জাতীয় সরকারের ধারণা নতুন কিছু নয়

গাজী তারেক আজিজ: গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর নতুন উপদেষ্টা পরিষদ দায়িত্বভার গ্রহণের মাধ্যমে রাষ্ট্র পরিচালনার নিমিত্ত সরকার গঠন করে। অপেক্ষাকৃত গ্রহণযোগ্য ও আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাতিসম্পন্ন হওয়ায় এবং অরাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হওয়ার কারণে নোবেলজয়ী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস হন প্রধান উপদেষ্টা। একসময় তিনি রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম দাঁড় করানোর ঘোষণা দিলে প্রবল সমালোচনার মুখে পড়েন। আর সেই অবস্থায়ই দল গঠনের প্রচেষ্টা ভেস্তে যায়। আবার ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমের জন্য রোল মডেল হয়ে আন্তর্জাতিক খ্যাতি অর্জন করেন এবং সেই একই কারণে তিনি নিজ দেশে ইসলামি রাজনৈতিক দল ও নেতাদের চক্ষুশূলে পরিণত হন। ঠিক একই কারণে তিনি এখন সরকার পরিচালনার মতো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে অধিষ্ঠিত, যাকে বলে সময় কথা বলে।

তার ওপর দেশের প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর চাহিদা অনেক। যদিও তিনি সবাইকে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়েছেন; বলেছেন, প্রত্যাশা পূরণে সময় দেয়ার কথা। দলগুলো একদিকে সংস্কার চাইছে, অন্যদিকে নির্বাচন। সেই নির্বাচনও আবার যৌক্তিক সময়সীমার মধ্যে। কিন্তু কোনো রাজনৈতিক দলই বলছে না, সে সময়টা কখন বা ঠিক কত দিনের মধ্যে। অভ্যুত্থান-পরবর্তী মাঠ দাপিয়ে বেড়ানো জামায়াত প্রথমে সরকারকে ‘যতদিন ইচ্ছা ততদিন’ উল্লেখ করে সময়ের বাঁধাধরা নিয়মে ফেলতে না চাইলেও যতই দিন গড়াচ্ছে ততই বোল পাল্টাতে শুরু করেছে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের মতোই। তাহলে একটা বিষয় খুব পরিষ্কার হতে শুরু করেছেÑমূলত সবাই চাইছে গণতন্ত্রের বাতাবরণে নির্বাচন। আর কেউ কেউ স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে ক্ষমতার স্বাদ আস্বাদন করার। যদিও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান জাতীয় সরকার গঠনের মাধ্যমে দেশ পরিচালনার কথা উল্লেখ করেছেন। আর তাও সব ছোট-বড় দলের অংশগ্রহণে, যেটা সংখ্যানুপাতিক হবে বলেও ধারণা দিয়েছেন। এক্ষেত্রেও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আরও এক ধাপ এগিয়ে কাউকেই নিরাশ না করে সব দলের প্রতিনিধিত্বের মাধ্যমে সেই জাতীয় সরকার গঠন করে দেশ পরিচালনা করতে চান বলেও জানিয়েছেন। তাহলে কী দাঁড়ায়? নির্বাচিত হোক বা অনির্বাচিত হোক সব দল নিয়েই তার প্রদত্ত জাতীয় সরকারের কল্পিত রূপরেখা সাজিয়েছেন। এতে করে একসময়কার প্রবল বিরোধী দলগুলো আর বর্তমানে গজিয়ে ওঠা জনসমর্থনহীন দলের নেতারা গোঁফে তা দিতে শুরু করেছেন। আর এই পরিস্থিতিকে বিশ্লেষকদের কেউ কেউ বাহবা দিলেও অন্য বিরুদ্ধ মনোভাবের লোকজন কিংবা অতীতের পোড় খাওয়া প্রাজ্ঞজন ও সুশীল সমাজ ‘রাজনৈতিক ফাঁদ’ বলেও উল্লেখ করতে পারেন, যদিও এতে নতুনত্ব দেখা যাচ্ছে না। আসুন জেনে নেই সেই ফাঁদটা কী এবং কেমন হতে পারে? মূলত দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকতে থাকতে মরিয়া বিএনপি বেপরোয়া নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করে জনগণকে বোঝাতে চাইছে, শুধুই সময়ের অপেক্ষা। নির্বাচন হতে দেরি, তাদের সরকার গঠন করতে দেরি হবে না।

