শেয়ার বিজ ডেস্ক: জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় জাতিসংঘের প্রকাশিত বৈজ্ঞানিক প্রতিবেদন বদলাতে জোর লবিং চালিয়েছিল বেশ কয়েকটি দেশ। ওই দেশগুলোর মধ্যে যেমন রয়েছে সৌদি আরব, জাপান ও অস্ট্রেলিয়ার মতো ধনী দেশ, তেমনি রয়েছে ভারতের জ্বালানি গবেষণা-সংক্রান্ত কেন্দ্রীয় সংস্থার নামও। তারা সবাই নিজ নিজ স্বার্থরক্ষায় জাতিসংঘের জলবায়ু প্রতিবেদনটি বদলানোর সুপারিশ করেছিল। এ-সংক্রান্ত বিপুল গোপন নথিপত্র হাতে পেয়েছে বিবিসি।
ফাঁস হওয়া নথিতে দেখা গেছে, দেশগুলো কীভাবে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈজ্ঞানিক প্রতিবেদন বদল করার চেষ্টা করছে। দেশগুলো জাতিসংঘকে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার থেকে সরে আসার প্রয়োজনীয়তাকে খর্ব করে দেখানোর অনুরোধ করছে। এছাড়া দেখা গেছে, কয়েকটি ধনী দেশ নবায়নযোগ্য প্রযুক্তিতে যেতে দরিদ্র দেশগুলোর আরও বেশি অর্থ দেয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। এসব লবিং আসন্ন জলবায়ু সম্মেলন কপ২৬-এর সফলতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
ফাঁস হওয়া নথিতে দেখা যায়, দেশগুলো জাতিসংঘের সুপারিশ বদলানোর চেষ্টা করছে, যখন মাত্র কয়েক দিনের মধ্যে তাদের জলবায়ু পরিবর্তনের গতি কমাতে এবং উষ্ণতা বৃদ্ধি এক দশমিক পাঁচ ডিগ্রির নিচে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিশ্রুতি দিতে হবে।
বিবিসি জানিয়েছে, জাতিসংঘের কাছে বিভিন্ন দেশের সরকার, প্রতিষ্ঠান, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বা বিজ্ঞানীদের পাঠানো ৩২ হাজারের বেশি প্রস্তাবনার নথি পৌঁছেছে।
জাতিসংঘ গঠিত ইন্টারগভার্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ (আইপিসিসি) প্রতি ছয় থেকে সাত বছরে পর্যালোচনা প্রতিবেদন হাজির করে। জলবায়ু পরিবর্তনের বিজ্ঞান মূল্যায়নে প্যানেলটি গঠন করা হয়েছে।
জীবাশ্ম জ্বালানি: ফাঁস হওয়া তথ্যে দেখা যায়, খসড়া প্রতিবেদনে যত দ্রুত বিশ্বজুড়ে জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার কমানোর সুপারিশ করা হয়েছে, তত দ্রুত এটি করার দরকার নেই বলে আপত্তি জানিয়েছে বেশ কিছু দেশ ও সংস্থা। সৌদি তেল মন্ত্রণালয়ের এক উপদেষ্টা দাবি করেছেন, ‘তাৎক্ষণিকভাবে ও ত্বরিৎ প্রশমন কার্যক্রম প্রয়োজন’-এর মতো বাক্যাংশগুলো প্রতিবেদন থেকে বাদ দেয়া উচিত।
কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করা আবশ্যকÑপ্রতিবেদনের এমন মন্তব্য প্রত্যাখ্যান করেছেন অস্ট্রেলীয় সরকারের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা। অথচ কয়লার ব্যবহার বন্ধ করা কপ২৬ সম্মেলনের বর্ণিত প্রধান উদ্দেশ্যগুলোর মধ্যে অন্যতম।
ভারত সরকারের সঙ্গে সম্পর্কিত সেন্ট্রাল ইনস্টিটিউট অব মাইনিং অ্যান্ড ফুয়েল রিসার্চের এক জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী সতর্ক করে বলেছেন, কয়লা আরও কয়েক দশক জ্বালানি উৎপাদনের প্রধান উপাদান হিসেবে থাকতে পারে। কারণ হিসেবে তিনি সাশ্রয়ী বিদ্যুৎ সরবরাহের ‘মারাত্মক চ্যালেঞ্জ’-এর কথা উল্লেখ করেছেন।
সৌদি আরব, চীন, অস্ট্রেলিয়া ও জাপানের মতো বৃহত্তম জীবাশ্ম জ্বালানি উৎপাদনকারী বা ব্যবহারকারী দেশগুলোর পাশাপাশি তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোর জোট ওপেক কার্বন ধারণ ও সংরক্ষণের (সিসিএস) পক্ষে মত দিয়েছে। তাদের দাবি, এ সিসিএস
প্রযুক্তি বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ কিছু শিল্প খাত থেকে জীবাশ্ম জ্বালানি-সম্পর্কিত গ্যাস নির্গমন নাটকীয়ভাবে কমিয়ে দিতে সক্ষম।