শেয়ার বিজ ডেস্ক : মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে গত ছয় দিনে কক্সবাজারের টেকনাফ, উখিয়া ও বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়িতে প্রায় ১৮ হাজার রোহিঙ্গা প্রবেশ করেছে। তারা উখিয়ার কুতুপালং, বালুখালী, টেকনাফের লেদা ও বাহারছড়া এলাকায় অবস্থান করছে। আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) গতকাল কক্সবাজারে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছে।
এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গা নাগরিকদের বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ বন্ধে মিয়ানমারকে চাপ দিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক ভারপ্রাপ্ত সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী এলিস ওয়েলস গতকাল সকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে দেখা করতে গেলে এ আহ্বান জানান তিনি। পরে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের জানান, ‘রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ বন্ধে মিয়ানমারকে চাপ দিতে যুক্তরাষ্ট্রকে আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মানবিক কারণে আমরা তাদের আশ্রয় দিয়েছি। কিন্তু এটা বড় সমস্যা।’ ইহসানুল করিম বলেন, ‘এই সঙ্কট নিয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে কি নাÑসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী তা জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে মিয়ানমারের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে।’
উল্লেখ্য, গত ২৪ আগস্ট রাখাইন রাজ্যের ২০টির বেশি সীমান্ত ফাঁড়িতে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় সেখানে সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ অভিযান শুরু করেছে সেনা ও পুলিশ। সেনাদের গুলিতে ইতোমধ্যে নিহত হয়েছে শতাধিক ব্যক্তি। রোহিঙ্গাদের শত শত ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। বাস্তুহারা রোহিঙ্গারা প্রাণ বাঁচাতে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশ অনুপ্রবেশ করছে।
আইওএমের কক্সবাজার কার্যালয়ে এ-সংক্রান্ত পরিস্থিতি তুলে ধরেন সংস্থাটির কক্সবাজার উপপ্রধান কার্যালয়ের মুখ্য কর্মকর্তা সংযুক্তা সাহানি। তিনি জানান, ২৪ থেকে ২৯ আগস্ট পর্যন্ত ছয় দিনে প্রায় ১৬ হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশ আশ্রয় নিয়েছে। বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের নো ম্যান্স ল্যান্ডে প্রবেশের অপেক্ষায় আছে আরও অনেক রোহিঙ্গা। তবে এর সংখ্যা নির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব নয়। গত বছরের অক্টোবরের সহিংসতায় যেসব রোহিঙ্গা বাংলাদেশে চলে এসেছিল তাদের মধ্যে পুরুষ, নারী ও শিশু প্রায় সমানই ছিল বলে উল্লেখ করে আইওএমের ওই কর্মকর্তা বলেন, কিন্তু এবার যারা প্রবেশ করেছে তাদের বেশিরভাগই নারী, শিশু ও বয়স্ক। যুবক পুরুষের সংখ্যা খুবই কম। যারা প্রবেশ করছে তারা উখিয়া উপজেলার কুতুপালং অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা শিবির, বালুখালী অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা শিবির, টেকনাফের বাহারছড়া সমুদ্র উপকূলের শাপলাপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় আশ্রয় নিচ্ছে। অনেকে আবার কুতুপালং নিবন্ধিত শিবিরেও ঢুকে পড়ার চেষ্টা করছে।
সংযুক্তা সাহানি বলেন, যারা এই ক’দিনে চলে এসেছে, এই মুহূর্তে তাদের সব ধরনের সহায়তা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তাদের বাঁচিয়ে রাখা বেশি জরুরি। এজন্য রোহিঙ্গাদের নিয়ে চলমান কর্মসূচির আওতায় নতুন আসা রোহিঙ্গাদের বেঁচে থাকার জন্য যা যা প্রয়োজন সব এনজিও সংস্থার সমন্বয়ে তা করা হচ্ছে। তবে এ সহায়তা একেবারেই অপ্রতুল। সহায়তা দিতে গিয়ে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে। এখন যেসব রোহিঙ্গা আসছে তারা যদি শরীরে কোনো রোগ বহন করে তাহলে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জন্য তা হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। তাই জরুরি ভিত্তিতে নতুন আসা এসব রোহিঙ্গা সদস্যকে টিকা দেওয়ার জন্য সরকার ও এনজিও সংস্থাগুলোকে আহ্বান জানান তিনি। এসব রোহিঙ্গা জাতিগোষ্ঠীর সদস্য কীভাবে বাংলাদেশে প্রবেশ করছেÑএ প্রসঙ্গে সাহানি বলেন, এটা আমাদের দেখার বিষয় নয়। কোনো রোহিঙ্গা যখন আমাদের কর্মসূচির আওতাধীন এলাকায় চলে আসে, তখন তাদের জীবনের নিরাপত্তা থেকে শুরু করে সব সহায়তা দেওয়াটা জরুরি।