জমে উঠছে ঈদের বাজার

শেয়ার বিজ ডেস্ক : ঈদের আর মাত্র ১০ থেকে ১১ দিন বাকি। এরই মধ্যে বিভিন্ন মার্কেট ও ফুটপাতে জমে উঠছে ঈদের কেনাকাটা। বিকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত দেখা গেছে ক্রেতাদের আনাগোনা। বিপণিগুলোয় বাড়ছে ভিড়। তৈরি পোশাক কেনার পাশাপাশি নতুন পোশাক বানাতে আগেভাগেই পছন্দের কাপড় কিনছেন তরুণ-তরুণীরা। বিক্রেতারা জানিয়েছেন, ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে, ক্রেতাদের ভিড় ততই বাড়ছে। তবে দেশে নিত্যপণ্যসহ সবকিছুর দাম বৃদ্ধির ফলে ক্রেতারা ঈদ বাজারে এসে একটু চিন্তা-ভাবনা করেই কেনাকাটা করছেন। তবে ঈদের আগ মুহূর্তে কেনাবেচা আরও বাড়বে বলে আশা করছেন বিক্রেতারা।

এদিকে ক্রেতারা বলছেন, ঈদের আর বেশি দিন বাকি নেই। এখন থেকেই মার্কেটে পোশাকসহ সব কিছুর দাম বেড়ে গেছে। ঈদ সামনে এলে আরও দাম বাড়তে পারে, এমন আশঙ্কা থেকে অনেকেই আগেভাগে ঈদের কেনাকাটা সেরে ফেলছেন।

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি আবদুর রহিম জানান, এবারের ঈদুল ফিতরের সঙ্গে নতুন মাত্রা হিসেবে যোগ হয়েছে পহেলা বৈশাখ। আর এ দুটি উৎসবকে ঘিরে জমে উঠেছে নারায়ণগঞ্জের পোশাকের বেচাকেনা। শপিংমলগুলোর পাশাপাশি নগরীর ফুটপাতেও ক্রেতাদের ভিড় বেড়েছে। ক্রেতাদের উপস্থিতিতে জমজমাট হয়ে উঠেছে নারায়ণগঞ্জের ঈদবাজার। ঈদ ও পহেলা বৈশাখকে সামনে রেখে মাকের্টগুলোয় দেশি-বিদেশি নানা রঙের ও ডিজাইনের বাহারি পোশাক উঠেছে।  উৎসবকে কেন্দ্র করে প্রতিবছরই যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী নতুন পোশাক কেনে। প্রতিবারের মতো এবারও নারায়ণগঞ্জে উৎসবের অনেকটা আগে থেকেই চলছে কেনাকাটার ধুম। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শপিং মল ও বিপণিবিতানে বাড়ছে ভিড়।

ক্রেতাদের এমন ভিড়ে খুশি ব্যবসায়ীরাও। তবে এবারের ঈদকে কেন্দ্র করে রোজার শুরু থেকে ক্রেতাদের মার্কেটগুলোয় ভিড় করতে দেখা গেছে। বিক্রেতারা বলছেন, অন্যান্যবারের মতো এবারের ঈদেও তরুণীসহ নারীদের প্রধান আকর্ষণ নতুন কালেকশন। প্রতিদিন সকাল থেকে শহরের চাষাড়া, কালীর বাজার ও ডিআইটি এলাকার বিভিন্ন মার্কেটগুলোয় ভিড় করছেন ক্রেতারা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, করোনার কারণে গত দুই বছর তাদের লোকসান হয়েছে। তবে এবার রোজা শুরুর আগে থেকেই দোকানে ক্রেতার উপস্থিতি ভালো। প্রতিদিন বাড়ছে বেচাকেনা। নারায়ণগঞ্জ শহরের চাষাঢ়া এলাকার সমবায় মার্কেট, মার্ক টাওয়ার, বেইলি টাওয়ায়, সান্ত¡না, সায়াম প্লাজা, হক প্লাজাসহ আরও কয়েকটি মার্কেটের পোশাকের দোকানগুলোই এতদিন সবার পছন্দের পোশাকের সরবরাহ করে থাকত। তবে সম্প্রতি শহরে বেশ কিছু ব্র্যান্ডের শোরুম চালু হয়েছে। এসব ব্র্যান্ডের দোকানগুলো নারায়ণগঞ্জে হওয়ায় ক্রেতাদের আর এখন নিজেদের পছন্দের পোশাক কিনতে ঢাকায় ছুটতে হয় না। আড়ং, লারিভ, সেইলর, গ্রামীণ ইউনিক্লো, কান্ট্রিবয়, জেন্টেল পার্ক, র-নেশন, ইজি ফ্যাশন, সোলাস্তা, টপ টেন, বেল মন্টসহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের শোরুমগুলো এখন নারায়ণগঞ্জে আছে।

নানারকম ব্র্যান্ডের শোরুম ছাড়াও নগরীর কালীর বাজারে রয়েছে নারীদের রেডিমেড পোশাক ও থান কাপড়ের কয়েকটি বড় মার্কেট। এই মার্কেটগুলোয় একদিকে নারীদের রং-বেরঙের পোশাক বিক্রি হচ্ছে, অপরদিকে ঘর সাজানোর জন্য বিছানার নানা ডিজাইনের চাদর ও জানালার পর্দাও বিক্রি হচ্ছে।

গৃহিণী শিল্পী মাহবুবা এসেছেন বিছানার চাদর বানানোর জন্য। তিনি জানান, দিন যত যাবে তত ঝামেলা বাড়বে। তখন চাদরের জন্য কাপড় কেনা গেলেও দেখা গেছে, এগুলো বানাতে ঝামেলায় পড়তে হয়। তাই আগে কাজ সেরে নিচ্ছি। তিনি জানান, টেইলাররা অনেক জনের কাজ একসঙ্গে করতে গিয়ে কখনও ওলটপালটও করে ফেলে। তাই আগেভাগেই এই কাজগুলো সেরে নিচ্ছি।

এদিকে ক্রেতাদের সামলাতে ব্যাস্ত সময় পার করছেন দোকান মালিক ও কর্মচারীরা। নগরীর সমবায় মার্কেট, বেইলি টাওয়ার ও সান্ত¡না মার্কেটের বেশ কয়েকজন দোকানদারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত দুই বছরের চেয়ে এবারের বেচাকেনা অনেকটাই ভালো। বেইলি টাওয়ারে নারীদের নানা ধরনের পোশাকের তিনটি দোকানের মালিক গার্নেট শেয়ারবিজকে জানায়, রমজান শুরুর আগে থেকেই এবার ক্রেতারা কেনাকাটা শুরু করেছেন। আমরাও ক্রেতাদের চাহিদামতো পোশাক সরবরাহ করতে চেষ্টা করছি। সমবায় নিউমার্কেটের বাচ্চাদের পোশাকের দোকানি আলমাছ মিয়া জানান, আমাদের  ঈদের বিক্রি রোজার কয়েক দিন আগে থেকেই শুরু হয়েছে। গত দুই বছর করোনার কারণে আশানুরূপ বেচাকেনা হয়নি। আশা করছি এ বছর সেই ক্ষতিগুলো পুষিয়ে উঠতে পারব।

শহরের বড় বড় শপিংমলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে জমে উঠেছে ফুটপাতের বেচাকেনাও। ফুটপাতের ক্রেতা-বিক্রেতারা জানান, ফুটপাতের দোকানগুলোর জন্য হাজার হাজার টাকা ভাড়া দিতে হয় না। ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য নেই কোনো আলোর ঝলকানি। ফলে স্বল্প লাভে ফুটপাতের বিক্রেতারা ক্রেতাদের দরদামে পোশাক দিয়ে থাকেন, ক্রেতারাও স্বচ্ছন্দে নিয়ে থাকেন। ক্রেতা রাজীব হোসেন জানান, বড় দোকানগুলো থেকে আমার পক্ষে প্যান্ট কেনা সম্ভব নয়। এজন্য ছেলেকে এখানে নিয়ে এসেছি প্যান্ট কিনতে। ছেলের পছন্দমতো ৪৫০ টাকা দিয়ে জিন্স প্যান্ট কিনে দিলাম।

ফুটপাতের দোকানদার অহিদুল জানান, নিজেরাই ব্যবসা করি। এতে কর্মচারীর বেতন, আলোর ব্যবস্থাসহ নানা ধরনের খরচ হয় না। তাই স্বল্প লাভে বড় দোকানের তুলনায় কম দামে পোশাক বিক্রি করতে পারি।

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের নারায়ণগঞ্জ জেলার সহকারী পরিচালক মো. সেলিমুজ্জামান শেয়ার বিজকে জানান, সুযোগ বুঝে অতিরিক্ত দাম নেয়া যাবে না। যারা এমন করছেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। ভোক্তাস্বার্থ রক্ষায় নিয়মিত অভিযান চলমান রয়েছে।

চাঁদপুর প্রতিনিধি বেলায়েত সুমন জানান, চাঁদপুর শহরের মীর শপিং, ফসসাল শপিং কমপ্লেক্স, পূরবী মার্কেট ও রেলওয়ে হকার্স মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে ক্রেতার সংখ্যা বেড়েছে। তবে ফুটপাতে ঈদের কেনাকাটা তেমন চোখে পড়েনি।  বিভিন্ন মার্কেট ঘুরে জানা গেছে, অনেকেই পরিবারের সদস্যদের নিয়ে মার্কেটে এসেছেন। পরিবারের ছোট-বড় সবার পছন্দকে গুরুত্ব দিয়ে ঈদ কেনাকাটা করছেন তারা।

রেলওয়ে হকার্স মার্কেটের আল মদিনা কালেকশনের মো. খলিলুর রহমান জানান, গত বছরের তুলনায় এ বছর বিক্রি অনেক কম।

হাজীগঞ্জ উপজেলার পৌর হকার্স মার্কেট, পৌর বিপণিবিতান, হাজীগঞ্জ প্লাজা, বিজনেস পার্ক, সান্ত¡না সুপার মার্কেট, মসজিদ মার্কেট, রয়েল মার্কেট ও কাপড়িয়া পট্টির দোকানগুলোয় ঈদের কেনাকাটা জমে উঠেছে। কাপড়িয়া পট্টির সুপরিচিত হাজীগঞ্জ বস্ত্রালয় ও এমা ফ্যাশনে দাম ও মানের সামঞ্জস্য থাকায় ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড় লক্ষ করা গেছে। অন্যান্য দোকানগুলোয়ও ক্রেতাদের ভিড় লক্ষ করা গেছে, তবে তা তুলনামূলকভাবে কম।

হাজীগঞ্জ বস্ত্রালয়ের স্বত্বাধিকারী মিঠু সাহা শেয়ার বিজকে বলেন, পণ্যের দাম ও মানের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই বিক্রি করছি। দোকানে বেচাবিক্রি ভালো।

অপরদিকে রাস্তার পাশের দোকানগুলোয় তুলনামূলকভাবে দাম বেশি হওয়ার অজুহাতে অনেকেই কাপড় কিনতে ভিড় জমিয়েছেন পৌর হকার্স মার্কেটে। হাজীগঞ্জ বস্ত্রালয়ে সপরিবারে কাপড় কিনতে আসা ব্যবসায়ী ফরিদুল ইসলাম ও হাসান মিয়াজী বলেন, ‘পণ্যের দাম ও মানের সঙ্গে মিল রয়েছে। কেনাকাটা করে ভালোই লেগেছে এখানে। অন্তত ১০ হাজার টাকা সাশ্রয় হয়েছে।’

কচুয়া উপজেলার রহিমানগর বাজার, কচুয়া বাজার ও সাচার বাজারে এরই মধ্যে ঈদের কেনাকাটা করতে ভিড় করছেন ক্রেতারা। তবে গত বছরের তুলনায় বিক্রি অনেক কম বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। রহিমানগর বাজারে কাপড় কিনতে আসা ক্রেতা ইমান হোসেন জানান, ঈদের বাজার জমে উঠেছে। পণ্যের দাম সাধ্যের মধ্যে রয়েছে। এখানকার কাপড়ও গুণগত মানসম্পন্ন।

মতলব উপজেলার ছেংগারচর বাজার ও নতুন বাজার এলাকার বিপণিবিতান ও বিভিন্ন মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে, ক্রেতাদের বাড়তি ভিড়। তারা পছন্দের জামাকাপড় কিনতে এক দোকান থেকে অন্য দোকানে ঘুরে দেখছেন। ঈদে নতুন কী পোশাক এসেছে, তাও দেখতে এসেছেন অনেকে। ফুটপাতে কেনাকাটা করছেন নিম্নআয়ের মানুষ।

ঈদকে সমানে রেখে প্রতিটি শোরুম ও বিপণিবিতানে পোশাকের ব্যাপক সমারোহ দেখা গেছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ক্রেতাদের চাহিদার কথা মাথায় রেখে সব ধরনের কালেকশন তারা রেখেছেন। তবে গরমে সুতি কাপড়ের চাহিদা বেশি থাকায় সুতি কালেকশন বেশি রয়েছে। তবে দাম নিয়ে আপত্তির শেষ নেই ক্রেতাদের। বিশেষ করে নি¤œ ও মধ্যআয়ের মানুষরা ঈদবাজারে এসে দর কষাকষিতে হাঁপিয়ে উঠছেন। ছেংগারচর বাজারের এশিয়ান ফ্যাশনে ঈদের পোশাক কিনতে ব্যস্ত দেখা যায় এক তরুণীকে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তরুণী জানিয়েছেন, একটা নতুন ডিজাইনের টপস ও থ্রিপিস পছন্দ হয়েছে। কিন্তু দাম বেশি মনে হচ্ছে। তারপরও কিনতে হচ্ছে। কারণ ভালো লাগার পোশাক পরাই তো ঈদের আনন্দ। তবে ওই দোকানের মালিক মিন্টু মিয়া বলেন, বেশি দামে পোশাক কিনছি, তাই বেশি দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে।

রিকশাচালক আনোয়ার হোসেন ছেংগারচর বাজারে কাছে ফুটপাতে তার দুই ছেলের জন্য প্যান্ট ও শার্ট কিনছিলেন। এ সময় তার সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ‘শহরে মেলা রিকশা, আগের মতো কামাই নেই। তারপরও যা কামাই হয়, তাক দিয়্যা কোনো রকমে সংসার চলে। ঈদোত ছাওয়াল দুইটাকে কাপড় কিনি দিমু। দামের কারণে মনে হয় আজই কেনা হবার নায়। গতবার এক হাজার ২০০ টাকায় দুজনের কাপড় কিনচু। এবার তো দেড় হাজার টাকাতো কেনা হওছে না।’