দ্বিতীয়ত, অতীতের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে প্রশাসনসহ সর্বস্তরের কর্মকর্তাদের নিউট্রল করে পরিস্থিতি নিজেদের অনুকূলে নেয়ার চেষ্টা। যেহেতু ২০০৫ সালের পর অনেক চেষ্টা করে, কিংবা ভুয়া ভোটার তালিকা প্রণয়ন করে, মাঠপ্রশাসন নিজেদের মতো ঢেলে সাজিয়ে, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতির চাকরির অবসরসীমা বাড়িয়ে এবং তখনকার নির্বাচনী ব্যবস্থায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারে নিজেদের অনুগত লোক বসানোর পর তাতেও যখন ব্যর্থ হয়, তখন তারা নিয়মের ব্যত্যয় ঘটায়। তখন একমাত্র শেষ পদক্ষেপ হিসেবে রাষ্ট্রপতিকে প্রধান উপদেষ্টা বানিয়েও যখন পুরোপুরি ব্যর্থ হয়, অর্থাৎ রাজনৈতিকভাবে এমন একটা পর্যায়ে এসে পড়ে, যখন অনিবার্য সংঘাতে দেশ ও দেশের মানুষ, সেনাবাহিনী তখন ত্রাতা হয়ে পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণ নেয়। গঠিত হয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার আর পথচলা। এরই মধ্যে উপদেষ্টা পরিষদের কোনো কোনো উপদেষ্টা পদত্যাগ করলে আবার যখন সংকট দেখা দেয়, সেটাও অল্প সময়ে স্বাভাবিক হয়। দীর্ঘদিন প্রায় দুই বছর পর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ সময়ের মধ্যে সেনাবাহিনী জনসমর্থন পেতে শুরু করে। কিন্তু রাজনীতিকদের দাবি ছিল নির্বাচন। সেটা হয় এবং ২০০৫ সালে যখন মেয়াদোত্তীর্ণ হয়, সে সময় বিএনপির ক্ষমতা আঁকড়ে ধরার প্রাণান্তকর চেষ্টা দেশের সচেতন জনগণ প্রত্যক্ষ করে। ফলে নির্বাচনে ব্যাপক ভরাডুবি হয় বিএনপিসহ চারদলীয় জোটের। সে হিসেবে কেউই বলতে পারছে না, আদর্শিক ধারায় রাজনীতি করেছেÑএখন যে অভিযোগে বিদ্ধ হয়েছে আওয়ামী লীগসহ মহাজোট।

তৃতীয়ত, মানুষ স্বভাবতই দূরবর্তী কষ্ট ভুলে যায়, আর সাম্প্রতিক কষ্ট মনে রাখে। এটা বহুল প্রচলিত মত বলেও বিবেচিত হয়ে আসছে। সে হিসেব করলে আওয়ামী লীগ ক্রমেই দেশের রাজনীতিতে ‘ব্যাকফুটে’ চলে গিয়েছে। সহসাই এ অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটানো অকল্পনীয় তো বটেই, অসম্ভবও। তাহলে ফল দাঁড়াচ্ছে, আওয়ামী বলয়ের বাইরের কেউ ক্ষমতার স্বাদ পেতে চলেছে। সেক্ষেত্রে প্রশ্ন থেকে যায়, যদি আওয়ামী লীগ দলের বিরুদ্ধে বিচার প্রক্রিয়ায় কোনোরূপ শাস্তি অর্পিত না হয়, অবধারিতভাবে দলটি নির্বাচনে লড়বে। যেহেতু ভোটের মাঠে তাদেরও সুবিশাল কর্মী-সমর্থক গোষ্ঠী রয়েছে, সেহেতু তারা অনুমান ৫০-ঊর্ধ্ব আসন পেতে পারে বলেও ধারণা করছি। এরই মধ্যে দলটির শীর্ষ নেতৃত্বসহ তৃণমূলের জেলা পর্যায়ের প্রায় সব পদাধিকারী নেতা-কর্মীদের অনেকের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থানে হতাহতের ঘটনায় লাগাতার মামলা হয়েছে।

