শাহীন রহমান, পাবনা: জলবায়ু পরিবর্তন রোধ ও ক্ষতিকর কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাসের আধিক্য হ্রাসের লক্ষ্যে পাবনা জেলার ৯ উপজেলায় ব্যাপকভাবে ফলদ, বনজ ও ঔষধি বৃক্ষের বাগান গড়ে তোলা হয়েছে। ফলে একদিকে কৃষকরা লাভবান হয়েছেন, অন্যদিকে জলবায়ুর বিরূপ প্রতিক্রিয়া ও যান্ত্রিকভাবে নির্গত কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাস শোষণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। এ ভূমিকার কারণে ঢাকায় অনুষ্ঠিত ২০১৬ সালের জাতীয় ফল মেলায় পাবনা জেলা দেশের মধ্যে প্রথম হয়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অনাবৃষ্টি, অতিবৃষ্টিসহ বিভিন্ন প্রতিকূলতার ফলে কৃষকরা ফসল আবাদে লোকসান দিচ্ছিলেন। এ থেকে পরিত্রাণের জন্য বৃক্ষ রোপণের ওপর জোর দেয় সরকার। এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) সহায়তায় হাতে নেওয়া হয় শস্য বহুমুখীকরণ প্রকল্প। এ প্রকল্পের মাধ্যমে বিভিন্ন শস্য উৎপাদনের পাশাপাশি বৃক্ষরোপণ শুরু করা হয়। জেলার কৃষক ছাড়াও কৃষাণীদের উদ্বুদ্ধ ও প্রশিক্ষণ দিয়ে বাড়ির আঙিনাতেও করা হয় বিভিন্ন প্রজাতির বৃক্ষরোপণ।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য মতে, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে জেলার নয় উপজেলায় সরকারি সহায়তায় ৪ হাজার ২৪০ হেক্টর জমিতে ১৪ হাজার ৬৪টি, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৪ হাজার ৭৫০ হেক্টরে ১৫ হাজার ৫৩৬টি, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৪ হাজার ৬৭০ হেক্টরে ১৬ হাজার ২৩টি, ২০১৬-১৭ বছরে ৬ হাজার ৭৭ হেক্টরে ১৯ হাজার ১০৫টি বৃক্ষরোপণ করা হয়েছে।
এছাড়া কৃষক পর্যায়ে উদ্বুদ্ধকরণের মাধ্যমে ২০১৩-১৪ বছরে ৪ লাখ ২৬৭টি, ২০১৪-১৫ বছরে ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৬৪৩টি, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৩ লাখ ৯০ হাজার ৭৯৩টি এবং ২০১৬-১৭ বছরে ৪ লাখ ৩৪ হাজার ৮৬টি ফলদ, বনজ ও ঔষধি গাছ রোপণ করা হয়েছে। সরকারের রাজস্ব খাতে পাবনা জেলার চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া ও ফরিদপুর উপজেলায় ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি কল্পে আধুনিক কলাকৌশল হস্তান্তর শীর্ষক কর্মসূচির আওতায় ৩৭ হাজার ৩৫৯টি চারা রোপণ করা হয়।
পাবনা টেবুনিয়া হর্টিকালচার সেন্টারের উপপরিচালক আজহার আলী জানান, চলমান জলবায়ু পরিবর্তন ও গ্রিন হাউজ প্রতিকূলতা প্রতিরোধের জন্য কৃষক-কৃষাণীদের উদ্বুদ্ধ করে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে জেলায় ১৯ লক্ষাধিক টাকার আম, পেয়ারা, লিচুসহ বিভিন্ন প্রজাতির বৃক্ষের চারা কলম বিক্রি করা হয়েছে। ভিটামিন-সির অভাবজনিত রোগ প্রতিরোধের জন্য বাণিজ্যিকভাবে মালটা ও বারোমাসি লেবুর বাগান গড়ে তোলা হয়েছে। দেশি নারকেলে মড়ক লাগার কারণে সরকারিভাবে ভিয়েতনাম থেকে আমদানিকৃত ১১ লাখ টাকা মূল্যের ২ হাজার ২০০টি নারকেলের চারা বিক্রি ও রোপণ করা হয়েছে। এ অর্থ সরকারের রাজস্ব খাতে জমা দেওয়া হয়েছে।
পাবনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক বিভূতি ভূষণ সরকার জানান, সবার সহযোগিতা ও সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা প্রথম হয়েছি। এর মাধ্যমে বনায়ন কাজে পাবনা জেলা আরও একধাপ এগিয়ে গেল। এ অর্জন শুধু কৃষি বিভাগের নয়, পাবনাবাসীর অর্জন।