়।
আখড়াবাড়ির ভারপ্রাপ্ত খাদেম মো. মশিউর রহমান বলেন, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গুরুকার্যের মাধ্যমে শুরু হবে সাধুসঙ্গ। এরপর রাখাল সেবা, মধ্যরাতে অধিবাস, শুক্রবার ভোররাতে বাল্য সেবা এবং দুপুরে পূর্ণসেবার মধ্যদিয়ে শেষ হবে বাউল ও ভক্তদের সাধুসঙ্গ।
কুষ্টিয়া পুলিশ সুপার (এসপি) মো. মিজানুর রহমান, সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে মাজারসংলগ্ন এলাকায় সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য অতিরিক্ত পুলিশ ও আনসার সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। আগত বাউল সাধক, ভক্ত অনুরাগী এবং দর্শনার্থীদের সহযোগিতার জন্য গ্রাম পুলিশ, স্বেচ্ছাসেবক দল এবং মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে।
এ বিষয়ে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. তৌফিকুর রহমান বলেন, প্রতিবছর দোলপূর্ণিমা তিথিতে মরমী সাধক ফকির লালন শাহের তিন দিনব্যাপী স্মরণোৎসব অত্যন্ত জাঁকজমকপূর্ণ ও সাড়ম্বরে উদযাপন হয়ে থাকে। তবে এ বছর দোল পূর্ণিমা পবিত্র রমজান মাসে হওয়ায় লালন স্মরণোৎসবে শুধুমাত্র আলোচনা সভা এবং বাউল আপ্যায়নের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, পবিত্র মাহে রমজানের পবিত্রতা ও যথাযথ ভাব-গাম্ভীর্য রক্ষার্থে এ বছর বাউলদের মাগরিবের পরে এবং রাতে সেবা প্রদানের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।