Print Date & Time : 6 July 2025 Sunday 3:57 am

জবাবদিহি নিশ্চিত করলেই সড়কে শৃঙ্খলা ফিরবে

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষকে (বিআরটিএ) নিজেদের অবস্থার উন্নতির জন্য এক মাস সময় বেঁধে দিয়েছিলেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা। শনিবারও বিআরটিএ ভবন পরিদর্শন ও কনফারেন্স রুমে রোড সেফটিবিষয়ক মতবিনিময় সভা শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, বিআরটিএ’র কর্মকর্তাদের স্পষ্টভাবে বলে দেয়া হয়েছে, তারা যে আচরণ করছে; সেটা গ্রহণযোগ্য নয়। আমি তাদের এটাও বলেছি, সরকারি বিভিন্ন দপ্তর বিলুপ্ত হয়ে গেছে। বিআরটিএর কাজের যদি উন্নতি না হয়, তাহলে আমরা বিআরটিএ বন্ধ করে দেয়ার কথা চিন্তা করব।’

সড়ক দুর্ঘটনার একটি পরিসংখ্যান তুলে ধরে উপদেষ্টা বলেন, সম্প্রতি রোড সেফটি ফাউন্ডেশন আমাদের সড়ক দুর্ঘটনা বিষয়ে তথ্য-উপাত্ত দিয়েছে। গত বছর সারাদেশে ৭ হাজার ২৯৪ জন প্রাণ হারিয়েছেন এবং ১২ হাজারের বেশি আহত হয়েছেন, যা আগের বছরের থেকে ১২ শতাংশ বেশি। আমরা অন্তর্বর্তী সরকার হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে পারিনি, এর জন্য দায় নিচ্ছি।
আমরা মনে করি, সরকার দায় নেবে আর কর্মকর্তারা উদাসীন থাকবেন; এটি ঠিক নয়। অপরাধ স্বীকারের অংশ হিসেবে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ও আহতদের আইন অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ দেয়ার ব্যবস্থা করার জন্য বিআরটিএসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। প্রশ্ন হলো, যাদের দায়িত্বহীনতার কারণে দুর্ঘটনা ঘটে, সড়কে ফিটনেসবিহীন গাড়ি দাবড়ে চলে এবং চালকের লাইসেন্স না থাকে; তাদের তাদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক কোনো ব্যবস্থা নেয়া হবে না।।

দুর্ঘটনার পর জানা যায়, সংশ্লিষ্ট পরিবহন কোম্পানির চালক বাস চালিয়েছেন বিরামহীনভাবে, ক্লান্ত দেহে, চোখে ঘুম নিয়ে। বিআরটিএ) সূত্র জানায়, বাসটির চলাচলের অনুমতি ছিল না। ফিটনেস সনদের মেয়াদও পেরিয়ে গিয়েছিল। প্রতিটি দুর্ঘটনার এমন অনেক বিষয় সামনে আসে। যেমন— চালকদের বাস চালাতে হয় বিরামহীনভাবে, বাসটির চলাচলের অনুমতি ছিল না, ফিটনেস সনদের মেয়াদও পেরিয়ে গিয়েছিল, যাত্রীদের বারণ সত্ত্বেও চালক জোরে বাস চালান, বাসটির গতিনিয়ন্ত্রকও ভালোমতো কাজ করছিল না প্রভৃতি।

প্রতিটি অপমৃত্যুই বেদনাদায়ক। সড়ক দুর্ঘটনাকে অপমৃত্যুই চালিয়ে দেয়া মানে দায়ী ব্যক্তিরা দায় এড়ানোর একটা অজুহাত পাচ্ছেন।
প্রতিটি দুর্ঘটনার পর একাধিক তদন্ত কমিটি গঠন করার হয় হয়। বলা হয়, তদন্ত শেষেই বাসমালিকের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে। কিন্তু দুর্ঘটনার আগে কেন ব্যবস্থা নেয়া হয় না। কেন পরে জানা যায়, গাড়ির ফিটনেস ছিল না; চালানোর অনুমতি ছিল না। তাহলে বোঝা যায়, কেন সড়কে শৃঙ্খলা ফিরছে না। বিআরটিএর কার্যক্রম বন্ধ করার সুযোগ নেই। যেহেতু সড়কে গাড়ি চলবেই। সুশাসন ও জবাবদিহি নিশ্চিত করলেই সড়কে শৃঙ্খলা ফিরবে; দুর্ঘটনা, প্রাণহানি কমবে। বিআরটিসির উচিত হবে অভিলক্ষ অনুযায়ী সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ে অংশীজনের সচেতনতা বৃদ্ধি, যুগোপযোগী সড়ক পরিবহন আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগের মাধ্যমে টেকসই, নিরাপদ, সুশৃঙ্খল, পরিবেশবান্ধব আধুনিক সড়ক পরিবহন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।