শেয়ার বিজ ডেস্ক: পুলিশ বাহিনীকে জনবান্ধব প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে তার সরকারের দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিদ্যমান চাহিদার নিরিখে এ প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত থাকবে। এ সময় জনগণের মনে পুলিশ সম্পর্কে যেন অমূলক ভীতি না থাকে, সে জন্য জনগণের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। গতকাল রাজারবাগে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ লাইনসে পুলিশ সপ্তাহ-২০১৯ উদ্বোধনকালে তিনি এসব কথা বলেন। খবর বাসস।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ সালে পুলিশ ও জনসংখ্যার অনুপাত ছিল ১: ১৩৫৫। কিন্তু তার সরকারের আমলে এ অনুপাত ১: ৮০১-এ পৌঁছেছে। এ বাহিনীর প্রয়োজনীয় আধুনিক যানবাহন-সরঞ্জামাদি ও অস্ত্র সরবরাহ, ভূমি সংস্থান, অবকাঠামো নির্মাণ, প্রশিক্ষণ ও সার্বিক সক্ষমতা বৃদ্ধিসহ পুলিশ সদস্যদের কল্যাণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এ সময় বাংলাদেশকে উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে জনবান্ধব পুলিশ গঠনের ওপর গুরুত্বারোপের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা খাতে বরাদ্দকৃত অর্থকে আমরা ব্যয় নয়, বিনিয়োগ হিসেবে বিবেচনা করি। সরকারের কার্যকর পদক্ষেপের ফলে পুলিশ বাহিনীতে আজ দৃশ্যমান পরিবর্তন পরিলক্ষিত হচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী পুলিশকে আরও বেশি করে সড়কের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ও মাদকদ্রব্যের বিরুদ্ধে অগ্রণী ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়ে আশা প্রকাশ করে বলেন, এ পদকপ্রাপ্তি তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে আরও বেশি উদ্দীপনা ও প্রেরণা জোগাবে। তিনি বলেন, জনগণের সমস্যাকে দেখতে হবে একান্ত আন্তরিক ও মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে। জনগণের মনে পুলিশ সম্পর্কে যেন অমূলক ভীতি না থাকে, সে জন্য জনগণের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে।
তিনি আরও বলেন, পুলিশকে আমরা সব সময় আইনের রক্ষকের ভূমিকায় ‘জনবান্ধব পুলিশ’ হিসেবে দেখতে চাই। এ জন্য পুলিশ সদস্যদের পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় জনগণের মৌলিক অধিকার, মানবাধিকার ও আইনের শাসনকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে। শান্তি, নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলার প্রতীক বাংলাদেশ পুলিশ। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাসহ দেশমাতৃকার সেবায় সর্বদা পেশাদারিত্ব ও সাহসিকতার সঙ্গে পুলিশ দায়িত্ব পালন করছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সম্প্রতি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রেখে পুলিশ সদস্যরা পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন। এ জন্য প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ পুলিশের সব সদস্যকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, বিগত ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালে বিএনপি-জামায়াত ও তাদের দোসররা বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার অপপ্রয়াস চালায়। তারা সারা দেশে হরতাল, অবরোধ, সহিংসতা, নাশকতা, জ্বালাও-পোড়াও, আগুন সন্ত্রাস, নিরীহ মানুষ হত্যা ও রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংসের অপচেষ্টা চালিয়েছিল। সেদিন পুলিশ সদস্যরা পেশাদারিত্ব ও সাহসিকতার সঙ্গে তাদের ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড রুখে দিয়েছিলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ২০১৬ সালে হলি আর্টিজান এবং শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলা হয়। পুলিশ বাহিনী সুদৃঢ় মনোবল, অসীম সাহসিকতা ও দক্ষতার সঙ্গে কাজ করে জঙ্গি সংগঠনগুলোর সাংগঠনিক ভিত্তি ভেঙে দিতে সক্ষম হয়েছে। তিনি তার ওপর কয়েকবার সন্ত্রাসী হামলার কথা উল্লেখ করে বলেন, সন্ত্রাস ও সহিংস জঙ্গিবাদ-শান্তি, স্থিতিশীলতা এবং উন্নয়নের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি। সন্ত্রাসীর কোনো ধর্ম, বর্ণ, গোত্র নেই।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেন, এখন থেকে দায়িত্ব পালনকালে কোনো পুলিশ সদস্য নিহত হলে তার পরিবার আট লাখ টাকা পাবে।
পুলিশ সপ্তাহ উপলক্ষে গতকাল সকালে রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজের আয়োজন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী কুচকাওয়াজে সালাম গ্রহণ ও প্যারেড পরিদর্শন করেন। এছাড়া সেখানে প্রধানমন্ত্রী পেশাগত দক্ষতার স্বীকৃতি হিসেবে ৩৪৯ পুলিশ সদস্যকে বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম) এবং রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদকে (পিপিএম) ভূষিত করেন। এর মধ্যে ১০৪ জন বিপিএম (সেবা) ও ৪০ জন বিপিএম (সাহসিকতা) এবং ১৪৩ জন পিপিএম (সেবা) ও ৬২ জন পিপিএম (সাহসিকতা) পদক অর্জন করেন।
অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল, মহাপুলিশ পরিদর্শক (আইজিপি) জাভেদ পাটোয়ারী, মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, সংসদ সংসদ, জ্যেষ্ঠ সরকারি কর্মকর্তা, বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের নেতা এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন।
