Print Date & Time : 25 October 2025 Saturday 11:57 am

জীবনকে গতিশীল রাখতে চাই যানজটমুক্ত নগরী

মোস্তফা কামাল : বিড়ম্বনার আরেক নাম যানজট; যা এখন চট্টগ্রামবাসীকে ভোগচ্ছে তীব্রভাবে। দেশের অগ্রগতি থামিয়ে দিচ্ছে এই ভয়ংকর সমস্যা। যানজটের কারণে যা সময়ক্ষেপণ ঘটছেÑঅর্থনীতির বিচারে তার ক্ষয়ক্ষতি ভয়াবহ। এ সমস্যা উৎপাদনশীলতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। দেশের রপ্তানি বাণিজ্যকে অনিশ্চিত করে তুলেছে। বিদেশিরা বাংলাদেশের রাজধানীকে অস্বস্তির দৃষ্টিতে দেখে যানজটের কারণে। রাজধানীর পর চট্টগ্রাম তার ভয়াবহতা লক্ষণীয়। বলা যেতে পারে, যে সব কারণে বাংলাদেশ বিদেশি বিনিয়োগ বিনিয়োগ বিঘিœত হচ্ছে যানজট তার অন্যতম। প্রায় ৭০ লাখ জন্যসংখ্যা অধ্যুষিত চট্টগ্রাম মহানগরী অন্যতম মেগাসিটি হিসেবে প্রতিষ্ঠার বড় অন্তরায় যানজট দীর্ঘ সময় যানজটে আটকে গেলে অনেক সুস্থ মানুষও অসুস্থ হয়ে পড়ে। যানজটের কারণে মুমূর্ষু রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যেতে সমস্যা হয়। বস্তুত যানজটের কারণে চট্টগ্রামবাসীর সামগ্রিক জীবনধারাই পাল্টে গেছে। এক সময় এ শহরে ৩০ মিনিটের দূরত্ব অতিরিক্ত করতে অনেক সময় চলে যায়। এখন অবস্থা এতটাই ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে, সামান্য দূরত্ব অতিক্রম করতেও কত সময় লাগবে আগের থেকে বেশি। ফলে গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছাড়া মানুষ এখন আর সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগদানের কথা চিন্তাও করে না। এ বিচ্ছিন্নতা যে সমাজে ভয়াবহ নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে, এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা বারবার সতর্ক করে দিয়েছেন।

গত বছরের একটি প্রতিবেদনে দুঃখসহ গরম, তীব্র যানজন/রমজানে নাগরিক জীবনের চাপ, শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, প্রচণ্ড গরম, সঙ্গে তীব্র যানজট, স্থবির নগরীতে হাঁসফাঁস করছে মানুষ। অসহনীয় দুর্ভোগে পথাচলা দায়। মোড়ে মোড়ে পুলিশ আছে। কিন্তু যানজট সামলানোর চেয়ে মোটরসাইকেল আটকের দিকে নজর বেশি থাকা পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠেছে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত যানজটে স্থবির থাকে নগরী। সঙ্গে পাল্লা গরমের তীব্রতা বাড়ায় মানুষের ভোগান্তি সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে।

সাম্প্রতিক সময়ে নগরীর যানজট পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। মোড়ে মোড়ে তৈরি হয়েছে যানজট।  ব্যস্ততম মোড়ের পাশাপাশি  স্কুল-কলেজ এবং শপিং মলগুলোকে কেন্দ্র করেও তৈরি হয়েছে যানজট। এক-দুই কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে ১ ঘণ্টা সময় লেগে যাচ্ছে। প্রচুর পুলিশ রাস্তার মোড়ে মোড়ে দায়িত্ব পালন করলেও গাড়ি চলাচল নির্ঝঞ্ঝাট হচ্ছে না। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে স্থবির হয়ে পড়ে নগরী। ইফতারের আগে পরিস্থিতি অসহনীয় হয়ে ওঠে। তীব্র যানজটের সঙ্গে বাড়তি আপদ হিসেবে দেখা দেয় অসহনীয় গরম।

ট্রাফিক আইন না মানা, পরিকল্পনার অভাব, ফুটপাত দখল, প্রাইভেটকারের সংখ্যা বিদ্যুৎ গতিতে বৃদ্ধি পাওয়া যানজটের অন্যতম প্রধান কারণ বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। তবে সাম্প্রতিক সময়ে যানজটের কারণ হিসেবে ভাঙাচোরা রাস্তা এবং কারণে অকারণে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়িকেও দায়ী করা হচ্ছে। যেখানে-সেখানে পার্কিং, ফুটপাত দখল করে দোকান বসানো ইত্যাকার সমস্যা তো বহু পুরোনো। কিছুতেই নগরীর যানজট সমস্যা সমাধান হচ্ছে না। যানজট সমস্যা দিনদিন জটিল হচ্ছে।

যানজন নিরসনে বাংলাদেশ সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। ফ্লাইওভার, ওভার ব্রিজ নির্মাণ করে রাস্তার পরিধি বাড়ানো হচ্ছে। আরও পরিকল্পনা করা হচ্ছে উড়াল সেতু নির্মাণের। অধিকাংশ রাস্তাগুলো পাকা সড়কে রূপান্তর করা হচ্ছে। অনুন্নত ভাঙা ও খানাখন্দে পূর্ণ সড়কগুলোকে মেরামত করা হচ্ছে।  তবে নগরীর ট্রাফিক ব্যবস্থা উন্নয়নে নগর-পরিকল্পনাবিদরা বেশকিছু পরামর্শ দিয়েছেন। এ সুপারিশগুলোর মধ্যে কাউন্টারভিত্তিক বাস ও হিউম্যান হলার চালু, হকার উচ্ছেদ, রেজিস্ট্রেশনবিহীন রিকশা, সিএনজি ও টমটম উচ্ছেদ, নামি-দামি কয়েকটি স্কুলের শিক্ষার্থী, ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ডাক্তার আর রোগীদের প্রাইভেটকার পার্কিংয়ে কড়াকড়ি উল্লেখযোগ্য। এসব সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি  রাস্তাঘাটকে যানজটমুক্ত করতে আরও কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা অভিমত দিয়েছেন। তার মধ্যে  রয়েছেÑছোট রাস্তাগুলোকে  যথাসম্ভব দীর্ঘ ও প্রশস্ত করতে হবে, যত্রতত্র পার্কিং বন্ধ করতে হবে, লাইসেন্সবিহীন যানজট বা অবৈধ যানচলাচল বন্ধ করতে হবে, ট্রাফিক আইন আরও কার্যকরী ও ট্রাফিক পুলিশের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে হবে। তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। অপরিকল্পিত বাড়িঘর নির্মাণ বন্ধ করতে হবে, রাস্তাগুলোকে বহু লেনবিশিষ্ট করে ধীরগতির ও দ্রুতগতির যানবাহনের জন্য আলাদা লেনের ব্যবস্থা করতে হবে ইত্যাদি।

যানজন জনজীবনে শুধু অস্বস্তি আর দুর্ভোগের কারণ নয়, বরং তা অর্থনৈতিকভাবে জাতীয় অর্থনীতে দুর্বল করে দেয়। তাই আধুনিক গতিময় জীবনকে আরও গতিশীল করতে যানজটমুক্ত জীবনের কোনো বিকল্প নেই।

শিক্ষার্থী

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়