Print Date & Time : 20 July 2025 Sunday 4:40 am

জিএম কাদেরকে চেয়ারম্যান মানছেন না রওশন

নিজস্ব প্রতিবেদক: হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুর পর তার ভাই জিএম কাদেরকে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ঘোষণা করা হলেও তা মানতে রাজি নন দলের জ্যেষ্ঠ কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ। তিনি বলছেন, জিএম কাদেরকে চেয়ারম্যান ঘোষণা করার আগে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্যদের মতামত নেওয়া হয়নি। ফলে জিএম কাদের এখনও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানই আছেন।
জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় উপনেতার প্যাডে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জাতীয় পার্টির গঠনতন্ত্রের নিয়ম তুলে ধরে ওই দাবি করেছেন এরশাদপতœী রওশন।
প্রসঙ্গত, এরশাদ জীবিত থাকাকালেই জাতীয় পার্টির পদ বণ্টন ও অন্যান্য সিদ্ধান্ত নিয়ে জিএম কাদেরের সঙ্গে রওশনের দ্বন্দ্ব ছিল প্রকাশ্য। অসুস্থ থাকা অবস্থায় এরশাদ গত এপ্রিলে তার ভাই জিএম কাদেরকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করেন। এর পর থেকে রওশন এরশাদ ও তার ঘনিষ্ঠ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতাকে দলীয় কর্মসূচিতে দেখা যাচ্ছিল না।
গত ১৪ জুলাই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদ। তার চার দিনের মাথায় এক সংবাদ সম্মেলনে পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবে জিএম কাদেরের নাম ঘোষণা করা হয়। এরশাদের স্ত্রী রওশন ওই সংবাদ সম্মেলনেও উপস্থিত ছিলেন না।
দলের মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা সেদিন ওই ঘোষণা দিয়ে বলেন, মৃত্যুর আগে এরশাদই এ সিদ্ধান্ত দিয়ে গেছেন। এরপর গত শনিবার এরশাদের বড় ছেলে রাহগির আল মাহি সাদ এরশাদকে সঙ্গে নিয়ে গুলশান-২ নম্বরে ভাবি রওশনের বাসায় যান জিএম কাদের।
রওশন সেদিন পার্টির নতুন চেয়ারম্যান জিএম কাদেরকে আশীর্বাদ করেন বলে দলের প্রেস সচিব সুনীল শুভ রায় সাংবাদিকদের জানান। কিন্তু দুই দিনের মাথায় রওশনের স্বাক্ষরে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয় উল্টো কথা।
এতে বলা হয়েছে, ‘সম্প্রতি বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম মারফত জানতে পেরেছি, জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জিএম কাদেরকে চেয়ারম্যান হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে, যে সিদ্ধান্ত আদৌ কোনো যথাযথ ফোরামে আলোচনা করে গৃহীত হয়নি। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দায়িত্বপালনকালে জাতীয় পার্টির গঠনতন্ত্র ধারা ২০(২)-এর খ-এ দেওয়া ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবেন। যথা ‘মনোনীত ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান প্রেসিডিয়ামের সংখ্যাগরিষ্ঠদের মতামতের ভিত্তিতে দায়িত্ব পালন করবেন।’
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, ‘চেয়ারম্যানের অবর্তমানে ধারা ২০(২)-এর ‘ক’-কে উপেক্ষা করা যাবে না। আশা করি বর্তমানে যিনি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন, তিনি পার্টির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী পরবর্তী চেয়ারম্যান না হওয়া পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করবেন।’
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পার্টির ‘অনেক সিনিয়র নেতা’ রওশনের ওই বক্তব্যের সঙ্গে একমত। তাদের মধ্যে সাত প্রেসিডিয়াম সদস্য ও দুই এমপির নামও ওই সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যুক্ত করা হয়েছে। তারা হলেন প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সংসদ সদস্য আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম, প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান, সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকা, প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সংসদ সদস্য নাসরিন জাহান রত্না, প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সংসদ সদস্য মাসুদা এম রশীদ চৌধুরী, সংসদ সদস্য রওশন আরা মান্নান, প্রেসিডিয়াম সদস্য মীর আবদুস সবুর আসুদ ও প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন।
উল্লেখ্য, জাতীয় পার্টির নেতৃত্ব নিয়ে রওশন এরশাদ ও জিএম কাদেরের দ্বন্দ্ব বহু পুরোনো। ২০১৬ সালে এরশাদ তার ভাই জিএম কাদেরকে দলের কো-চেয়ারম্যান করলে তাতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন স্ত্রী রওশন এরশাদ। তখন দলে সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান পদ তৈরি করে এরশাদ তাতে আসীন করেন রওশনকে।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর এরশাদের গুরুতর অসুস্থতা আর নানা নাটকীয়তার মধ্য দিয়ে জাপার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পান জিএম কাদের। তখন থেকেই দলে রওশনপন্থি নেতাদের বিক্ষোভের মুখে পড়েন তিনি।