নিজস্ব প্রতিবেদক :জলবায়ু বাজেট বাস্তবায়ন করে দেশের ২৫ মন্ত্রণালয় ও বিভাগ। তাদের জলবায়ু কার্যক্রমের মধ্যে কোনো সমন্বয় নেই। বাজেটে জলবায়ু কার্যক্রমের জন্য বিশেষভাবে বরাদ্দ রাখা হয়। তবে এ বরাদ্দ সমন্বিতভাবে বাস্তবায়ন না করার ফলে জলবায়ু বাজেট সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয় না। তাই জাতীয় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে জলবায়ু বাজেট সংস্কার করে সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মাধ্যমে সমন্বয়ের করে এ বাজেট বাস্তবায়নের তাগিদ দিয়েছেন জলবায়ু বিশেষজ্ঞ ও খাত বিশ্লেষকরা। পাশাপাশি তারা মনে করছেন, এই বাজেট বর্তমান চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে সংস্কার পরিচালনার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেয়া উচিত। আর জলবায়ু কার্যক্রমের জন্য যে পরিমাণ অর্থায়ন দরকার, তার তুলনায় অনেক কম পরিমাণ বিনিয়োগ হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে জলবায়ু কার্যক্রমে বরাদ্দ বাড়ানোর তাগিদ দেয়া হয়েছে।
রাজধানীর ব্র্যাক ইন সেন্টারে গতকাল আয়োজিত ‘জলবায়ু বাজেটের পর্যালোচনা ও বাংলাদেশে সরকারি জলবায়ু অর্থায়ন ব্যবস্থাপনা’ শীর্ষক সেমিনারে এসব কথা বলেন বক্তারা। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা ও নাগরিক সংগঠন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) এ সেমিনারের আয়োজন করে। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন। এতে সভাপতিত্ব করেন সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনে ফাহমিদা খাতুন বলেন, জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ মানুষের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচির (এসএসএনপি) বরাদ্দ বাড়াতে হবে। জলবায়ু বাজেট প্রক্রিয়া প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে জলবায়ু বাজেটকে জাতীয় বাজেট প্রক্রিয়ার সঙ্গে আরও ভালোভাবে সংযুক্ত করতে হবে। পাশাপাশি জলবায়ু-সম্পর্কিত তহবিল ব্যয়ের সামর্থ্য আরও বাড়াতে জনশক্তির সক্ষমতা অপরিহার্য। তিনি আরও বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড (সিসিটিএফ) শক্তিশালী করতে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। চলতি বছরের বাজেটে সিসিটিএফের আকার এক হাজার ৪৩৫ কোটি ৯০ লাখ টাকার বেশি, যদিও অষ্টম বার্ষিক পরিকল্পনায় ২০২০ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে ঘোষিত লক্ষ্যমাত্রা আট হাজার কোটি টাকা থেকে পিছিয়ে আছে।
সেমিনারে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন বাংলাদেশের অস্তিত্বের লড়াই। এর প্রতিফলন আমরা আমাদের প্রতিটি নীতিতে দেখতে পাই। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নির্ভর করছে জলবায়ুর পরিবর্তনকে কীভাবে মোকাবিলা করব তার ওপর। তিনি বলেন, এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বাংলাদেশ সঠিক পথে রয়েছে। কিন্তু জলবায়ুর ক্ষতি যদি জিডিপির ৯ শতাংশ হয়, আর জিডিপির প্রবৃদ্ধি যদি আট শতাংশও হয়, তাহলে আমরা ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধিতে চলে যাব। এ বিষয়টি আমাদের মাথায় রাখতে হবে। এর সঙ্গে সব মন্ত্রণালয়কে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। তিনি আরও বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে ২০৫০ সালের মধ্যে আমাদের মোট দেশজ উৎপাদনের ৯ শতাংশ ক্ষতি হবে বলে গবেষণায় উঠে এসেছে। পাশাপাশি এসডিজির ১৩তম অভীষ্টে জলবায়ু কার্যক্রমের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। সুতরাং এসব বিষয় আমাদের মাথায় রেখে কাজ করতে হবে। এজন্য সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি উন্নয়ন সহযোগীদের এগিয়ে আসতে হবে।
সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সংসদ সদস্য এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য তানভীর শাকিল জয় বলেন, সরকার প্রতি বছর জলবায়ু বাজেট করে। আর এই বাজেটের বেশিরভাগ সময় বাস্তবায়ন করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। কিন্তু আমি বিশেষ করে আমার নির্বাচনী এলাকায় এর কোনো কার্যক্রম দেখি না। তিনি আরও বলেন, আমাদের কী পরিমাণ বরাদ্দ প্রয়োজন আর কী পরিমাণ বরাদ্দ পাচ্ছি, এর মধ্যে একটা পার্থক্য রয়েছে। আবার বেশি বরাদ্দ পেয়েও লাভ নেই যদি না আমরা সে দক্ষতার সঙ্গে সেগুলো ব্যবহার নিশ্চিত করতে না পারি। সুতরাং একদিকে যেমন আমাদের বরাদ্দের দরকার আছে, অন্যদিকে দক্ষতা ও সক্ষমতারও দরকার রয়েছে।
সেমিনারে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি, জলবায়ু-সম্পর্কিত বিভিন্ন আন্তর্জাতিক এনজিও, বিভিন্ন দেশের দূতাবাস, উন্নয়ন কর্মী ও জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা আলোচনায় অংশ নেন।