জমি অধিগ্রহণ ব্যয় ৩,৮৮৬ কোটি থেকে বেড়ে ১২,৫০০ কোটি টাকা

ইসমাইল আলী: পৃথক দুটি প্রকল্পের আওতায় চার লেনে উন্নীত করা হবে ঢাকা-সিলেট-তামাবিল মহাসড়কটি। তবে প্রকল্প দুটি দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য এ রুটে জমি অধিগ্রহণ ও পরিষেবা সংযোগ লাইন স্থানান্তরে পৃথক সাপোর্ট প্রকল্প নেয়া হয়েছে। আড়াই বছর আগে প্রকল্পটি অনুমোদন হলেও অগ্রগতি ১০ শতাংশেরও কম। এর মধ্যে জমি অধিগ্রহণ ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে ২২২ শতাংশ।

সম্প্রতি সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এ তথ্য উঠে এসেছে। ২০২১-২২ অর্থবছরের উন্নয়ন বাজেট প্রাক্কলন নির্ধারণে অনুষ্ঠিত ত্রিপক্ষীয় সভায় এ তথ্য জানানো হয়।

তথ্যমতে, ঢাকা-সিলেট-তামাবিল মহাসড়ক চার লেনের জন্য জমি অধিগ্রহণ ও পরিষেবা সংযোগ লাইন স্থানান্তরে ব্যয় ধরা হয়েছিল তিন হাজার ৮৮৫ কোটি ৭২ লাখ টাকা। এর পুরোটাই সরকারি তহবিল থেকে সরবরাহ করা হবে। তবে প্রস্তাবিত সংশোধিত ডিপিপিতে (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা) এ ব্যয় ধরা হয়েছে ১২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। অর্থাৎ জমি অধিগ্রহণ ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে আট হাজার ৬১৪ কোটি ২৮ লাখ টাকা বা ২২১ দশমিক ৬৯ শতাংশ।

এ বিষয়ে জানতে সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী আবদুস সবুরের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। পরবর্তী সময়ে প্রকল্প পরিচালক ও সওজের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (সিলেট) তুষার কান্তি সাহার সঙ্গে যোগাযোগ করলেও তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে বৈঠকে উপস্থিত সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের একজন অতিরিক্ত সচিব শেয়ার বিজকে বলেন, উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণে ক্ষতিপূরণের বিধান তিনগুণ করা হয়েছে। এতে জমি অধিগ্রহণ ব্যয় অনেক বেড়ে গেছে। এছাড়া জমির পরিমাণও পরিবর্তন হয়েছে। এ কারণেও ব্যয় বেড়েছে।

বৈঠকে জানানো হয়, এ মেগা প্রকল্পের অনুকূলে আগামী অর্থবছরে পাঁচ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়েছে। যদিও আড়াই বছরে জমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন না হওয়ায় ঢাকা-সিলেট ও সিলেট-তামাবিল চার লেন নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন বিঘিœত হওয়ার আশঙ্কা করছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি)। প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন শেষে সম্প্রতি এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগে জমা দিয়েছে আইএমইডি। এতে প্রকল্পটি দ্রুত বাস্তবায়নে বেশকিছু সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে।

আইএমইডির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উভয় পাশে পৃথক সার্ভিস লেনসহ ঢাকা-সিলেট-তামাবিল মহাসড়ক চার লেন উন্নীতকরণের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ ও ইউটিলিটি স্থানান্তরে সাপোর্ট প্রকল্প একনেকে (জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি) অনুমোদন করা হয় ২০১৮ সালের ২৩ অক্টোবর। আর প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে গত ১৭ অক্টোবর। অনুমোদনের পর প্রায় দুই বছর অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত জমি অধিগ্রহণ কার্যক্রম সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি, যা চার লেন নির্মাণকাজকে বিলম্বিত করতে পারে।

তথ্যমতে, ঢাকা থেকে সিলেট হয়ে তামাবিল পর্যন্ত মহাসড়কের দৈর্ঘ্য ২৭০ দশমিক ৫৮ কিলোমিটার। এজন্য প্রকল্পটির আওতায় ৯৮৬ দশমিক ৪৮ একর ভূমি অধিগ্রহণ করার কথা ছিল। এর মধ্যে রয়েছে নারায়ণগঞ্জে ১৯ দশমিক শূন্য আট একর, নরসিংদীতে ১০৫ দশমিক ১৬ একর, কিশোরগঞ্জে আট দশমিক শূন্য সাত একর, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৪৯ দশমিক ৩২ একর, হবিগঞ্জে ২৯৫ দশমিক ৫৩ একর, মৌলভীবাজারে ৯ দশমিক ৬০ একর ও সিলেটে ৪৯৯ দশমিক ৭২ একর।

যদিও প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে গিয়ে জেলাভেদে জমির পরিমাণ হ্রাস/বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে বাস্তব মূল্য যাচাই করে জমি অধিগ্রহণ খাতে ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। এদিকে প্রস্তাবিত বর্ধিত যে পরিমাণ ভূমি অধিগ্রহণ দরকার সে জন্য মন্ত্রণালয় থেকে প্রশাসনিক অনুমোদন পাওয়া যায়নি। এমনকি সংশোধিত প্রস্তাবিত ভূমির প্রিন্ট নকশা/বিএস ম্যাপ ও খতিয়ান না থাকায় এখন পর্যন্ত শনাক্ত করা যায়নি বাড়তি জমি। এতে পরিষেবা সংযোগ লাইন (বৈদ্যুতিক খুঁটি ও তার, টেলিফোন লাইন, ইন্টারনেট লাইন, পানির লাইন ও গ্যাস লাইন) স্থানান্তর সম্পন্ন হয়নি।

উল্লেখ্য, ঢাকা-সিলেট ২০৯ কিলোমিটার মহাসড়ক চার লেন নির্মাণ প্রকল্পটি সম্প্রতি অনুমোদন করেছে সরকার। এটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১৬ হাজার ৯১৮ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। এর মধ্যে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ঋণ দেয়ার কথা ১৩ হাজার ২৪৪ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। আর সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে তিন হাজার ৬৭৩ কোটি ৯০ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে।

এদিকে সিলেট-তামাবিল ৫৬ কিলোমিটার মহাসড়ক চার লেন প্রকল্পটি গত বছর সেপ্টেম্বরে অনুমোদন করেছে সরকার। এটি বাস্তবায়নে ব্যয় হবে তিন হাজার ৫৮৬ কোটি চার লাখ টাকা। এর মধ্যে দুই হাজার ৯৭০ কোটি ৫৫ লাখ টাকা প্রকল্প ঋণ হিসেবে এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংকের (এআইআইবি) কাছ থেকে পাওয়া যাবে। অবশিষ্ট ৬১৫ কোটি ৪৯ লাখ টাকা সরকারি তহবিল থেকে সরবরাহ করা হবে।