ছোট জলাশয়ের দিকেও নজর দিতে হবে

 

দৈনিক শেয়ার বিজে আগে একাধিকবার দেশের নৌপথগুলো সংস্কার করে সারা বছর চলাচলের উপযোগী করার বিষয়ে সম্পাদকীয় লেখা হয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে আকাশ ও সড়কপথের চেয়েও নৌপথ যে উপযোগী, সেসব বিষয় উল্লেখ করে সরকারকে আমরা আহ্বান জানিয়েছিলাম, নদীমাতৃক বাংলাদেশে নদীপথকে অধিকতর গুরুত্ব দেওয়া হোক। নদীপথে যাত্রী ও পণ্য পরিবহনে খরচ কম হয়, যানবাহন পরিচালন ব্যয় সবচেয়ে কম ও সহজে রক্ষণাবেক্ষণ করা যায় এবং এটি সবচেয়ে পরিবেশসম্মত যাতায়াতমাধ্যম। গতকাল দৈনিক শেয়ার বিজেই এ-সম্পর্কিত একটি খবরে আমরা আশান্বিত হয়েছি যে, সরকার দেশের নৌপথকে গুরুত্ব দিতে যাচ্ছে। খবর অনুসারে, পণ্য পরিবহনের জন্য দেশের ৬৫টি নৌপথকে চিহ্নিত করা হয়েছে, যার মধ্যে ১২টি পথকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এতে বাকি ৫৩টি পথও পরোক্ষভাবে উপকৃত হবে। বিশ্বব্যাংক আয়োজিত ‘আনলকিং দ্য ট্রান্সফরমেটিভ পাওয়ার অব ওয়াটার’ শীর্ষক এক কর্মশালায় শিল্পমন্ত্রী উপর্যুক্ত তথ্য জানান।

শিল্পমন্ত্রী ওই কর্মশালায় শুধু দেশেই নয়, দক্ষিণ এশিয়ার নদীপথ ব্যবহার করে আঞ্চলিক পর্যায়ে পণ্য আনা-নেওয়ার কথাও উল্লেখ করেছেন। নিঃসন্দেহে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ। রাজধানীর আশপাশের নদীগুলোও দখলমুক্ত করার কথা উল্লেখ করেছেন তিনি। যদিও এ বিষয়ে গত কয়েক বছরে আমরা কেবল ব্যর্থতাই দেখে আসছি, কিন্তু নদীপথ ব্যবহারের মাধ্যমেই যে দখলদারদের উচ্ছেদ করা সম্ভব, তাও তিনি উল্লেখ করেছেন। বিশ্বব্যাংক ওই কার্যক্রমগুলোতে সহায়তা দেবে। যদি সত্যিকার অর্থেই নৌপথগুলো উদ্ধার করে পণ্য পরিবহনের কাজে ব্যবহার করা যায়, এতে একদিকে যেমন অর্থনীতি গতি পাবে তেমনি পরিবেশের দিক দিয়েও তা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করবে।

এ খবর যেদিন প্রকাশিত হয়েছে, সেদিনই ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে খাল দখল করে মাছ চাষের আরেকটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে দৈনিক শেয়ার বিজে। এ রকম খবর যদিও নতুন কিছু নয়, কিন্তু জলাশয় দখল করে চাষ করা, ভবন নির্মাণ কিংবা অন্য কাজে ব্যবহার করার ঘটনাগুলো প্রমাণ করেÑএসব বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসন সতর্ক নয়। একটি দেশের উন্নয়নের জন্য নদ-নদী যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি স্থানীয় খাল-বিল-পুকুরও কম অবদান রাখে না। জলাবদ্ধতা নিরসনেও এগুলো সহায়ক হিসেবে কাজ করে। দুঃখজনক হলো, এসব দখলদারিত্বের সঙ্গে সরকারি দলের সঙ্গে যুক্ত রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়। সরকার বড় পর্যায়ে নদ-নদী সংস্কারকে গুরুত্ব দিচ্ছে এটি যেমন সুসংবাদ তেমনি স্থানীয় পর্যায়ে ছোট জলাশয়গুলো যদি এভাবে একের পর এক দখল হতে থাকে, তাহলে সেগুলো আদতে বড় বিপর্যয় বয়ে নিয়ে আসবে। আমরা সরকারের প্রতি আহ্বান জানাবো, দেশের সব জলাশয়কে সমন্বিতভাবে দখলমুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হোক। পাশাপাশি সব জলাশয় পরিকল্পিতভাবে ব্যবহারেরও মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করা হোক। বর্ষার সময়ে এসব জলাশয় যেন শুষ্ক মৌসুমের জন্য পানি ধরে রাখতে পারে এবং সেচসহ অন্যান্য কাজে ব্যবহার করা যায়Ñএসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে ছোট-বড় সব ধরনের জলাশয়ের জন্য অভিন্ন সংস্কার কর্মসূচি গ্রহণ প্রয়োজন।