জবাবদিহি নিশ্চিত করলে সড়কে শৃঙ্খলা ফিরবে

 ‘সড়কে শৃঙ্খলা না এলে উন্নয়ন ম্লান হয়ে যাবে’ শীর্ষক যে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে গতকালের শেয়ার বিজে, তা পাঠকের মনোযোগ কাড়বে বলেই ধারণা।

রোববার রাজধানীর তেজগাঁও সড়ক ভবনে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ পরিচালনা পরিষদের সভায় অংশ নিয়েছেন সড়ক পরিহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সেখানে তার দেয়া বক্তব্য শিরোনাম করেছেন আমাদের প্রতিবেদক।  মন্ত্রী আরও বলেছেন, ‘আমরা আট লেন করি, ছয় লেন করি, যতই উড়াল সড়ক, যতই আমরা কাজ করিÑশৃঙ্খলা না এলে সব উন্নয়ন ম্লান হয়ে যাবে। বর্ষা মৌসুমে খোঁড়াখুঁড়ি দেখে থাকি। বর্ষা মৌসুম শুরু হওয়ার আগে নির্মাণকাজ শেষ করতে হবে। রাস্তা কাটাকাটি করতে হলে সিটি করপোরেশনকে জানাতে হবে। যার যে প্রকল্প আছে, সেটাও সিটি করপোরেশনকে জানাতে হবে।’

মন্ত্রণালয়ের সর্বোচ্চ দায়িত্বশীল হিসেবে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রীর এমন বক্তব্যে সাধারণ মানুষ আশাবাদী হওয়ার কথা। এর আগেও মন্ত্রী এমন কথা বলেছেন, কিন্তু সুফল পায়নি সাধারণ মানুষ; সড়কে শৃঙ্খলা ফেরেনি। সড়কে শৃঙ্খলা আদৌ ফিরবে কিনা তাতেও নিশ্চিত হওয়া যায় না। কোথাও সমন্বয় নেই, জবাবদিহি নেই। মন্ত্রীর বক্তব্যে সব সীমাবদ্ধতার কথা খোলাসা হয়নি। সড়কে পরিবহন শ্রমিকদের দৌরাত্ম্য, ভাড়া নিয়ে নিত্য যাত্রীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার, দুর্ঘটনা প্রভৃতিতে জনসাধারণ একপ্রকার অতিষ্ঠ। গতকালই একটি সহযোগী  দৈনিকে প্রকাশিত হয় ‘নাদিয়ার ফার্মাসিস্ট হওয়ার স্বপ্ন সড়কে শেষ’ শীর্ষক প্রতিবেদন। প্রতিবেদনের ভাষ্য: বই কিনতে বেরিয়ে সড়কে লাশ হয়েছেন নাদিয়া। রোববার ক্লাস না থাকায় এক বন্ধুর সঙ্গে তার মোটরসাইকেলে করে বই কিনতে উত্তরার বাসা থেকে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় যাচ্ছিলেন। কুড়িল বিশ্বরোড এলাকায় তাদের মোটরসাইকেলটিকে একটি বাস ধাক্কা দেয়। এতে রাস্তায় ছিটকে পড়েন তারা। বাসটি নাদিয়াকে চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই নিহত হন তিনি। হাসপাতালের মর্গে নাদিয়ার বাবা বলেন, ‘মেয়ের স্বপ্ন ছিল বড় ফার্মাসিস্ট হবে। ওরা আমার সব স্বপ্ন শেষ করে দিল!’ এভাবে সড়কে কত স্বপ্ন শেষ হয়, তা আমাদের অজানা। অঙ্গ হারিয়ে জীবš§ৃত হয়ে বেঁচে থাকেন কেউ। তাদের পরিবারকে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়। রাজধানীতে মাঝেমধ্যেই সড়ক দুর্ঘটনায় শিক্ষার্থীরা মারা যাচ্ছেন। নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন হয়। কিন্তু অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয় না। সড়কে শৃঙ্খলা আনতে হলে কেবল রাস্তায় খোঁড়াখুঁড়ি নয়, নির্মাণ ও সংস্কারকাজে ধীরগতি, সড়ক আইন অমান্য করা প্রভৃতি বিষয়ও ভাবতে হবে।

সড়ক-মহাসড়ক নির্মাণ ব্যয়ে বাংলাদেশ অনেক আগেই বিশ্বে শীর্ষস্থান দখল করেছে। তা সত্ত্বেও আমাদের সড়ক-মহাসড়ক মানসম্পন্ন নয়।  প্রতিবছরই এসব সড়ক সংস্কারে রাষ্ট্রের বড় অঙ্কের অর্থ খরচ হয়। আবার ঈদ-বর্ষায় নতুন করে সংস্কারের প্রয়োজন পড়ে। এটি আমাদের সড়কপথের চেনা দৃশ্য।  স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করলে টেকসই সড়ক নির্মাণ-সংস্কারে নি¤œমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার বন্ধ হবে; সড়ক আইন পরিপালনও নিশ্চিত হবে। এতে সড়কে শৃঙ্খলা ফিরবে, দুর্ঘটনাও কমবে।