জবাবদিহি নিশ্চিত করা হোক

গতকালের শেয়ার বিজে প্রকাশিত ‘ইসলামপুরে প্রাথমিক শিক্ষার বেহাল দশা’ শিরোনামের প্রতিবেদনে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রাথমিক শিক্ষার করুণ চিত্র ফুটে উঠেছে। এতে বলা হয়েছে, জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলার বেশ কয়েকটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা শিক্ষাদানসহ কোনো অ্যাকাডেমিক কাজ করছেন না। তারা বছরের পর বছর হাজিরা খাতায় সই করে বেতন তুলে নিচ্ছেন। অন্যদিকে ভাড়া করা শিক্ষক দিয়ে কোনো রকমে ক্লাস নেওয়ার কাজ চালানো হচ্ছে। প্রাথমিক স্তর হলো শিক্ষা কার্যক্রমের ভিত্তি। স্বভাবতই প্রাথমিক শিক্ষকদের এমন কর্মকান্ড আমাদের হতাশ করে।

শিক্ষার উন্নয়নে অর্থায়ন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। শিক্ষা খাতে অর্থ ব্যয় একটি দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিনিয়োগ। এটি আমলে নিয়ে সরকার প্রায় প্রতি বাজেটেই শিক্ষায় বরাদ্দ বাড়িয়ে এসেছে। সংস্থানের চেয়েও বরাদ্দকৃত অর্থের সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করা এক্ষেত্রে জরুরি। প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষাদান ঠিকভাবে চলছে কি না, তা দেখভালের জন্য কয়েক স্তরে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষ রয়েছে। শিক্ষকদের দায়িত্বে অবহেলার ভার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ওপরও তাই অনেকটা বর্তায়। স্থানীয়ভাবে স্কুলের ম্যানেজিং বোর্ড শিক্ষাদান সংক্রান্ত কার্যাবলি মনিটর করে থাকে। পাশাপাশি শিক্ষক-ছাত্রের উপস্থিতি, শিক্ষকদের কর্তব্য পালন ও পাঠদানের মানের ওপর ত্রৈমাসিক প্রতিবেদন তৈরিও তাদের কাজ। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাও এ দায় এড়াতে পারেন না।

গণমাধ্যমের বরাতে ইতোমধ্যে ইসলামপুর বাদেও অনেক উপজেলাতেই প্রাথমিক শিক্ষকদের এ ধরনের চর্চার খবর পাওয়া যায়। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গেছে, উপজেলা শিক্ষা অফিসার তাদের এসব কর্মকান্ডের ব্যাপারে অবগত নন, যা তার দায়িত্বে অবহেলারই সাক্ষ্য বহন করে। প্রাথমিক শিক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে দায়িত্বশীলতা ও জবাবদিহির অভাবেই মূলত এমন পরিস্থিতি উদ্ভব হচ্ছে।

এ অবস্থা কোনোভাবেই চলতে দেওয়া যায় না। প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া নিয়ে পরিহাস বন্ধ করতে হবে। অন্যথায় আগামীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ব্যর্থ হবে দেশ। ভুলে গেলে চলবে না, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার অন্যতম বিষয় হলো অন্তর্ভূক্তিমূলক ও সমতাভিত্তিক মানসম্মত শিক্ষা। সেখানে হাজার হাজার শিক্ষার্থীর ন্যুনতম অধিকার অর্থাৎ সুষ্ঠু শিখন-পঠন কার্যক্রম অব্যাহত রাখাটাও যদি আমরা নিশ্চিত করতে না পারি, তাহলে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হবে।

এর মধ্যে সরকার প্রাথমিক স্তরের জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক শিক্ষক নিয়োগের ব্যবস্থা করেছে। বিদ্যালয়ের ভৌত অবকাঠামো উন্নয়নেও বেশকিছু কাজ করা হয়েছে। তা সত্তে¡ও এখনও দেশের অনেক অংশেই প্রাথমিক শিক্ষা কাম্য মানে পৌঁছতে পারছে না। সুশাসন নিশ্চিতের মাধ্যমে এ ধরনের সমস্যার সমাধান সম্ভব। এক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়া জেলা ও উপজেলাগুলোকে অগ্রাধিকার দিয়ে শিক্ষা ক্ষেত্রের দুর্নীতি রোধ করতে হবে। পেশার প্রতি শ্রদ্ধাবোধ জাগিয়ে তুলতে হবে শিক্ষকদের। এক্ষেত্রে প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন বৃদ্ধিকেও বিবেচনায় রাখা যেতে পারে। সম্মানজনক বেতন ও উন্নত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে মানসম্মত শিক্ষক গড়ে তোলা চাই। ক্লাস ফাঁকি দেওয়া শিক্ষকদের প্রয়োজনে আইনের আওতায়ও আনা যেতে পারে।