জাতীয় সেমিনারে বক্তারা স্বাস্থ্য করনীতি চিকিৎসা ব্যয় কমাবে

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশে স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় ও চাপ উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। কারণ দেশে রোগে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। বর্তমানে দেশে মোট মৃত্যুর ৭০ শতাংশ অসংক্রামক রোগের কারণে হয়। ফলে স্বাস্থ্য করনীতি আরোপের মাধ্যমে রাষ্ট্রের ও ব্যক্তির চিকিৎসা ব্যয় কমানো সম্ভব। এক্ষেত্রে চিনিযুক্ত খাবার, পানীয়, বেভারেজ ও তামাকজাত দ্রব্যের ওপর উচ্চ হারে করারোপ করা জরুরি। একই সঙ্গে একটি স্বাস্থ্য করনীতি প্রণয়ন করতে হবে বলে মনে করে জনস্বাস্থ্য, অর্থনীতি ও তামাক নিয়ন্ত্রণ বিশ্লেষকরা।

গতকাল মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর ফার্স হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টের ব্রিস্টো সম্মেলন কক্ষে ‘জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় কর নীতি’ শীর্ষক জাতীয় সেমিনারে তারা এসব কথা বলেন। অর্থনৈতিক গবেষণা ব্যুরো (বিইআর) ও বাংলাদেশ নেটওয়ার্ক ফর টোব্যাকো ট্যাক্স পলিসি (বিএনটিটিপি) যৌথভাবে এ সেমিনারের আয়োজন করে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. সাইদুর রহমান। এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ড. নাসিরউদ্দীন আহমেদের সভাপতিত্বে সেমিনারে বিশেষ অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের মহাপরিচালক ড. মো. এনামুল হক, জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের সমন্বকারী (অতিরিক্ত সচিব) হোসেন আলী খোন্দকার, ভাইটাল স্ট্রাটেজিসের হেড অব প্রোগ্রামস শফিকুল ইসলাম ও পরামর্শক ফাহিমুল ইসলাম। এছাড়া সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য দেন ভাইটাল স্ট্রাটেজিসের কারিগরি পরামর্শক অ্যাডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. রুমানা হক।

সেমিনারে বক্তারা বলেন, দেশে চিনিজাতীয় খাবার ও তামাকজাত দ্রব্য গ্রহণের কারণে অসংক্রামক রোগের হার দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। গবেষণায় দেখা গেছে, বর্তমানে ৪৮ শতাংশ স্কুল শিক্ষার্থী ও ৯৫ দশমিক ৪ শতাংশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী চিনিযুক্ত সফট ড্রিংকস গ্রহণ করে। প্রতিদিন কেউ এসব পানীয় বা চিনিযুক্ত খাবার গ্রহণ করলে বছরে তার ওজন ৫ পাউন্ড বেড়ে যায়। পাশাপাশি তাদের টাইপ টু ডায়াবেটিসের ঝুঁকি ২৬ শতাংশ বেড়ে যায়। ফলে চিনিযুক্ত খাবার মানব স্বাস্থ্যের মারাত্মক ঝুঁকি ফেলছে।

তারা আরও বলেন, প্রতি বছর বাংলাদেশে তামাকজনিত রোগে প্রায় ১ লাখ ৬১ হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করছে। ২০১৮ সালের হিসাব অনুযায়ী, তামাকজনিত রোগে চিকিৎসা ব্যয় ছিল প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা, যা বর্তমানে আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী ২০৪০ সালের মধ্যে দেশকে তামাকমুক্ত করতে হলে প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে একটি শক্তিশালী তামাক কর নীতি প্রণয়ন করতে হবে। একই সঙ্গে সবধরনের তামাকজাত দ্রব্যের ওপর সুনির্দিষ্ট কর আরোপ করতে হবে। এতে সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধির পাশাপাশি তামাকজনিত ব্যয়ও কমে আসবে।

তারা আরও বলেন, চিনিযুক্ত খাবার, পানীয় ও তামাকজাত দ্রব্য ছাড়াও পরিবেশের ক্ষতি করে এমন যেকোনো কোম্পানি ও প্রতিষ্ঠানের ওপর পরিবেশ কর আরোপ করতে হবে। একই সঙ্গে সেই অর্থ জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ বিপর্যয় রোধে ব্যয় করতে হবে। এতে পরিবেশ বিপর্যয়ের ঝুঁকি কমে আসবে।

এ সময় তারা তামাকের সহজলভ্যতা কমিয়ে আনতে তামাকজাত দ্রব্যের মূল্য অধিক পরিমাণে বৃদ্ধি; তামাকে কর ফাঁকির জায়গাগুলো চিহ্নিত করে তা বন্ধে ব্যবস্থা নেয়া; রাজস্ব আদায়ে ডিজিটাল ব্যবস্থা চালুসহ সংশ্লিষ্ট সব বিষয়কে নিয়মের মধ্যে আনতে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুসারে জরুরি ভিত্তিতে একটি শক্তিশালী তামাক কর নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের তাগিদ দেন।

সভায় অন্যদের মধ্যে এনবিআরের বৃহৎ করদাতা ইউনিট, বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিট, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব লোকাল গভর্নমেন্ট, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব প্রিভেনটিভ অ্যান্ড সোশাল মেডিসিনের প্রতিনিধিসহ তামাক নিয়ন্ত্রণ বিশেষজ্ঞ, উন্নয়নকর্মী ও সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।