আরিফ হোসেন,বরিশাল: ছোটবেলা থেকেই পুলিশ বাহিনীতে চাকরি করার স্বপ্ন দেখতেন আছপিয়া ইসলাম কাজল। যে কারনে স্কুল ও কলেজে পড়াকালীন সময়েই স্কাউটের সাথে জড়িত ছিলেন সে।
শনিবার (১১ ডিসেম্বর) সকালে সংবাদকর্মীদের কাছে এমনটাই জানিয়েছেন পুলিশের প্রতিবেদনে ভূমিহীন জেলার হিজলা উপজেলার বাসিন্দা আছপিয়া। তিনি বলেন, হিজলা উপজেলা সদরের টিটিএনডিসি মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গন্ডি পার হয়ে বিসিডি মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে ২০১৮ সালে এসএসসি পাস করেন। এরপর সরকারী হিজলা ডিগ্রি কলেজ থেকে মানবিক বিভাগে এইচএসসি পাস করে বাংলাদেশ পুলিশের নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। সেখানে সাতটি পরীক্ষায় উর্ত্তীণ হন। কিন্তু পুলিশ ভেরিফিকেশনে গিয়ে জানতে পারে হিজলাতে তাদের কোনো জমি নেই। এ কারণে তার চাকরি হবেনা। আছপিয়া বলেন, যখন প্রথম খবরটা পাই তখনকার অনুভূতিটা বলে বোঝাতে পারবো না। তবে আমি হাল ছাড়ছি না, চালিয়ে যেতে চাই লেখাপড়া। সেই সাথে চাকরি পাওয়ার চেষ্টা। ছোটবেলা থেকেই আমার স্বপ্ন পুলিশে চাকরি করে দেশ ও মানুষের সেবা করার। কারণ এটা আমার বাবারও ইচ্ছা ছিল। তিনি বলেন, চাকরিটা হলে মা, ভাই-বোনদের একটু ভালো রাখতে পারবো। কারণ বাবার মৃত্যুর পর মা আর ভাই আমাকে লেখাপড়া চালিয়ে নিতে সাহায্য করছেন।
আছপিয়ার মা ঝরনা বেগম জানান, ২০১৯ সালে আছপিয়ার বাবার আকস্মিক মৃত্যুর পর সবকিছু ওলট পালট হয়ে যায়। তিনি স্থানীয় অপু চৌধুরীর মিলের ম্যানেজার ছিলেন। তিনিই আমাদের বর্তমান ঘরে থাকার ব্যবস্থাও করে দিয়েছেন। মেয়েটার চাকরি হলে আমাদের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটবে। ঝরনা বেগম বলেন, আমাদের পরিবারের চার সদস্য হিজলা উপজেলার ভোটার। আমার স্বামীও এই এলাকার ভোটার ছিলেন। তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন গণমাধ্যমে আমার মেয়ের সংবাদটি নজরে পরেন বিশ্ব মানবতার মা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে জেলা প্রশাসক স্যার উপজেলা নির্বাহী অফিসার স্যারকে আমাদের জমিসহ ঘর দেওয়ার কথা বলেছেন। ঘর পেলে স্থায়ী ঠিকানার যে সমস্যা আছে, তাও ঠিক হয়ে যাবে। আছপিয়ার মা বলেন, বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা-টিভিতে আমরা শুনতে পেয়েছি, প্রধানমন্ত্রী আমার মেয়ের স্বপ্ন পূরণের জন্য চাকরির ব্যবস্থা করার আশ্বাস দিয়েছেন। তবে জেলা পুলিশ সুপার স্যার বলেছেন, চাকরি সংক্রান্ত কোন নির্দেশনা তিনি এখনও পাননি। তবে অসহায় আছপিয়ার পরিবারকে জমিসহ ঘর দেওয়ার কথা শুনে স্থানীয়রা প্রধানমন্ত্রী, জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাধুবাদ জানিয়ে, আছপিয়ার পুলিশ কনস্টবলের চাকরি নিশ্চিত করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে জোর দাবি করেছেন।
উল্লেখ্য, গত ১০ সেপ্টেম্বর বরিশাল জেলায় পুলিশে ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টবল (টিআরসি) পদে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে পুলিশ সদর দফতর। ওই বিজ্ঞপ্তিতে টিআরসি পদে সাতজন নারী ও ৪১ জন পুরুষ নেওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী হিজলা থেকে অনলাইনে আবেদন করেন আছপিয়া ইসলাম কাজল। ১৪, ১৫ ও ১৬ নভেম্বর জেলা পুলিশ লাইন্সে অনুষ্ঠিত শারীরিক যোগ্যতা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ১৭ নভেম্বর লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে আছপিয়া। ২৩ নভেম্বর প্রকাশিত লিখিত পরীক্ষার ফলাফলেও সে উর্ত্তীণ হয়। ২৪ নভেম্বর পুলিশ লাইন্সে মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নিয়ে মেধা তালিকায় পঞ্চম হয় আছপিয়া। ২৬ নভেম্বর পুলিশ লাইন্সে প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ২৯ নভেম্বর মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের ঢাকার রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে চূড়ান্ত স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। সেখানে কৃতকার্য হয় আছপিয়া। তবে চূড়ান্ত নিয়োগের আগে পুলিশ ভেরিফিকেশনে বরিশাল জেলার স্থায়ী বাসিন্দা না হওয়ায় আছপিয়া নিয়োগ থেকে ছিটকে পরেন।