একসময় দেশের সবচেয়ে বাসযোগ্য শহর ছিল চট্টগ্রাম। কিন্তু মাত্র ২৫-৩০ বছরের ব্যবধানে এই নগরী পরিচিত হয়েছে জলাবদ্ধতার নগরী হিসেবে। এই জলাবদ্ধতা নিরসনে হাজার হাজার কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হলেও বাস্তবে তা থেকে নগরবাসী কোনো সুফলই পায়নি। উল্টো নগরীর জলাবদ্ধতা আরও বেড়েছে। এক্ষেত্রে নগরে দায়িত্বপালনকারী সংস্থাগুলো একে অন্যের ওপর জলাবদ্ধতার দায় চাপাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে সংস্থাগুলোর কার্যক্রমে সমন্বয় সাধন করা আবশ্যক।
দৈনিক শেয়ার বিজে গতকাল ‘জলাবদ্ধতা নিরসনে আবারও সিডিএর ওপর দায় চাপালেন চসিক মেয়র’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনের তথ্যমতে, মেয়রের ভাষ্য হচ্ছে, নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনের বিষয়ে যে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে, সেটি দেখভালের দায়িত্ব চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (চউক)। কাজেই নগরীর জলাবদ্ধতার দায়ভার চউককেই নিতে হবে। তার এই বক্তব্যে চউকের সঙ্গে সিটি করপোরেশনের কার্যক্রমের সমন্বয়হীনতার চিত্র ফুটে উঠেছে। সংস্থাগুলোর কাজে যদি সমন্বয় না থাকে, তাহলে কোনো সমস্যায় সমাধান করা সম্ভব নয়।
দেশের বড় শহরগুলোয় পয়োনিষ্কাশন ও পানি সরবরাহের দায়িত্ব পালন করে ওয়াসা। এটি সাধারণত স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ একটি প্রতিষ্ঠান। তবে ২০২১ সালে ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে পয়োনিষ্কাশনের দায় সিটি করপোরেশনের হাতে ন্যস্ত করা হয় কাজের সমন্বয়ের সুবিধার্থে। কিন্তু তা সত্ত্বেও চট্টগ্রামে সমস্যার সমাধান হয়নি।
মূলত রাজধানীর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) আদলে দেশের বড় শহরগুলোর উন্নয়নের জন্য পৃথক কর্তৃপক্ষ গঠন করা হয়েছে। ঢাকার বাইরে খুলনা, রাজশাহী ও গাজীপুরে এ ধরনের কর্তৃপক্ষ আছে। ঢাকায় রাজউকের সঙ্গে সিটি করপোরেশনের কার্যক্রমের তেমন সংঘাত লক্ষ করা যায় না। কিন্তু একই আদলে গড়ে ওঠা অন্যান্য নগর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সেখানকার সিটি করপোরেশনগুলোর দ্বন্দ্ব পরিলক্ষিত হচ্ছে। ওয়াসা ও সিটি করপোরেশন একই মন্ত্রলাণয়ের অধীনস্থ হলেও উন্নয়ন কর্তৃপক্ষগুলো গৃহায়ন ও গণপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের অধীন। ফলে ভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রতিষ্ঠান হওয়ায় তাদের কার্যক্রমের মধ্যে সমন্বয়ের ঘাটতি রয়েছে। এর ফলে নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে জটিলতা দেখা দিচ্ছে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি রেষারেষি পরিলক্ষিত হয় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে। সেখানে চউক প্রতিষ্ঠার পর থেকেই সিটি করপোরেশনের সঙ্গে এক ধরনের প্রচ্ছন্ন দ্বন্দ্ব পরিলক্ষিত হয়। দুই সংস্থার রেষারেষির ফলে চরমভাবে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন চট্টগ্রাম নগরবাসী। এক্ষেত্রে জলাবদ্ধতা নিরসনে সিটি করপোরেশন, ওয়াসা ও চউকের ড্রেন ও খালগুলোর মধ্যে আন্তঃসংযোগ ও আন্তঃসমন্বয় সাধন করা জরুরি। অন্যথায় হাজার হাজার কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন করে কোনো ফল হবে না। উল্টো একাধিক সংস্থার খোঁড়াখুঁড়ির কারণে জনদুর্ভোগ বাড়তেই থাকবে। কাজেই সংস্থাগুলোর কার্যক্রমের মধ্যে সমন্বয়সাধনের উদ্যোগ নেয়া জরুরি। প্রয়োজনে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়কে এ ব্যাপারে উদ্যোগী হতে হবে। সংশ্লিষ্টরা এ ব্যাপারে তৎপর হবেন বলেই আমাদের বিশ্বাস।