জাবিতে পাঁচ দিনব্যাপী নাট্যোৎসব শুরু

নোমান বিন হারুন, জাবি : নাট্যাচার্য সেলিম আল দীনের ৭৩তম জন্মজয়ন্তীতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের উদ্যোগে পাঁচ দিনব্যাপী নাট্যোৎসব শুরু হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১৮ আগস্ট) সকাল ১০ টায় জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে একটি শোভাযাত্রা বের করে নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগ। শোভাযাত্রায় অংশ নেন জাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. নূরুল আলম, নাট্যব্যক্তিত্ব ও ঢাকা থিয়েটারের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা মুক্তিযোদ্ধা নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু, জাবি নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. ইস্রাফিল আহমেদসহ বিভাগের অন্যান্য শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। শোভাযাত্রাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থান প্রদক্ষিণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে সেলিম আল দীনের সমাধিতে এসে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শেষ হয়।

সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সংক্ষিপ্ত সভায় নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. ইস্রাফিল আহমেদ বলেন, ‘সেলিম আল দীনের ৭৩ তম জন্মজয়ন্তীতে আমরা তাকে গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করছি। পাঁচ দিনব্যাপী নাট্যোৎসবের এ আয়োজনে আপনারা সবাই আমন্ত্রিত। এ নাট্যোৎসবের মাধ্যমে সেলিম আল দীনের নাট্যদর্শন আরো বেশি মানুষের মাঝে পৌছে দিতে পারবো বলে আমাদের বিশ্বাস।’

নাট্যব্যক্তিত্ব ও ঢাকা থিয়েটারের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা মুক্তিযোদ্ধা নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু বলেন, ‘সেলিম আল দীন শুধু একজন নাট্যকার নন, সেলিম একটি ঘটনা। ভারতবর্ষে হাজার বছরের শাসনের পরও সংস্কৃতি কিন্তু হারিয়ে যায়নি। নতুন ধর্মপ্রচার হলেও ভাষা-সংস্কৃতি হারিয়ে যায়নি। এখানকার জাতিগোষ্ঠীর ধর্মের ভাষা আর সংস্কৃতির ভাষা এক ছিল না। এজন্যেই ইংরেজরা সব কিছু ইংরেজিতে চালু করলেও বাংলার আধিপত্য নষ্ট হয়ে যায়নি। আমরা আমাদের ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে পেরেছি। আমাদের এ চেতনা ধরে রাখতে পেরেছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘উপনিবেশিক শক্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের এ ঐতিহ্য সেলিম বাঙালীর নাট্যরীতিতে ধরে রেখেছেন। রবীন্দ্রনাথ থেকে শুরু করে সেলিম আল দীন পর্যন্ত উপনিবেশিক শক্তির বিরুদ্ধে এ লড়াই চলেছে। নাট্যরচনার পাশাপাশি শিল্প এবং সমাজের সামগ্রিক আন্দোলনের জন্য তিনি প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। একটি বিপ্লব করতে চেয়েছিলেন। সেলিমের মৃত্যুতে তাতে একটু যতিচিহ্ন পড়েছে।’

জাবিতে পাঁচ দিনব্যাপী এ নাট্যোৎসবের প্রথমদিন বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাতটায় জহির রায়হান মিলনায়তনে প্রদর্শিত হবে নাটক ‘প্রাচ্য’। এরপর ১৯ আগস্ট থেকে ২২ আগস্ট প্রদর্শিত হবে নাটক ‘কিত্তনখোলা’, ‘বনপাংশুল’, ‘কেরামতমঙ্গল’ ও ‘পুত্র’।

উল্লেখ্য, নাট্যাচার্য সেলিম আল দীনের জন্ম ১৯৪৯ সালে, ফেনীতে। ১৯৯৫ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন তিনি। পরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগ প্রতিষ্ঠা করেন। নাট্যচর্চার জন্য ঢাকা থিয়েটার প্রতিষ্ঠায়ও তার ভূমিকা ছিল। সারাদেশে নাট্যআন্দোলনকে ছড়িয়ে দিতে ১৯৮১-৮২ সালে আরেক নাট্যযোদ্ধা নাসিরউদ্দীন ইউসুফের সঙ্গে গড়ে তোলেন বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটার।