নিজস্ব প্রতিবেদক: জয়পুরহাট সদর উপজেলার পুরানাপৈল রেলগেটে ট্রেনের ধাক্কায় একটি বাসের ১২ যাত্রী নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও তিনজন। আহতদের বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গতকাল সকাল ৬টা ৫৫ মিনিটে পার্বতীপুর থেকে ছেড়ে আসা রাজশাহীগামী উত্তরা এক্সপ্রেস ট্রেনের সঙ্গে বাসটির সংঘর্ষ হয়। জয়পুরহাট ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক খন্দকার ছানাউল হক এসব তথ্য জানান।
প্রত্যক্ষদর্শী, পুলিশ ও জয়পুরহাট ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা গেছে, সদর উপজেলার পুরানাপৈল রেলগেটে সকালে রাজশাহীগামী উত্তরা এক্সপ্রেস ট্রেন বাসটিকে ধাক্কা দেয়। বাসটিকে দুমড়ে-মুচড়ে ট্রেনটি রেললাইনের ওপর দিয়ে প্রায় ৫০০ মিটার দূরে নিয়ে যায়। এ সময় ঘটনাস্থলেই ১০ জন নিহত হন। আহত হন পাঁচজন। আহতদের প্রথমে জয়পুরহাট জেলা আধুনিক হাসপাতালে নেয়ার পর বগুড়ার শজিমেক হাসপাতালে স্থানান্তর করা হলে আরও দুজনের মৃত্যু হয়। বর্তমানে তিনজন শজিমেক হাসপাতালে ভর্তি আছেন।
নিহতদের মধ্যে দুজনের পরিচয় জানা গেছে। তারা হলেন পাঁচবিবি উপজেলার আটুল গ্রামের আলতাফ হোসেনের ছেলে সরোয়ার হোসেন (৩৫) ও তার ছোট ভাই আরিফুজ্জামান রাব্বি (২৫)।
জেলা প্রশাসক মো. শরীফুল ইসলাম জানান, পুরানাপৈল রেলগেটের গেটম্যান তার দায়িত্ব পালন না করায় এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। নিহতদের মরদেহ মর্গে পাঠানো হয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের দাফনসহ সার্বিক খরচ বহন করা হবে।
এদিকে দুর্ঘটনার পর থেকে পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে সারা দেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ ছিল সাত ঘণ্টা। রেল যোগাযোগ স্বাভাবিক করার জন্য উদ্ধারকারী ট্রেন ঘটনাস্থলে পৌঁছার পর রেল কর্তৃপক্ষ দুর্ঘটনাকবলিত বাস ও ট্রেন অপসারণের উদ্ধারকাজ চালায়। জেলা প্রশাসক ছাড়াও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সালাম কবীর, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিল্টন চন্দ্র রায় এবং জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আরিফুর রহমান।
উদ্ধারকাজ শেষ করার পরে দুপুর সোয়া ২টার দিকে চিলাহাটি-রাজশাহীগামী আন্তঃনগর বরেন্দ্র এক্সপ্রেস ট্রেনটি রাজশাহী অভিমুখে ছেড়ে যায়। এছাড়া বাকি সাতটি আন্তঃনগর ট্রেন পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন রুটে চলাচল শুরু করে।
পাকশী বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা (ডিটিও) নাসির উদ্দিন জানান, দুর্ঘটনার কারণে পার্বতীপুর-রাজশাহীগামী ৩২ নম্বর উত্তরা এক্সপ্রেস ট্রেনের ইঞ্জিনটি বিকল হয়ে গিয়েছিল। প্রধান লাইনে দুর্ঘটনা ঘটার কারণে এ রুটের সঙ্গে সারা দেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ ছিল। ঈশ্বরদী লোকোশেড থেকে রিলিফ ট্রেনটি বেলা ১১টা ৫৫ মিনিটে ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধারকাজ শুরু করে।
পাকশী রেলওয়ে বিভাগীয় ব্যবস্থাপক (ডিআরএম) শাহীদূল ইসলাম জানান, রিলিফ ট্রেনের উদ্ধারকর্মীরা দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছে ৪৫ মিনিটে দুর্ঘটনাকবলিত ইঞ্জিনটি উদ্ধার করে। রেললাইন সচল করে বেলা সোয়া ২টা থেকে ট্রেনগুলো একেক করে গন্তব্য স্থানের দিকে চলাচল শুরু করে। দুর্ঘটনার পর পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে ও পাকশী বিভাগীয় দপ্তরের নিজ নিজ দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিরলস পরিশ্রমের ফলে অল্প সময়ে রেললাইন ট্রেন চলাচলের উপযোগী করতে সক্ষম হয়েছি।
দুর্ঘটনায় সারা দেশের সঙ্গে রেল যোগাযোগ বন্ধ থাকায় ঢাকা-খুলনা ও রাজশাহীর আটটি যাত্রীবাহী আন্তঃনগর ট্রেনের ভ্রমণপ্রিয় যাত্রীদের কিছুটা দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। যেটা অনাকাক্সিক্ষত!