Print Date & Time : 9 July 2025 Wednesday 11:47 pm

জামিন হয়নি মির্জা ফখরুল ও আব্বাসসহ ২২৪ নেতাকর্মীর

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীর নয়াপল্টনে সংঘর্ষের মামলায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসসহ দলটির ২২৪ নেতাকর্মীর জামিন আবারও নাকচ করে দিয়েছেন ঢাকার হাকিম আদালত। তাদের ‘বিশেষ’ জামিনে আবেদনের শুনানি শেষে ঢাকার মহানগর হাকিম শফিউদ্দিন গতকাল সোমবার এ আদেশ দেন। বিএনপি নেতাদের পক্ষে তাদের আইনজীবীরা রোববার ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম) আদালতে জামিনের জন্য এ আবেদন করেছিলেন। বিচারক রেজাউল করিম তখন শুনানির জন্য সোমবার দিন ঠিক করে দিয়েছিলেন।

মির্জা ফখরুলের পক্ষে আইনজীবী সৈয়দ জয়নুল আবেদীন মেজবাহ এবং মির্জা আব্বাসের পক্ষে মহিউদ্দিন চৌধুরী জামিনের আবেদন করেন। সোমবার শুনানি করেন মাসুদ আহমেদ তালুকদার, বোরহানউদ্দিনসহ বেশ কয়েকজন আইনজীবী। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে আবদুল্লাহ আবু জামিন আবেদনের বিরোধিতা করে বক্তব্য দেন।

এদিন যে ২২৪ নেতাকর্মীর জামিন শুনানি হলো, তাদের মধ্যে ফখরুল ও আব্বাসকে গ্রেপ্তার করা হয় গত শুক্রবার ভোরে; জামিন আবেদন নাকচ করে সেদিন সন্ধ্যায় তাদের কারাগারে পাঠানো হয়। বাকিদের গ্রেপ্তার করা হয় বুধবার সন্ধ্যায় নয়াপল্টনে বিএনপি অফিসের সামনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের পর। বৃহস্পতিবার তাদের জামিন নাকচ করে কারাগারে পাঠান আদালত।

জামিন নামঞ্জুরের সাত দিনের মধ্যে পুনরায় জামিন চাইতে গেলে বিশেষ আবেদন (স্পেশাল পুটআপ) করতে হয়। সে কারণে রোববার নতুন করে ‘বিশেষ আবেদন’ করেন বিএনপি নেতাদের আইনজীবীরা। কিন্তু ফল সেই একই। 

শুনানিতে যা হলোÑআসামিদের মধ্যে বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতা, একজন আইনজীবী, একজন শিক্ষানবিশ আইনজীবী, চার নারী বিএনপি কর্মীসহ ২২৪ জনের পক্ষে জামিন চাওয়া হয়। এজলাস ও বারান্দা মিলিয়ে বিএনপিপন্থি আইনজীবী ছিলেন অন্তত ৩০০ জন। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ১৫ জনের মতো।

শুনানির আগে এজলাসের মধ্যেই বিএনপিপন্থি কনিষ্ঠ আইনজীবীদের

কয়েকজনের মোবাইল ফোনে সেলফি ছবি তোলার হিড়িক চলে। জ্যেষ্ঠ কয়েকজন তাদের থামাতে গিয়েও ব্যর্থ হন।

তুমুল হইচই আর হট্টগোলের মধ্যে শুনানিতে মাসুদ আহমেদ তালুকদার বলেন, ‘মির্জা ফখরুল ও আব্বাসের নাম এজাহারে নেই। এজাহারভুক্ত দুই আসামি জামিনে রয়েছেন। আসামিদের শর্তে তারা জামিন পেতে পারেন। বিজয়ের মাস ডিসেম্বর চলছে। তারা মুক্তি পেয়ে শহিদদের সম্মান জানাবেন।’

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন এবং ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালামের পক্ষে জামিন চেয়ে এ আইনজীবী বলেন, ‘খোকন অসুস্থ; আর সালাম একজন আইনজীবী এবং মুক্তিযোদ্ধা।’ কারাগারে থাকা অন্য আসামিদের রাজনৈতিক পরিচয়, তাদের পদমর্যাদা, তাদের বিভিন্ন কাজ আদালতের সামনে তুলে ধরেন মাসুদ আহমেদ তালুকদার।

এ সময় বিভিন্ন আসামির জন্য বিভিন্ন আইনজীবী শুনানি করতে গেলে এজলাসে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। মাসুদ আহমেদ তালুকদার সবার পক্ষে নিজেই শুনানি করে দিচ্ছেন বলার পর অন্য আইনজীবীরা শান্ত হন। পরে এজাহারের বক্তব্য খণ্ডন করে বক্তব্য দেন মাসুদ আহমেদ তালুকদার। তিনি বলেন, ‘মামলার প্রকৃত ঘটনার সঙ্গে দণ্ডবিধি ও বিস্ফোরক আইনের সংশ্লিষ্ট ধারার সম্পৃক্ততা পাওয়া যায় না। একজন সাংবাদিক বিস্ফোরকের ভিডিও ধারণ করেন। সেখানে দেখা যায় পুলিশ নিজেরাই ওই বিস্ফোরক বিএনপি কার্যালয়ে এনে রেখে যায়। সে কারণে মামলার ঘটনাটি বানানো। বিএনপির সমাবেশ বানচাল করার জন্য এই মিথ্যা মামলা।

শুনানিতে জামিনের বিরোধিতা করেন মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান কৌঁসুলি আবু আবদুল্লাহ, কেএম সাজ্জাদুল হক শিহাব, আজাদ রহমানসহ কয়েকজন আইনজীবী। দুপুর আড়াইটা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত এ শুনানি চলে। শুনানি শেষে জামিন নাকচ হয়ে গেলে মুখ্য মহানগর হাকিম আদালত প্রাঙ্গণে বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা মিছিল করেন।’

উল্লেখ্য, বিএনপির ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশ ঘিরে গত কিছুদিন ধরেই উত্তেজনা চলছে দেশের রাজনীতিতে। নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে এ সমাবেশ করতে চেয়েছিল বিএনপি। কিন্তু পুলিশ তাদের অনুমতি দিয়েছিল সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ব্যবহারের। এ নিয়ে অনড় অবস্থানে ছিল দুই পক্ষ। এর মধ্যে গত বুধবার বিএনপি কর্মীরা নয়াপল্টনে জড়ো হলে পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষের মধ্যে আহত স্বেচ্ছাসেবক দলের এক ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতার মৃত্যু হয় হাসপাতালে।

এরপর বিএনপি অফিসে অভিযান চালিয়ে হাতবোমা পাওয়ার কথা বলা হয় পুলিশের তরফ থেকে। গ্রেপ্তার করা হয় প্রায় পাঁচশ নেতাকর্মীকে। ওই ঘটনায় মোট চারটি মামলা করে পুলিশ। এর মধ্যে পল্টন থানার মামলায় ৪৭৩ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতপরিচয় আরও দেড় থেকে দুই হাজার লোককে সেখানে আসামি করা হয়।