Print Date & Time : 5 September 2025 Friday 11:34 pm

‘জিরো থেকে হিরো’ হওয়া এক সুমনের গল্প

মোঃ রুবাইয়াদ ইসলাম, হাবিপ্রবি (দিনাজপুর): ছিলো না বড় ধরণের কোন মূলধন, কিন্তু তারপরও কঠোর পরিশ্রম আর চেষ্টায় সফল অনলাইন ব্যবসায়ী হিসেবে নিজেকে মেলে ধরেছেন মো. সুমন সরকার। মাত্র তিন মাসে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লুঙ্গি আর তোয়ালে বিক্রি করে তিনি এখন লাখপতি সেলার।

রংপুর বিভাগের সেরা উচ্চ বিদ্যাপীঠ হিসেবে খ্যাত হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) অর্থনীতি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী সুমন। লুঙ্গি. শাড়ি আর গামছার জন্য প্রসিদ্ধ সিরাজগঞ্জ জেলার বাসিন্দা সে।

পড়াশোনার পাশাপাশি সুমন গড়ে তুলেছেন নিজের অনলাইন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। সেখানে লুঙ্গি, তোয়ালে, পাঞ্জাবী, শাড়ী, থ্রী পিচ, শার্ট ইত্যাদি নানা পণ্য বিক্রি করে আয় করছেন সম্মানজনক টাকা। নিজের হাত খরচ চালানোর পাশাপাশি পরিবারেও সহযোগীতা করছেন। শুরুতে বন্ধুতের উৎসাহ তেমন না পেলেও, এখন সহপাঠীদের কাছে রীতিমত আইকন সে। শেয়ার বিজকে সুমন বলেছেন একেবারে জিরো থেকে তার হিরো হওয়ার কাহিনী।

২০২১ সালের শুরুর দিকের ঘটনা। করোনাকালীন সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় সুমন বসে ছিলেন বাড়িতে। অলস সময় কাটানোর ফাঁকে একদিন ভাবলেন নিজের জন্য কিভাবে এই সময়টা কাজে লাগানো যায়। ভাবলেন, নিজের ছোট ছোট আবদার পূরণ করার জন্যে বাবা মায়ের কাছে আর কত হাত পেতে চাইবেন? তাই অনেক ভেবে নিজের হাত খরচ মেটানোর জন্য বেছে নিলেন অনলাইন বিকি-কিনিকে। তৈরি করলেন সুখ-Sukh নামের একটি ফেসবুক পেইজ।

শুরুতে তেমন একটা ভালো সাড়া না পাওয়ায় নিরুৎসাহিত হয়ে যান সুমন। একসময় ভাবেন তাকে দিয়ে কিছু হবে না, বন্ধ করে দিবেন স্বপ্নে গড়া পেইজটা। কিছুদিন বসে থাকার পর যুক্ত হন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের ‘স্টুডেন্টস ই-কমার্স প্লাটফর্ম (সেপ)’ নামের একটি অনলাইন গ্রুপে। সেখানে অনলাইন কেনাবেচা নিয়ে বিভিন্ন জনের নানান পোস্ট দেখে মনে সাহস যোগান সুমন। আবারও স্বপ্ন দেখেন সফল হবার। তখন থেকেই নব উদ্যমে লেগে পরেন নিজের অনলাইন ব্যবসা নিয়ে।

শেয়ার বিজকে সুমন বলেন, ‘অনলাইনে সবার পণ্য সেল দেখে নিজের মাঝে আগ্রহ তৈরী হতে থাকে। মনে হতো আমিও সবার মতো ভালো কিছু করতে পারবো। আর আমি আত্মবিশ্বাসী ছিলাম এই বলে যে, কোনো ব্যবসা শুরু করলে আমি সেটা জিরো থেকে শুরু করবো এবং সৎভাবেই পরিশ্রম করে উপার্জন করবো। শূণ্য পকেটে যাত্রা শুরু করে নিজের কিছু পুঁজি যোগানোর লক্ষ্য নিয়ে আমি এগিয়ে যাই। প্রথমে আমার এলাকার ঐতিহ্যবাহী গামছা, লুঙ্গি দিয়ে শুরু করেছিলাম। তাঁতী বাড়ির ছেলে হওয়ায় আমাদের বাসায় এবং আশেপাশে প্রচুর গামছা লুঙ্গি তৈরী হয়। এজন্য যে কোন জায়গা থেকেই আমি ছবি তুলে নিতে পারতাম। তারপর ছবিগুলো আমার পেজ এবং গ্রুপে পোষ্ট করতাম। আর অর্ডার আসলে কিছু লাভ রেখে বাসা থেকে বা অন্য কোথাও থেকে এনে কুরিয়ারে পাঠিয়ে দিতাম। এভাবে জিরো ইনভেস্টমেন্ট থেকে আমার বিজনেসের পথচলা শুরু হয়।’

সুমন আরও বলেন, ‘গত জুন মাস থেকে আবারো অনলাইনে পণ্য বিক্রি করার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকি। একপর্যায়ে জুলাই, আগস্ট এবং সেপ্টেম্বর; এই তিন মাসের মধ্যে লাখোপতি সেলার হয়ে যাই। এরপর থেকে আমার ব্যবসা থেকে মোটামুটি ভালোই লাভবান হচ্ছি এবং প্রতিমাসে পড়ালেখার পাশাপাশি একটা মিনিমাম পণ্য বিক্রি করে নিজের চাহিদাগুলো পূরণ করতে পারছি। প্রথমে অনেকেই কটু কথা বললেও তাদের কথাগুলোকে তেমন একটা গুরুত্ব দেইনি। আবার নিজের বন্ধুরাও অনেক সময় অনুপ্রেরণা না দিয়ে বরংচ অনুৎসাহ দিয়েছে; তবুও হাল ছাড়িনি আমি। আমার নিজের মতো করে এগিয়ে যেতে চেষ্টা করেছি। এক্ষেত্রে কিছু শুভাকাঙ্ক্ষী মানুষ আমার পাশে ছিল ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছের পরিচিতজনদের থেকে আত্ববিশ্বাস পেয়েছি। তবে সর্বদাই আর সবচেয়ে বেশি পরিবারের সাপোর্ট ছিল। বাবা-মা আমাকে অনেক উৎসাহ দিয়েছেন এবং বলেছেন ভালো কিছু করতে পারলে এগিয়ে যাও। আমিও তাদের কথায় অনুপ্রাণিত হয়ে লেগে থাকি এবং এভাবে একটু একটু করে আমার পুঁজিও বাড়তে থাকে। তারপর এসব পণ্যের সাথে সাথে অন্য মানুষগুলোর সাথে যোগাযোগ তৈরী করে আরো বিভিন্ন পণ্য সেল করা শুরু করি। পাঞ্জাবী, শাড়ী, থ্রী পিচ, শার্ট ইত্যাদি নতুন নতুন কালেকশন আনতে থাকি। তারপর আমার কিছু পুঁজি হলে নিজেই স্টক করে সেল দিতে থাকি।’

জীবনে সফলতা পেতে হলে ছাত্রজীবনেই চেষ্টা করা উচিত বলে মনে করেন সুমন। বিজনেস হোক বা অন্য কোন উদ্যোগ, ভালো কাজের মাধ্যমে ছাত্রজীবনেই স্বাবলম্বী হওয়ার প্রচেষ্টা শুরু করার জন্য সহপাঠীদের আহ্বান জানান তিনি।