প্রবাসীদের দুর্ভোগের শেষ নেই। কখনও সুদখোর মহাজন, কখনও অসাধু জনশক্তি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান, কখনও উড়োজাহাজের টিকিটের দুষ্প্রাপ্যতা, কখনও প্রবাসে বাংলাদেশ মিশনের অসহযোগিতাÑবিড়ম্বনা তাদের পিছু ছাড়ছে না। এবার নতুন করে যোগ হলো জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন নিয়ে ভোগান্তি। গতকাল শেয়ার বিজে প্রকাশিত ‘টাকা ছাড়া মেলে না জাতীয় পরিচয়পত্র: প্রবাসীদের ভোগান্তির জায়গা নির্বাচন কমিশন অফিস’ শীর্ষক প্রতিবেদন পাঠকের মনোযোগ কাড়বে বলেই ধারণা।
এতে বলা হয়, জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) নিয়ে নানাভাবে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন প্রবাসী বাঙালিরা। প্রবাসীদের অভিযোগ, বাড়তি টাকা না দিলে নানা ভোগান্তি ও কাজের অনিশ্চয়তা শুরু হয়। তবে টাকা দিলেই মেলে সমস্যার সমাধান।
জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে ভোগান্তিতে থাকা কয়েকজন প্রবাসী অভিযোগ করেন, টাকার বিনিময়ে অনেক জটিল বিষয়েরও সমাধান মেলে। আবার এনআইডিতে ভুল না থাকলেও অনেক সময় নানাভাবে ভোগান্তিতে ফেলা হয়। এনআইডি বিষয়ে নানা জটিলতা নিয়ে প্রতিদিন রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে ধরনা দেন অনেক প্রবাসী। তাদের কেউ কেউ সমাধান পাচ্ছেন, আবার কাউকে গ্রাম থেকে ঢাকা, ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়ি দৌড়াতে হচ্ছে। বিনা মূল্যের জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনের সুযোগ নিতে এসে সময় ও অর্থ ব্যয়ের পাশাপাশি হয়রানির শিকার হচ্ছেন সাধারণ নাগরিকরা।
এনআইডি নিয়ে দুর্নীতির খবর পুরোনো। এনআইডি কার্ড পেয়েছে রোহিঙ্গা শরণার্থীরাও। দুর্নীতিতে জড়িত থাকার দায়ে কয়েকজন চাকরিচ্যুতও হয়েছেন। তবু যে অনিয়ম-হয়রানি থেমে নেই, তা-ই বোঝা গেল আমাদের প্রতিবেদকের প্রতিবেদনে। দেশে থাকা নাগরিকরা জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনে কিছুটা ‘ধৈর্য’ ধরতে পারলেও প্রবাসে থাকা শ্রমজীবী মানুষ কত বিপত্তিতে পড়েন, তা কে বোঝাবে ইসির অসাধু কর্মীদের। ওয়েবসাইটে দেয়া নিয়ম অনুসরণ করলে জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন করা যেন কত সহজ! কিন্তু সেটি আদৌ যে সহজ নয়, তা ভুক্তভোগীরাই জানেন।
জাতীয় পরিচয়পত্রের বড় সমস্যা হলো কার্ডধারীর নামে বানান ভুল। এটি ইসির বিনা খরচে কিংবা নামমাত্র ফিতে করার কথা। অথচ লুক্কায়িত বা অঘোষিত চার্জ দিতে না পারলে যাবতীয় ‘প্রমাণপত্র’ সংগ্রহ করতে বলা হয় সেবাগ্রহীতাদের। নির্দিষ্ট সময়ে কাগজপত্র সংগ্রহ করাও ঝক্কির। তবে টাকা দিলে কোনো কাগজপত্র লাগে না। ভুক্তভোগীরা বলছেন, নির্বাচন কমিশনের অসতর্কতায় তাদের পকেটের টাকা গচ্চা যাচ্ছে। প্রকল্প বিকেন্দ্রীকরণ করলে সেবাগ্রহীতাদের দুর্ভোগ কমবে। শত শত মানুষ নিজেদের পরিচয়পত্রে থাকা ভুল সংশোধন করতে আসছেন ঢাকায়। তবে বিদেশে ভিসা নিতে গিয়ে এক শব্দের নাম ও পাসপোর্ট করতে গিয়ে জš§তারিখ নিয়ে বাধে বিপত্তি। এখন প্রতিদিন টাকা-পয়সা খরচ করে এসেও সমাধান পাচ্ছেন না তারা।
কারও পরিচয়পত্রে পিতার নামের ঘরে রয়েছে মাতার নাম, মাতার নামের ঘরে রয়েছে স্বামীর নাম। কোনো নাগারিক তো এ ভুল করেননি। ডেটা এন্ট্রিতে ভুল করায় পরিচয়পত্র সংশোধন করতে হচ্ছে। আর মাসুল দিতে হচ্ছে নাগরিকদের। তথ্য সংশোধন ও নতুন পরিচয়পত্র নিতে আসা নাগরিকদের আবেদন নিয়েও চলছে এক ধরনের ব্যবসা। এখানে সঠিক ব্যবস্থাপনার উদ্যোগ নিলে নাগরিক দুর্ভোগ কমবে বলেই আমরা মনে করি। অনিয়ম রোধে সংশ্লিষ্ট কর্মীদের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।