ওসমান সরদার, জাবি : জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় ভর্তিচ্ছুদের সহযোগিতায় অক্লান্ত সময় পার করছে বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর (বিএনসিসি) ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় রোভার স্কাউটস।
পরীক্ষা চলাকালে ক্যাম্পাসে সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে বিএনসিসি ও রোভার স্কাউটের সদস্যরা। শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষা ছাড়াও অসুস্থ পরীক্ষার্থীদের কেন্দ্রে পৌঁছে দেয়া, প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের সহায়তা, সারিবদ্ধভাবে কেন্দ্রে প্রবেশ করার মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন তারা। প্রতিটি পরীক্ষা কেন্দ্রে লাল ব্যারেটে বিএনসিসি ও নীলাভ ধূসর পোশাক পরিহিত একদল সুশৃঙ্খল সদস্যকে ভর্তিচ্ছুদের সহযোগিতায় নিরলস পরিশ্রম করতে দেখা গেছে। দিনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এ কাজে ব্যস্ত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বিএনসিসি ক্যাডেট ও রোভার স্কাউটস সদস্যরা। ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের যথাসময়ে সারিবদ্ধভাবে পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রবেশ ও প্রাথমিক নির্দেশনা দেয়াসহ পরীক্ষা কেন্দ্রের সার্বিক শৃঙ্খলা বজায় রাখতে কাজ করছেন তারা।
চলতি বছর মোট ১৪টি কেন্দ্রে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বিএনসিসি সদস্যরা সমাজবিজ্ঞান ভবন, ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ, পুরোনো কলা ভবন, গণিত ও পরিসংখ্যান বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর স্কুল অ্যান্ড কলেজসহ মোট ছয়টি কেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করছেন। অন্যদিকে, নতুন কলা ভবন, পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগ, রসায়ন বিভাগসহ মোট নয়টি কেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করছেন রোভার স্কাউটের সদস্যরা। ক্যাডেট সার্জেন্ট শফীউজ্জামান শাহীনের নেতৃত্বে জাবি বিএনসিসি প্লাটুন এবং এসআরএম খালেদ জুবায়ের শাবাব রোভার স্কাউট দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে।
এ সেবামূলক কাজের অনুভূতি সম্পর্কে ক্যাডেট শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘ভর্তি পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের সহায়তা করতে পেরে খুবই ভালো লাগছে। জ্ঞান ও শৃঙ্খলার সঙ্গে সেবার মানসিকতার দীক্ষা আমরা এখান থেকেই পেয়েছি। যে কোনো প্রতিকূল পরিবেশের মোকাবিলায় আমরা সদা প্রস্তুত আছি।’
রোভার জুবায়ের ইসলাম বলেন, ‘শৃঙ্খলাকে মূল লক্ষ্য ধরে আমরা জাবি রোভার স্কাউট গ্রুপ পরীক্ষার শুরু থেকে দায়িত্ব পালন করছি। পরীক্ষা কেন্দ্রের বাইরের এবং ভেতরের পরিবেশ যথাযথ রাখতে আমরা সচেষ্ট আছি। দৃঢ় ইচ্ছা এবং আত্মবিশ্বাস আমাদের সেবামূলক এ কাজে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। মাঝে মধ্যে ভর্তি পরীক্ষার্থীরাও অশোভন ব্যবহার করে বা অবাঞ্ছিত কথা বলে থাকে। তবে আমরা তাদের ধৈর্যসহকারে বুঝাতে চেষ্টা করি এবং এ কাজে আমরা যথেষ্ট সফল।’
ভর্তি পরীক্ষার কার্যক্রম সম্পর্কে বিএনসিসি প্লাটুনের ইনচার্জ ক্যাডেট-সার্জেন্ট শফীউজ্জামান শাহীন জানান, ‘ভর্তি পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের সহায়তা করা আমাদের দায়িত্ব। দূরদূরান্ত থেকে আসা পরীক্ষার্থীদের সহায়তা করতে ৬০ জন ক্যাডেট নিরলসভাবে এই দায়িত্ব পালন করছেন। এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাদের সাহায্য করছেন। যে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে আমরা সদা প্রস্তুত আছি।’
জাবি রোভার-ইন-কাউন্সিলের সভাপতি সিনিয়র রোভার মেট (এসআরএম) খালেদ জুবায়ের শাবাব বলেন, ‘প্রতি বছরের ন্যায় এবারও রোভাররা ভর্তি পরীক্ষার্থীদের সাহায্য করে যাচ্ছে এবং সার্বিকভাবে শৃঙ্খলা বজায় রাখছে। এ বছর ছাত্র ও ছাত্রী আলাদা শিফটে পরীক্ষার ফলে আমাদের নারী রোভাররাও তাদের কাজে যোগ্যতার প্রমাণ দিয়ে যাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়োজনে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় রোভার স্কাউটস সদা প্রস্তুত।’
রোভার ইন কাউন্সিলের রোভার স্কাউট লিডার (আরএসএল) সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, ‘ভর্তি পরীক্ষা চলাকালীন শৃঙ্খলা বজায় রাখা বড় দায়িত্ব। আমি নিজেও একজন রোভার ছিলাম; এ জন্য একজন স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে দেখি। শিক্ষার্থীদের সহায়তায় রোভার সদস্যরা নিবেদিত রয়েছেন। কোনো পরীক্ষার্থী অসুস্থ হলেও চিকিৎসা কেন্দ্রে পৌঁছে দেন রোভাররা। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্কাউটস আন্দোলন আমরা দেশব্যাপী ছড়িয়ে দিতে চাই।’
বিএনসিসি জাবি প্লাটুনের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক সহযোগী অধ্যাপক মো. রাকিবুল হাসান বলেন, ‘বিএসসিসি প্লাটুনের দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে নিয়মিত নানা কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছি। ভর্তি পরীক্ষার দায়িত্ব পালনে তার প্রতিফলন ঘটেছে। পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য সদস্যরা তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছেন। এ ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও আমাদের সাহায্য করছে। আশা করি, জাবি বিএনসিসি তার সুনাম অক্ষুণœ রেখে সামনের দিকে এগিয়ে যাবে।’