জনগণকে জানানো উচিত টিকা কেনার খরচ

কভিডের টিকা কেনা খাতের ব্যয়ের তথ্য জাতীয় সংসদে প্রকাশ করেননি স্বাস্থ্যমন্ত্রী। বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেছেন, উৎপাদনকারী কোম্পানির সঙ্গে ‘নন-ডিসক্লোজার অ্যাগ্রিমেন্ট’-এর কারণে সংসদে অর্থ খরচের হিসাব প্রকাশ করা ‘সমীচীন হবে না’।

গতকাল শেয়ার বিজে এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, এ পর্যন্ত কভিডের কী পরিমাণ টিকা সংগ্রহ করা হয়েছে, তা জানিয়ে মন্ত্রী বলেছেন, সর্বোচ্চ প্রতিযোগিতামূলক মূল্যে সততা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে ভ্যাকসিন কেনা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সংসদে মন্ত্রী জানান, ২১ কোটি ১৭ লাখ ৩০ হাজার ডোজ টিকা কেনা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে চীন থেকে সাত কোটি ৭০ লাখ ডোজ সিনোফার্ম, সাত কোটি ৫১ লাখ ডোজ সিনোভ্যাক, ভারত থেকে তিন কোটি কোভিশিল্ড ও কোভ্যাক্সের আওতায় দুই কোটি ৯৭ লাখ ২০ হাজার ডোজ সিনোফার্মের টিকা।

যেহেতু আমাদের টিকা কেনা-সংক্রান্ত তথ্য কোনো কারণে প্রকাশ করা যাবে না, তাই এটি শুধুই ‘বিশ্বাসের’ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। মন্ত্রী বলেছেন, ‘চীন, ভারত ও কোভ্যাক্স থেকে সর্বোচ্চ প্রতিযোগিতামূলক মূল্যে সততা ও স্বচ্ছতার নিশ্চিত করে ভ্যাকসিন কেনা হয়েছে।

হয়তো কেনা হয়েছে। ‘হয়তো’ শব্দটি  এজন্য ব্যবহার হয়েছে যে, কভিডকালে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কোনো কেনাকাটায়ই স্বচ্ছতার পরিচয় পাওয়া যায়নি। পীড়িত মানুষের পাশে দাঁড়ানো নৈতিক ও মানবিক দায়িত্ব ছিল, সে কঠিন সময়ে তখন মাস্ক-পিপিই ও ভেন্টিলেটরের মতো জরুরি স্বাস্থ্যসামগ্রী কেনায় দুর্নীতির কথা সবার জানা। এর আগে হাসপাতালে ৩৭ হাজার টাকা দামের পর্দা, ১৬ গুণ অতিরিক্ত দামে মেডিকেলের বই, বিশ্বব্যাংকের ঋণপুষ্ট চার হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্পে সরকারি কেনাকাটা বড় লোপাটের কথা বেশ আলোচিত। কভিড-পরীক্ষা কেলেঙ্কারিতে বহির্বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তিও ক্ষুণœ হয়েছে।

দুর্নীতির এত খবর প্রকাশিত হওয়ায় সাধারণ মানুষের বিশ্বাসে চিড় ধরতে পারে। বিভিন্ন হাসপাতালে নির্মাণের আগে চিকিৎসা সরঞ্জাম কেনা হয়েছে এবং ফেলে রাখা হয়েছে অযতেœ-অবহেলায়। প্রাণ রক্ষাকারী যন্ত্রপাতি কিনে ফেলে রাখায় রাষ্ট্রীয় অর্থ অব্যবহার হয়েছে। দামি যন্ত্রপাতি আমদানি, রক্ষণাবেক্ষণ, ব্যবহারে অবহেলায় উচ্চ আদালতকে জনস্বার্থে স্বতঃপ্রণোদিত রায় দিতে হয়েছে। তখন আদালত বলেছেন, যন্ত্রপাতি ও চিকিৎসাসামগ্রীর যথাযথ মান নিরীক্ষা করা এবং যন্ত্রপাতিগুলো কার্যকর ও সচল রাখতে প্রতিটি হাসপাতালে সার্বক্ষণিক তদারকির জন্য উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি গঠন করতে হবে। কভিড টিকা কেনাকাটায় রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রীই বলেছেন, আইন মন্ত্রণালয়, অর্থ বিভাগ, সিসিজিপি ও প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন সাপেক্ষে টিকা কেনা হয়েছে। নন-ক্লোজার অ্যাগ্রিমেন্টের মাধ্যমে ভ্যাকসিন কেনার কারণে সংসদে অর্থ খরচের হিসাব প্রকাশ করা সমীচীন হবে না। আমরা বিশ্বাস করি, রাষ্ট্রের উদ্যোগে কভিড টিকা কেনার কোনো পর্যায়েই ন্যূনতম দুর্নীতি সংঘটিত হয়নি। সর্বোচ্চ সততা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে প্রতিযোগিতামূলক মূল্যে ভ্যাকসিন কেনা হয়েছে। এ বিষয়ে জনগণের বিশ্বাসযোগ্যতা নিশ্চিত করতে টিকা কেনার সামগ্রিক ব্যয় জনগণের সামনে তুলে ধরা উচিত বলে মনে করি। আর রাষ্ট্রীয় ব্যয়ের হিসাব জানতে চাওয়া জনগণের সাংবিধানিক অধিকার বটে। সরকার এ বিষয়ে দৃষ্টি দেবে বলেই বিশ্বাস।