Print Date & Time : 8 July 2025 Tuesday 8:51 am

জবির নতুন ক্যাম্পাস নির্মাণে আন্তরিক হোন

শিক্ষার পরিসর বাড়লেও রাজধানীর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আবাসন সমস্যা থেকেই গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নীত হওয়ার আগে জগন্নাথ কলেজের বিপুল জমি বেহাত হয়েছিল। তা আর উদ্ধার করা যায়নি। পুরান ঢাকার বিভিন্ন পরিত্যক্ত বাড়িতে তৎকালীন জগন্নাথ কলেজের শিক্ষার্থীরা যেসব হল তৈরি করেছিল, ১৯৮৫ সালের পর থেকে সেগুলো স্থানীয় প্রভাবশালীদের দখলে চলে যেতে থাকে। ১৯৮৫ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি আরমানিটোলার আব্দুর রহমান হলে স্থানীয়দের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের অপ্রীতিকর ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সেদিনই আজমল হল, বাণী ভবন ও এরশাদ হল (বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবন) ছাড়া অন্যগুলো স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বন্ধ করে দেয়।

বেদখল হলগুলোর মধ্যে পুরান ঢাকার ওয়াইজ ঘাটের ৮ দশমিক ৮৮৯ কাঠার তিব্বত হল, আরমানিটোলার ২৫ দশমিক ৭৭ কাঠা জায়গায় দ্বিতল আব্দুর রহমান হল, আরমানিটোলার মাহুতটুলীর শরৎচন্দ্র চক্রবর্তী রোডে ৪০ কাঠা আয়তনের আনোয়ার শফিক হল, ২২ দশমিক ৯৭ কাঠা আয়তনের অধ্যক্ষ সাইদুর রহমান ও আব্দুর রউফ রহমান হল, চার কাঠা আয়তনের শহিদ শাহাবুদ্দিন হল, পাঁচ দশমিক পাঁচ কাঠার আজমল হোসেন হল প্রভৃতি। ওয়ারীর টিপু সুলতান রোডের গোপীমোহন বসাক লেনের ২০ কাঠা আয়তনের নজরুল ইসলাম হল উদ্ধার হয় শিক্ষার্থীদের ২০১৪ সালের আন্দোলনে। তবে জেলা প্রশাসন ছাত্রাবাসটি বিশ্ববিদ্যালয়কে বুঝিয়ে দিলেও এখনও এর কিছু অংশ বেদখল রয়েছে। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে ২০০৯ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের হল ও বেদখল অন্যান্য সম্পত্তি উদ্ধারে গঠিত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কমিটি আনোয়ার শফিক, শাহাবুদ্দিন, আজমল হোসেন, তিব্বত ও হাবিবুর রহমান হল বিশ্ববিদ্যালয়কে লিজ দেয়ার সুপারিশ করে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দীর্ঘমেয়াদি লিজের আবেদন করলেও কেবল হাবিবুর রহমান হল বুঝে পেয়েছে। হল ছাড়া একটা বিশ্ববিদ্যালয় কল্পনা করা যায় না। ১৮ বছর চলে গেল হল ছাড়া, শিক্ষার্থীরা যে কী পরিমাণ মানবেতর জীবনযাপন করে চলছে; তা সহজেই অনুমেয়। বেহাত জমি উদ্ধারে সহায়তা না করে সরকার বিশ্ববিদ্যালয়কে ২০০ একর জমি দিয়েছে ক্যাম্পাস স্থাপনের জন্য। এখন সেটির মাস্টারপ্ল্যান অনুমোদনে নাটকীয়তায় কাজ যথাসময়ে শেষ হওয়া নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। গতকাল শেয়ার বিজে এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। আমাদের প্রতিনিধি জানাচ্ছেন, মাস্টারপ্ল্যান অনুমোদন না হওয়ায় নতুন ক্যাম্পাস নির্মাণকাজ স্থবির হয়ে আছে। লেক নির্মাণের দরপত্র হলেও কাজ শুরুর অনুমোদন দিচ্ছে না বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থীরা  ভর্তি হন। এদের বেশিরভাগই গ্রামের গরিব, নি¤œ-মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। আবাসন সুবিধা না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় থাকতে হয়। উচ্চশিক্ষায় কী পরিমাণ ঝক্কি-ঝামেলা পোহাতে হয়, তা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ভালোই টের পাচ্ছেন।

অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের পর্যাপ্ত জমি নেই। আর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কিনা, বেহাত জমি উদ্ধার করে না; নতুন ক্যাম্পাস স্থাপনেও ধীরগতি, অনিশ্চয়তা। কী করে শিক্ষার্থীরা পড়ালেখার উপযুক্ত পরিবেশ পেয়ে জ্ঞানসাধনায় ব্রত হবে, নিজেদের দেশ ও জাতির জন্য অপরিহার্য করে তুলবে! বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনে যারা আছেন, তারা শিক্ষকও বটে। এ শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষার মানসম্পন্ন পরিবেশ নিশ্চিতকরণে আন্তঃবিভেদ-বিভাজন ভুলে আন্তরিক হবেন, এটিই প্রত্যাশা।