অর্থসহায়তা নিয়ে বিভক্তি
জলবায়ুর পরিবর্তে ইউক্রেন যুদ্ধ ও ট্রাম্পকে প্রাধান্য
শেয়ার বিজ ডেস্ক: জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতির শিকার দেশগুলোকে কারা অর্থসহায়তা দেবে তা নিয়ে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন জি২০ জোটের নেতারা। ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরোয় জোটের সম্মেলনে এ বিভক্তির কারণে কপ২৯ সম্মেলনে জলবায়ুর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় জাতিসংঘের আহ্বান ব্যর্থ হয়েছে এবং আলোচনায় অচলাবস্থা রয়ে গেছে। খবর: এবিসি নিউজ।
জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় জাতিসংঘের আলোচনার অচলাবস্থা ভাঙতে পারলেন না শিল্পোন্নত ও বিকাশমান অর্থনীতির দেশগুলোর জোট জি২০ নেতারা। ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরো শহরে চলা জোটের শীর্ষ সম্মেলনে জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে সাফল্য দেখাতে ব্যর্থ হওয়া ছাড়াও ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধেও কোনো ঐকমত্যে আসতে পারেননি তারা। সম্মেলনে বিশ্বনেতারা তাদের আলোচনায় জলবায়ু বিষয়ে প্রাধান্য না দিয়ে বরং ইউক্রেন যুদ্ধ এবং হোয়াইট হাউজে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ফিরে আসা নিয়ে আলাপের ওপর গুরুত্ব দেন। বিশ্বের মোট অর্থনীতির ৮৫ শতাংশ অবদান রাখে জি২০ সদস্যভুক্ত দেশগুলো। তাদের শীর্ষ সম্মেলনের আলোচনায় নতুন ট্রাম্প প্রশাসন সম্পর্কে অনিশ্চয়তা, রাশিয়া ইউক্রেন সংঘাত এবং মধ্যপ্রাচ্যের চলমান সংকটের ঘটনা গুরুত্ব পেয়েছে।
সম্মেলনকে সামনে রেখে জাতিসংঘ বিশ্বের ধনী অর্থনীতির এ দেশগুলোর নেতাদের প্রতি আজারবাইজানে থমকে যাওয়া জলবায়ু আলোচনায় গতি ফেরানোর আহ্বান জানিয়েছিল। সেই সঙ্গে বৈশ্বিক উষ্ণায়নজনিত ক্ষতি মোকাবেলায় উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রচেষ্টায় অর্থায়ন বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছিল বিশ্ব সংস্থা। তবে জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতির শিকার দেশগুলোকে কারা অর্থ সহায়তা দেবে, তা নিয়ে আলোচনায় বিভক্ত হয়ে পড়েন জি২০ নেতারা। তবু ধনী দেশগুলো জলবায়ু অর্থায়নে অবদান রাখার জন্য চীন এবং মধ্যপ্রাচ্যের তেল উৎপাদনকারী উন্নয়নশীল ধনী দেশগুলোর প্রতি চাপ দিয়েছে। ইউরোপিয়ান দেশগুলোর নেতারাও একই পথে হাঁটছেন। অবশ্য পরে এ বিষয়ে তারা কোনো প্রতিশ্রুতি দেননি। তারা শুধু এটুকু বলেছেন, এ সহায়তা সব উৎস থেকেই আসতে হবে। বৈশ্বিক উষ্ণতার জন্য দায়ী মোট কার্বন নির্গমনের তিন-চতুর্থাংশ আসে জি২০–ভুক্ত দেশগুলো থেকে। তাই জলবায়ু অর্থায়ন বিষয়ে তাদের মতের দিকে তাকিয়ে ছিল আজারবাইজানের বাকুতে চলমান জলবায়ু সম্মেলনে অংশ নেয়া উন্নয়নশীল দেশগুলো।
ইউক্রেন যুদ্ধ আরো জোরালো হওয়ার ঝুঁকি ও দ্বিতীয় দফায় ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় তার অ্যামেরিকা ফার্স্ট নীতির ভবিষ্যৎ এ দুই বিষয়ই মূলত জি২০ নেতাদের আলোচনায় প্রাধান্য পায়। তবে ইউক্রেন নিয়ে আলোচনায় তাদের মধ্যে মতপার্থক্য দেখা দেয়। ইউক্রেনের সার্বভৌমত্বকে সমর্থন করতে জি-টোয়েন্টি নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তিন বলেন, ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতাকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করে আমেরিকা। সম্মেলনের প্রথম দিনের বক্তব্যে হামাসের প্রতিও চাপ বাড়ানোর আহ্বান জানান তিনি। বিদায়ী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের পাস করা যুগান্তকারী জলবায়ু আইন বাতিল করার পরিকল্পনা রয়েছে নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের। ‘প্যারিস ক্লাইমেট এগ্রিমেন্ট’ থেকেও তিনি বের হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানা গেছে। বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশের সহযোগিতা ছাড়া জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় কতটা অর্থ সংগ্রহ করা সম্ভব তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে।
বিশ্বব্যাপী ক্ষুধার সঙ্গে লড়াইয়ের জন্য একটি বৈশ্বিক জোট গঠনের উদ্যোগ নিয়েছেন সম্মেলনের আয়োজক দেশ ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা ডা সিলভা। তার এই উদ্যোগে ৮২টি দেশ যুক্ত হয়েছে। এর আগে রিও ডি জেনিরো শহরের মডার্ন আর্ট মিউজিয়ামে বিশ্ব নেতাদের স্বাগত জানান ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট ইনাসিও লুলা ডি সিলভা। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের বক্তব্যে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রতি গুরুত্ব দেন তিনি। এদিকে, গাজায় ইযরায়েলের হামলা বন্ধের দাবিতে জি২০ সম্মেলনের কয়েক মাইল দূরে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে বামপন্থী বিভিন্ন সংগঠন ও সামাজিক মাধ্যম নির্ভর বিভিন্ন মানবাধিকার অধিকার কর্মীরা। এক বিবৃতিতে জি২০ নেতারা ফিলিস্তিনের গাজায় ও লেবাননে ব্যাপক পরিসরে যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়েছেন।