পুঁজিবাজারে স্বল্প মূলধনি অনেক কোম্পানি তালিকাভুক্ত থাকে। কিন্তু সবগুলোই দুর্বল কোম্পানি নয়। যেসব কোম্পানি উৎপাদনে বা কার্যক্রম নেই, দীর্ঘদিন লভ্যাংশ দিচ্ছে নাÑএসব শেয়ারকে জাঙ্ক শেয়ার বলা হয়। বাজার যখন বাড়তে থাকে, তখন কিছু ক্ষণস্থায়ী বিনিয়োগকারী বাজারে প্রবেশ করে। এরা স্বল্প সময়ে মুনাফা তুলে বাজার থেকে বেরিয়ে যেতে চায়। কিন্তু সবসময় তা সম্ভব হয় না। জাঙ্ক শেয়ার থেকে যেমন দ্রুত মুনাফা করা যায়, তেমনি একবার লোকসানে পড়লে তা কাটিয়ে ওঠা অসম্ভব হয়ে পড়ে। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে এ বিষয়ে আলোচনা করা হয়। হাসিব হাসানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ও আইনজীবী হাসান মাহমুদ বিপ্লব এবং পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আবু সাইদ আহমেদ এফসিএ।
হাসান মাহমুদ বিপ্লব বলেন, অনেকেই আমরা অল্প পরিশোধিত মূলধনের কোম্পানিকে জাঙ্ক বা খারাপ শেয়ার বলে মনে করি। আসলে এ ধারণাটি সঠিক নয়। যারা অনেক বছর ডিভিডেন্ড দেয় না বা প্রত্যাশা অনুযায়ী ডিভিডেন্ড দেয় না তাদের জাঙ্ক বা জেড ক্যাটাগরির শেয়ার বলা হয়। যেমন সরকারি দুটি চিনি কল কোম্পানির শেয়ারদর দুই বছর আগে পাঁচ-সাত টাকা ছিল। এখন এটি ৬০-৭০ টাকা হয়ে গেছে। কিন্তু এদের পুঞ্জীভূত লোকসান আছে। ডিভিডেন্ড দেয় না অনেক বছর ধরে। আরও কিছু কোম্পানি আছে যারা দু-তিন শতাংশ ডিভিডেন্ড দিচ্ছে। খাদ্য খাতে কিছু গুজবও আছে। আর এগুলো পৃথিবীর সব জায়গাতেই হয়ে থাকে। তাছাড়া পুঁজিবাজারে যখন ফান্ড আসে, তখন বাজারে কিছু নতুন বিনিয়োগকারী আসেন। তারা সর্বোচ্চ যে খাতে লাভ পান না, তা হচ্ছে এসব জাঙ্ক শেয়ার থেকে। তিনি বলেন, বিনিয়োগকারীদের যতই মৌলভিত্তির শেয়ার সংগ্রহের কথা বলা হোক না কেন তারা কিন্তু সেদিকে খুব একটা ঝোঁকেন না। লক্ষ করলে দেখবেন গত আগস্ট থেকে এখন পর্যন্ত ব্যাংক ও লিজিং খাতের অধিকাংশ শেয়ার ১০০-২০০ শতাংশ গেইন করেছে। বাজার চার হাজার ৪০০ থেকে পাঁচ হাজার ৯০০ অতিক্রম করেছে। আর এর পুরোটাই এই দুই খাতের অবদান বলে আমি মনে করি। সঙ্গে জিপির দরও একটু বেড়েছে। এ পরিসংখ্যানে বোঝা যাচ্ছে, ফান্ডামেন্টাল কোম্পানি থেকে যদি কেউ লাভ করতে চান তাহলে তাকে শেয়ার সংগ্রহ করে অনেক দিন ধৈর্য ধরতে হবে। আর ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের হাতে সে সময় নেই। কারণ তাদের সংসার চালাতে হয়। পাশাপাশি ২০১০ সালের ধসে তাদের মূলধন কমে গেছে। বাজারে একটি নতুন কোম্পানি এসেছে এবং আমরা লক্ষ্য করেছি ১৪ দিনে অসম্ভব গেইন করছে কোম্পানিটি। ফলে মানুষ যখন এমন শেয়ারে লাভ পাবে, তখন বিনিয়োগকারীদের হাজার বলেও থামানো যাবে না। তবে এমন শেয়ারে যদি একবার কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হন তাহলে দেখা যায় অনেক বছরেও তাদের পুঁজি ফেরত পান না। তিনি আরও বলেন, বাজারে ভালো কোম্পানির অভাব রয়েছে। বাজারে এখন ভালো কিছু কোম্পানি আনা খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে। সরকারি কিছু শেয়ার বাজারে ছাড়া দরকার বলে মনে করি। আর সরকারি কোম্পানিগুলোর প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা আছে। ভালো কিছু কোম্পানি তালিকাভুক্ত হলে আমাদের পুঁজিবাজার আরও সামনের দিকে এগিয়ে যাবে।
আবু সাইদ আহমেদ বলেন, পুঁজিবাজার হচ্ছে ঝুঁকির মার্কেট। এখানে ঝুঁকি আছে, লাভও আছে অনেক। যেখানে ঝুঁকি নেই, সেখানে লাভও কম হয়। আর বিনিয়োগকারীদের চিন্তা করতে হবে তিনি কতটুকু ঝুঁকি নেবেন এবং তা সামাল দিতে পারবেন কি না। এমন হিসাব-নিকাশ করে তাকে বিনিয়োগে নামতে হবে। সঙ্গে কোম্পানি যাচাই-বাছাই করে বিনিয়োগ করতে হবে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। আর ভালো প্রফিট পেতে হলে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ করতে হবে।
শ্রুতি লিখন: রাহাতুল ইসলাম