জমে উঠেছে উত্তরাঞ্চলের দ্বিতীয় বৃহত্তম আমের হাট বানেশ্বর

মেহেদী হাসান, রাজশাহী: মধুমাস জ্যৈষ্ঠের শেষে এসে জমে উঠেছে উত্তরাঞ্চলের অর্থনীতি। হাটবাজার এবং গ্রাম ও শহরের মহল্লায় মধুফল বিশেষ করে আমের ছড়াছড়ি। গোলাপি আবির ছড়িয়ে ক্ষণিকের অতিথি হয়ে আসা রসে টইটুম্বর লিচু বিদায়ের পথে থাকলেও রসালো-শাঁসালো স্বাদে-গন্ধে অতুলনীয় ফলের রাজা আম এখন সর্বত্র। জমে উঠেছে আমবাণিজ্য। ক্রেতা-বিক্রেতার সমাগমে জমে উঠেছে দেশের বৃহত্তম আমের হাট রাজশাহীর বানেশ্বর। উত্তরাঞ্চলের দ্বিতীয় বৃহত্তম বানেশ্বরের এই আমের বাজার। এই বাজার ফজলি আমের জন্য বিখ্যাত হলেও এখন দেখা নেই ফজলি আমের। বেচাকেনা হচ্ছে গোপালভোগ, হিমসাগর, ল্যাংড়া, লখনাসহ বিভিন্ন গুটি জাতের আম। মানভেদে এসব আম বেশ ভালো দামে বিক্রি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন খুচরা ও পাইকারি বিক্রেতারা।

জানা গেছে, মঙ্গলবার রাজশাহীর সবচেয়ে বড় আমের বাজার বানেশ্বরে গোপালভোগ আম দুই হাজার ২০০ থেকে দুই হাজার ৪০০ টাকা মণ বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া হিমসাগর বা ক্ষীরশাপাতি এক হাজার ৬০০ থেকে এক হাজার ৮০০, লক্ষণভোগ বা লখনা ৮০০ থেকে ৯০০, রানি পছন্দ ৯০০ থেকে এক হাজার ৪০০ ও গুটি জাতের আম ৯০০ থেকে এক হাজার ৫০০ টাকায় আকারভেদে মণপ্রতি কেনাবেচা হচ্ছে। ফেসবুকসহ বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে বিক্রি হচ্ছে আরও বেশি। এদিকে বাড়তি দাম নিয়ে অস্বস্তিতে আছেন সাধারণ ক্রেতা ও ভোক্তারা। মুনাফায় আছেন মধ্যস্বত্বভোগী, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা।

আম ব্যবসায়ী সাহেব আলী বলেন, আমের দাম ভালোই আছে, কিন্তু আঁটি জাতের আমের চাহিদা কমে গেছে। আম পাড়ার সময় এক হাজার ৫০০ টাকা মণ গুটি আম বিক্রি করেছি। এখন মণে ২০০ টাকা কম। প্রতিবছর প্রাণ কোম্পানি আম কিনত, এবারও কিনেছে। আমের ফলন এবার কম হয়েছে, আর সাইজও ছোট।

আমচাষি জাহিদুল ইসলাম জানান, আগের বছরের তুলনায় আমের দাম ভালোই পাচ্ছি। আগেই ভেবেছিলাম আমের দাম হবে, কারণ করোনার সময় আমার অনেক লোকসান হয়েছে। আম কেনার কেউ ছিল না, আম নিয়ে বসে থাকতে হয়েছে। আর এবার সম্পূর্ণ ভিন্ন পরিস্থিতি। বাজারে আমের ক্রেতাও বেশি, চাহিদাও বেশ।

তিনি আরও বলেন, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গার বড় পাইকাররা আসছেন। এখন বিক্রির পরিমাণ তুলানামূলকহারে একটু কম হলেও আগামী সপ্তাহের মধ্যে জমজমাট হয়ে উঠবে। এই সপ্তাহের মধ্যেই বাজারে ল্যাংড়া আমের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে। গোপাল আম এক হাজার ৮০০ থেকে দুই হাজার ৪০০ টাকা মণ হিসেবে কয়েক মণ বিক্রি করেছি।

বানেশ্বর আম ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, চাঁপাইয়ের কানসাটের পরেই বানেশ্বর বাজার। প্রতিবছর কয়েক কোটি টাকার আম বেচাকেনা হয় এখানে। করোনার কারণে দু-বছর বাজার সেভাবে জমেনি। বাজারে আমচাষি ও ব্যবসায়ীরা এবার বেশ উৎফুল্ল। ল্যাংড়া আসতে শুরু করেছে। দাম গতবারের তুলনায় এবার মণে ৫০০ টাকা বেশি।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোজদার হোসেন বলেন, বাজারে সর্বপ্রথম গুটি জাতের আম আগে আসে। পর্যায়ক্রমে গোপালভোগ, ল্যাংড়া, ফজলি ও আশ্বিনা আম বাজারে আসে। এখন বাজারে আছে ক্ষীরশাপাতি, হিমসাগর ও লখনা। আমরা সব তথ্য সংগ্রহ করছি। বানেশ্বর আমের হাট উপজেলা কৃষি বিভাগের তথ্যের অন্তর্ভুক্ত। বিস্তারিত সেখানেই পাবেন।

উল্লেখ্য, রাজশাহী কৃষি অঞ্চলে এবার সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকার আম বাণিজ্যের সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছে রাজশাহী বিভাগীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। আমের উৎপাদন নিয়ে শঙ্কা থাকলেও আমের দাম গতবারের তুলনায় বেশ ভালো হওয়ায় এ সম্ভাবনা দেখছেন কৃষি বিশেষজ্ঞরা।