Print Date & Time : 23 July 2025 Wednesday 8:35 pm

জীবদ্দশায় সম্মাননা প্রদানই কাম্য

কর্মের স্বীকৃতি সবাই চায়; কেউ পায়, কেউ পায় না। অনেকেই আছেন নীরবে-নিভৃতে নিজের কাজটা করতে পছন্দ করেন। কাজই তার হয়ে কথা বলবে, এ বিশ্বাসটা হaদয়ে পোষেন; কিন্তু তা আর হয় না। কাজ যেমন মুখ ফুটে কথা বলতে পারে না, তেমনই কাজের সুফল ভোগ করা দেশ ও জাতিও পারে না সে কাজের মূল্যায়ন করতে, কাজের হয়ে কথা বলতে। বিশেষ করে বাংলাদেশে গুণ ও গুণীর কদর খুব কমই হয়। কতই না জ্ঞানী, গুণী ও বিজ্ঞজন অনাদর আর অবহেলা সয়ে দিনযাপন করছেন, পরপারে পাড়ি জমিয়েছেন। কেউ তাদের পাশে দাঁড়াননি, যখন দাঁড়ানোর প্রয়োজন ছিল।

বাংলাদেশে গুণীর কদর হয় না, এটা স্বীকৃত বিষয়। একেবারেই যে হয় না, তা নয়; তবে কদরের জন্য বিশেষ কেউ হতে হয়। আর এই বিশেষ কেউ হতে হলে শুধু জ্ঞানী-গুণী হলেই হয় না; গুণের পাশাপাশি ধরনা দিতে হয় অনেক, সংশ্লিষ্টদের আস্থাভাজন হতে হয় তবেই জুটতে পারে জীবিত থাকাবস্থায় স্বীকৃতি। আবার অনেক সময় দেখা যায়, গুণী ব্যক্তিটি শারীরিকভাবে নিস্তেজ হয়ে পড়লে কোনো বিশেষ পরিচয়েও তার মূল্যায়ন করা হয় না। একসময়কার জনপ্রিয় বা প্রভাবশালী ব্যক্তিটির বার্ধক্য হয়ে যায় দুর্বিষহ। যথাযথ সম্মান ও মানমর্যাদা তিনি পান না। বেঁচে থাকতে নিজ কর্মের জন্য তিনি সমাদৃত হন না।

বেঁচে থাকতে অনাদর, অবহেলা ও স্বীকৃতিহীন জীবনযাপন করে গেলেও মরণের পর মৃত ব্যক্তিকে নিয়ে আমাদের আহ্লাদিপনার শেষ নেই। মরণোত্তর পুরস্কারেও ভূষিত করা হয়, দেওয়া হয় নানা পদক ও সম্মাননা। মানুষের মুখে মুখে থাকে  তার নাম, তার কর্মের গুণগান। কতই না কাব্যিক ভাষায় মৃত ব্যক্তিকে স্মরণ করা হয়। জীবিত থাকতে যত না আলোচনা হতো, তার চেয়ে শতগুণ বেশি আলোচিত ও প্রশংসিত হন মৃত্যুর পর। যদিও গুণী ও ভালো মানুষ হলে মৃত্যুর পরও মানুষের ভালোবাসা পাবেন, তা-ই কাম্য। কিন্তু বেঁচে থাকতে নানা সমালোচনার শিকার হওয়া, আর্থিক অসহায়ত্বে ও চিকিৎসাজনিত প্রয়োজনে সহায়তা না পেয়ে মৃত্যুবরণ করার পর প্রশংসায় ভাসিয়ে দেওয়া, শোকবার্তা দেওয়া ও সম্মাননা দেওয়ার মতো উপহাস ও নিষ্ঠুরতা আর কিছুই হতে পারে না।

বাংলাদেশে বিভিন্ন মাধ্যমে অনেক গুণী ব্যক্তি বার্ধক্যে কারও সহায়তা বা সহমর্মিতা পাননি, অর্থকষ্টে মানবেতর জীবনযাপন করেছেন এবং অর্থাভাবে সঠিক চিকিৎসার অভাবে মৃত্যুবরণ করেছেন। কেউ কেউ তাদের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিলে ‘তারা সহযোগিতা কেন নিচ্ছেন’ বলে অপদস্ত করতেও আমরা পিছপা হই না।

আমাদের দেশে গুণীজনদের এতই অবহেলা করা হয় যে, কোনো একজনকে সরকার সহায়তা দিলে আমরা অন্য বঞ্চিতদের টেনে আনি, যদিও এ সমস্যাটা এতই প্রকট যে, নাগরিক হিসেবে আমাদের সংযত থাকাটাও কঠিন হয়ে যায়। আবার নাগরিকদের জায়গা থেকেও গুণীজনদের অবহেলা করা হয়। যার কর্মে মুগ্ধ হই, অনুপ্রাণিত হই, এগিয়ে যাই তার খোঁজখবর নিই না, কেমন আছে জানতে চাই না। কিন্তু মরে গেলে প্রশংসায় ভাসিয়ে দিই, সম্মানিত করার দাবি তুলি। কেন জীবিত থাকতে মূল্যায়ন করা হয়নি সেজন্য দায়িত্বশীলদের দোষারোপ করি; নিজেদেরও ন্যূনতম দায়িত্ব ছিল, তা মনে করি না।

যদিও সবাই স্বীকৃতির জন্য কাজ করেন না, তবুও বলতে হয়, জীবদ্দশায় কাজের স্বীকৃতি পেলে ব্যক্তিকে সম্মান করা হয়। এতে পরবর্তী প্রজন্ম ভালো কাজে উৎসাহিত হবে। সম্মান ও প্রতিদান দেওয়া যেন মরণোত্তর না হয়এটিই প্রত্যাশা।

জুবায়ের আহমেদ

শিক্ষার্থী

বিজেম, ঢাকা