এসব মামলায় যদিও অনেক নিরপরাধ ব্যক্তির পাশাপাশি আওয়ামী লীগেরও অনেক নেতাকর্মী রয়েছেন বলে মিডিয়ায় খবর প্রকাশ পাওয়ায় সরকার ধরপাকড়ে শিথিলতা প্রদর্শন করছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিও তেমন নির্দেশনা দিয়ে রেখেছেন খোদ আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। যেহেতু এরই মধ্যে সরকার সব পর্যায়ে সংস্কারপূর্বক যৌক্তিক সময়ের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে ছয়টি কমিশন গঠনের কথা জানিয়েছে, যার প্রধান হচ্ছে নির্বাচন কমিশন সংস্কারে কাজ করা। তাহলেও বিষয় হচ্ছে, যত সহজ সময়ের কথা বলা হচ্ছে তত দ্রুত সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানে সরকারের প্রস্তুতি থাকার বিষয়টিও ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। আর সময় গড়াতে থাকলে সেক্ষেত্রে পরিস্থিতি তথা আইনশৃঙ্খলা যদি নিয়ন্ত্রিত অবস্থায় আসে, তখনই অনুধাবন করা যাবে, মাঠের আওয়ামী লীগ কতটুকু বৈরী পরিবেশ উতরিয়ে শেষ পর্যন্ত নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে সক্ষম হবে।

সেক্ষেত্রে বিএনপি যদি নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পেয়েও থাকে জোটবদ্ধ হয়ে, আর আওয়ামী লীগ যদি তাদের জোট নিয়ে নির্বাচনে ন্যূনতম কিছু আসনও পায়, তাহলে তারেক রহমানের ‘জাতীয় সরকার’ গঠনে কি আওয়ামী লীগ ও অন্য দলগুলো সরকারে নেয়া হবে? নাকি শুধু আওয়ামী লীগ বিরোধী জোটই হবে, আলোচিত জাতীয় সরকার। যদিও জাতীয় সরকারের বিষয়ে আলোচনা এবারই প্রথম শোনা যাচ্ছে না। এর আগে স্বাধীনতা যুদ্ধ-পরবর্তী ১৯৭১ সালেও ব্যাপক আলোচনায় ছিল জাতীয় সরকার। তৎকালীন সংখ্যাগরিষ্ঠ দল আওয়ামী লীগ বাম দলগুলোর সেই প্রস্তাব নাকচ করে একাই সরকার গঠন করে।
চতুর্থত, আমরা অতীত থেকে দেখেছি, ‘যে যায় লঙ্কায়, সে হয় রাবণ।’ পরিস্থিতি যতটা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে যেতে শুরু করবে, ঠিক তখন থেকেই কি ‘ভোল’ পাল্টাতে শুরু করবে? আর যেসব দলের জনসমর্থন তলানিতে কিংবা দল হিসেবে নতুন, তারাই কীভাবে পরিস্থিতি সামাল দেবেন? সেটাও ভবিষ্যতের জন্য তোলা রইল। আবার সরকার পরিচালনা করতে গিয়ে মন্ত্রিত্ব পেলে সচিবালয়ে কি কার্যকর নিয়ন্ত্রণ নিতে পারবেন? নাকি বড় দলের বড় নেতার রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করার হিম্মত ধরে রাখতে সক্ষম হবেন, নাকি মাঝপথেই খেই হারিয়ে ফেলবেন? সেটাও সময়ের হাতেই ছেড়ে দেয়া যেতে পারে, তবে প্রশ্নসমেত।

পঞ্চমত, এ মুহূর্তে জামায়াত কিছুটা কোণঠাসা অবস্থায় থাকলেও দলটির নেতাকর্মীদের ভেতরে একটা জয়ী মনোভাব ফুটিয়ে রেখেছে। কারণ সাধারণ মানুষ যেই না বুঝতে পেরেছে, ঘটে যাওয়া আন্দোলন নিছক ছাত্র আন্দোলন ছিল না। তার ওপর যখন দলটির ছাত্র সংগঠন শিবিরের ‘গোপন’ থাকা নেতাদের আত্মপ্রকাশ শুরু হতে থাকে, তখনই ব্যাপকভাবে সমালোচনা শুরু হতে থাকে। আর বিএনপিও অনেকটা ‘গলার কাঁটা উগরানো পর্যন্ত ঢোঁক না গিলে’ সময় অতিক্রম করার পন্থা বেছে নিয়েছে। কিন্তু তৃণমূল থেকে শীর্ষ নেতৃত্বের অনেকেই জামায়াতের ‘পাকামিপূর্ণ’ আচরণে অতিষ্ঠ হয়েও মেনে নিচ্ছেন। তাহলে বোঝা যাচ্ছে, বিএনপি আর জামায়াত ভিন্ন পথ বেছে নিতে চলেছে। তবে আদৌ কি জামায়াত বিএনপি বলয় থেকে সরে নির্বাচনে সুবিধা করতে পারবে? নাকি এটাও দরকষাকষির নিছকই একটা কৌশল মাত্র, যাতে জোট করলে আসন বাগিয়ে নিতে সুবিধা হয়।

আবার অন্যভাবেও দেখা যেতে পারে, দলটির ধারণামতে, আওয়ামী লীগ যদি নির্বাচনে অযোগ্য হয়, কিংবা নিষিদ্ধ হয়, বিএনপি বলয়ের বাইরে থেকে আওয়ামী লীগের সঙ্গে গোপন সমঝোতা করে নির্বাচন করে, তাহলে তারা এককভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলে সরকার গঠন করবে, আর সেক্ষেত্রে আলোচিত জাতীয় সরকার গঠনে তাদের ওপর কোনোরূপ দায়িত্ব বর্তায় না। ষষ্ঠত, এর আগেও যে বা যারা সরকার গঠন করেছে জোটবদ্ধ হয়ে, তখনও ‘টেকনোক্রেট’ মন্ত্রী নিয়োগ দিয়েছে, যিনি অনির্বাচিত হয়েও মন্ত্র হয়েছেন। সেক্ষেত্রে সর্বোচ্চ পাঁচজনকে মন্ত্রী বানানো যেত। তাহলে জাতীয় সরকার গঠন প্রক্রিয়ার কথা যেহেতু বাংলাদেশের বলবৎ সংবিধানে উল্লেখ করা নেই, সেহেতু সংবিধান সংশোধন অনিবার্য হয়ে পড়ে। অবশ্য এরই মধ্যে অনেকেই সংবিধান নতুন করে প্রণয়নের পক্ষে আওয়াজ তুলছেন। আবার কেউ কেউ এই সংবিধান সংশোধনের পক্ষে মত দিয়েছেন। সেটাও সময়সাপেক্ষ বিষয়। যেহেতু একটা সংবিধান প্রায় ৫৩ বছর অতিক্রম করতে পেরেছে বহু চড়াই-উতরাই পেরিয়েÑকাটাছেঁড়া-ঘষামাজার মধ্য দিয়ে সেই সংবিধান বাতিল করে নতুন সংবিধান প্রণয়ন ও গ্রহণযোগ্য করে তোলা প্রায় অসম্ভব কাজ বলেই মনে করি।

সপ্তমত, ৫ আগস্ট সরকার পতনের পরবর্তী সময়ে বিএনপি ও জামায়াতের দখলে চলে যায় মাঠ ও মাঠের রাজনীতি। যেখানে থানা পুড়িয়ে, পুলিশ মেরে, আওয়ামী লীগ দলীয় নেতাকর্মীদের হত্যা করে, ঘর পুড়িয়ে, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ঘরে আগুন, লুটপাট চলছিল, ঠিক সেই সময় যখন থানার অস্ত্র লুট হয়েছে, জেলখানা ভেঙে বন্দিদের ছাড়িয়ে নেয়া, যার মধ্যে জঙ্গি, সিরিজ খুনের দুর্ধর্ষ আসামিও ছিল। সে সময় অনেক পুলিশ পোশাক বদলে পালিয়ে বাঁচলেও চরম আতঙ্ক আর অস্থিরতায় যখন দিন গড়াচ্ছিল তখন জামায়াত ও বিএনপি যার যার অবস্থান থেকে থানা ঝাড়ামোছা, কম্পিউটার দিয়ে কার্যক্রম সচলে ভূমিকা রাখা, সনাতন ধর্মাবলম্বী লোকদের বাড়ি বাড়ি যেতে আশ্বস্ত করাÑসবই করেছে মিডিয়ায় দেখেছি। খবরের কাগজে পড়েছি। তারপরও হিন্দু ধর্মের লোকজনের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ বাদ যায়নি। আবারও অভয় দেয়া হয় মন্দির পাহারা দেয়ার। কিন্তু সংখ্যালঘুরা তাতে কি ভয় কাটিয়ে উঠতে পেরেছিল?
আরও খবর প্রচার হচ্ছিল, থানার কার্যক্রম স্বাভাবিক করাতে কেনই এত উৎসাহী হলো বিএনপি-জামায়াত, এই প্রশ্ন কি ঘুরপাক খাচ্ছে কারও মনে? স্বভাবতই তারা ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের নীতি নিয়েছে; কারণটাও স্পষ্ট, অভ্যুত্থানের ইমেজ থাকতে থাকতে প্রতিপক্ষকে কোণঠাসা করতেই নিহতদের বাড়ি বাড়ি সহযোগিতা ও আর্থিক অনুদান দিয়ে ঠিক পরের ধাপেই ‘শহিদ’দের পরিবারের সদস্য দিয়ে ঢালাওভাবে আসামির তালিকা দিয়ে মামলা রুজু করতে থাকে। স্বভাবতই চেনা পরিচিত সূত্র কাজে লাগিয়ে মামলায় ‘আসামি বাণিজ্য’ করেও হাতিয়ে নিতে থাকে লাখ লাখ টাকা।

এক্ষেত্রে বেশি টার্গেট করা হয় ধর্ণাঢ্য ব্যক্তিদের। অনেকাংশে সফলও হয়েছে। আবার পুলিশের উপস্থিতি না থাকার সুযোগে প্রতিপক্ষের ওপর অমূলক দোষারোপ করে মব জাস্টিস কিংবা মব লিঞ্চিংয়ের মতো ঘটনা ঘটিয়ে নারকীয় তাণ্ডবলীলা চালিয়ে উš§াদনায় মেতে ওঠে আর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিও ছড়িয়ে ছবি তুলে ভয়ংকর পরিস্থিতি তৈরি করতেও কার্পণ্য করেনি। ছিল নিতান্তই হিংসাত্মক মনোভাবের উল্লম্ফনের ধারাবাহিক চিত্র। এর পরও কি পরিস্থিতি সামাল দিতে পেরেছে, কিংবা দেয়ার চেষ্টা করেছে? যদি তা না-ই হবে, তাহলে ক্ষমতায় গেলে যে কী ধরনের পরিণতি হবে, এই যখন ভাবনার কেন্দ্রে, তা আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালে যে আশঙ্কার কথা বলে আসছিল, তা-ই কি তবে সত্যি করে ছাড়বে?