Print Date & Time : 9 September 2025 Tuesday 3:35 am

জাবিতে ফুটপাতবিহীন সড়কে বাড়ছে দুর্ঘটনা

ওসমান সরদার, জাবি:জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের একমাত্র আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়। আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ায় সচরাচর লোকজনের যাতায়াত বেশি থাকে এই ক্যাম্পাসে। সপ্তাহের ছুটির দিনগুলোতে লোকজনের আনাগোনা বেড়ে যায় কয়েকগুণ।

কিন্তু জাবির কোনো সড়কপথে নেই পথচারীদের জন্য ফুটপাত। ফলে মূল সড়ক দিয়েই পায়ে হেঁটে চলাচল করে শিক্ষার্থীসহ শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এতে করে প্রায়ই দুর্ঘটনার শিকার হন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। বৃষ্টিতে রাস্তার দুপাশে পানি জমে যাওয়ায় আরও ভোগান্তিতে পরেন পথচারীরা। ফলে বাধ্য হয়েই মূল সড়ক দিয়ে যাতায়াত করতে হয় তাদের। এতে করে চলাচলকারী রিকশা, মোটরসাইকেল, বাইসাইকেলের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে আহত হন শিক্ষার্থীরা।

গত ২ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় গেরুয়া এলাকা থেকে বন্ধুদের সঙ্গে ফেরার সময় ৫১ ব্যাচের নবীন শিক্ষার্থী জাহিদ হাসান ভাসানী হল সংলগ্ন এলাকায় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার শিকার হন। এতে তার মাথায় গুরুতর আঘাত লাগে এবং একটি বেসরকারি হাসাপাতালের আইসিইউতে ভর্তি হন জাহিদ হাসান। ১৭ দিন হাসপাতালে থেকে তাকে চিকিৎসা নিতে হয়েছিল।

এর আগে গত ২৯ জানুয়ারি রাতে ফার্মেসি বিভাগের শিক্ষার্থী মারিয়া মিম নিজ হলে ফেরার সময় শেখ হাসিনা হলের সামনে এক ভয়াবহ মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার শিকার হন। এতে পায়ের দুটি হাড় ভেঙে যায় তার। এভাবে গত জানুয়ারি মাসেই অন্তত ১০টি ছোট-বড় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ঘটেছে।  এছাড়া বিভিন্ন সময়ে অটোরিকশার দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন শিক্ষার্থীরা। ২০২১ সালের ৪ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ক্লাবের সামনের সড়কে ব্যাটারিচালিত দুই অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে রিকশা উল্টে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগের শিক্ষার্থী পূজা মজুমদার গুরুতর আহত হন। তার মাথার খুলিতে আঘাত লেগে রক্তপাতের ঘটনা ঘটে।

তাছাড়া লাইসেন্সবিহীন অতিরিক্ত রিকশা চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে শিক্ষার্থীদের জন্য। এমন পরিস্থিতিতে জাবির সড়কগুলোতে ফুটপাত নির্মাণ করা অপরিহার্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিভিন্ন সময়ে শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করলেও প্রশাসনের এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্নালিজম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী মনসুরা ইয়াসমিন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান সড়কগুলোতে ফুটপাতের স্থাপনের দাবি জানিয়ে বলেন, ‘ফুটপাতহীন সড়কে চলাচল করায় শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগের অন্ত নেই। প্রায়ই এ সমস্যার জন্য অনেক শিক্ষার্থী দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন। পথচারীদের হাঁটার অসুবিধা হচ্ছে। তাছাড়া শিক্ষার্থীদের অন্যান্য খরচের মধ্যে পরিবহন খরচ একটি বাড়তি খরচ, কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের সড়কগুলোতে ফুটপাত না থাকায় হেঁটে চলাও দায়।’

প্রধান প্রকৌশলী আবদুস সালাম মোহাম্মদ শরীফ বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় রাস্তা প্রসারণ ও বর্ধিতকরণের কথা বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে ফুটপাত ও সাইকেলের জন্যও আলাদা লেন তৈরি করা হবে।’

পরিকল্পনা ও উন্নয়ন প্রকল্পের প্রধান প্রকৌশলী মো. নাসির উদ্দীন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান সড়কগুলো বিনির্মাণ করা হবে। আগামী আগস্ট মাসে আমরা টেন্ডার সার্কুলার করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেব। একই সঙ্গে সড়কের পাশে সাইকেল লেনসহ ফুটপাত তৈরি করা হবে। আশা করি এ বছরই এ সমস্যার সমাধান হবে।