নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশে তৈরি মোড়কজাত ভোগ্যপণ্য রপ্তানির বড় বাজার হতে পারে ইউরোপ। এজন্য বাংলাদেশে প্রযুক্তি জ্ঞান, শিক্ষার মান উন্নয়ন ও কারিগরি শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ করতে পারে দেশগুলো। এছাড়া বাংলাদেশ-জার্মানি কূটনৈতিক সম্পর্কের মধ্য দিয়ে জলবায়ু পরিবর্তনের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মোকাবিলা করা সম্ভব হবে বলে মনে করেন আলোচকরা। গতকাল রাজধানীর এক হোটেলে সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত ‘জার্মানি-বাংলাদেশ কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছরপূর্তি উদ্যাপন’ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তারা।
অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি ছিলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়-সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান ও সাবেকমন্ত্রী লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান ও বাংলাদেশে নিযুক্ত জার্মানির রাষ্ট্রদূত আখিম ট্র্যোস্টার। প্যানেল আলোচক ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ইইউ’র রাষ্ট্রদূত চার্লস হুইটলি, সাবেক রাষ্ট্রদূত ও সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজের উপদেষ্টা নাসিম ফেরদৌস, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক (পশ্চিম ইউরোপ ও ইইউ) ফাইয়াজ মুরশিদ কাজী, বাংলাদেশ-জার্মান চেম্বারের সভাপতি ও বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজের সিনিয়র সহসভাপতি আবদুল মুক্তাদির প্রমুখ।
রাষ্ট্রদূত আখিম ট্র্যোস্টার বলেন, বিগত ৫০ বছরে বাংলাদেশ-জার্মানি উভয় দেশেরই ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে। বাংলাদেশ শিগগিরই মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে। আসন্ন দিনগুলোয় বাংলাদেশ কীভাবে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করবে, সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। জার্মানি ও বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক সবসময় বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। জলবায়ু পরিবর্তনের মতো বিষয়ে জার্মানি সবসময় বাংলাদেশের পাশে থেকে কাজ করে যাবে।
অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী বক্তব্য দেন ফ্রেডরিখ-অ্যাবার্ট-স্টিফটাং বাংলাদেশের আবাসিক প্রতিনিধি ফেলিক্স কোলবিৎজ এবং সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজের চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী। মূল বক্তব্য দেন সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মো. তৌহিদ হোসেন।
সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজের চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, পূর্ব জার্মানি ইউরোপীয় দেশগুলোর মধ্যে সর্বপ্রথম বাংলাদেশকে স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিল। সেই শুরু থেকে এখন পর্যন্ত জার্মানির সঙ্গে বাংলাদেশের একটি প্রাণবন্ত ও শক্তিশালী অর্থনৈতিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছে।
সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে জার্মানি ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) উভয়েরই গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। ’৭০ ও ’৮০-র দশকে এই সম্পর্ক ছিল কেবলই দাতা ও গ্রহীতার, যেখানে জার্মানি এবং ইইউ থেকে বাংলাদেশ সাহায্য-সহযোগিতা নিয়ে চলত। কিন্তু ১৯৯০ সালের পর এই সম্পর্কের মাত্রা বদলে গেছে। রপ্তানির দিক দিয়ে জার্মানি বর্তমানে বাংলাদেশের দ্বিতীয় ‘লক্ষ্যদেশে’ পরিণত হয়েছে। একই সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে জার্মানি ও ইইউ’র সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আলোচনা করতে হবে।
তিনি মানবসম্পদ-সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জের কথা উল্লেখ করে বলেন, বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী হয়ে উঠলেও এর ভিত্তি এখনও মজবুত নয়। বৈদেশিক আয়, পোশাকশিল্প খাত এবং কৃষি খাতেই বাংলাদেশ বর্তমানে সবচেয়ে বেশি সক্ষমতা অর্জন করেছে। তবে দক্ষ মানবসম্পদের অভাবে বাংলাদেশের অর্থনীতির ভিত্তি মজবুত হচ্ছে না।
তিনি বলেন, ইইউ’র জন্য বাংলাদেশ ভোগ্যপণ্য উৎপাদনের একটি বড় উৎস হয়ে উঠতে পারে। জলবায়ু পরিবর্তনের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বাংলাদেশকে সহায়তা দিতে পারে জার্মানি।
চার্লস উইটলি বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন অনেক কাজ করেছে। আমরা চাই এর সমাধান হোক। এজন্য কাজ করছে ইইউ। বাংলাদেশের বিনিয়োগের সম্ভাবনা রয়েছে। সদস্য রাষ্ট্রগুলো এসব বিবেচনা করছে।