ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা। ১ জানুয়ারি ২০২১ এ পদে যোগ দেন। এর আগে তিনি ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এএমডি) পদে কর্মরত ছিলেন।
মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা ইসলামী ব্যাংকের করপোরেট ইনভেস্টমেন্ট উইং, ইনভেস্টমেন্ট (ক্রেডিট) কমিটি, ক্রেডিট রিস্ক ম্যানেজমেন্ট কমিটি এবং রিক্রুটমেন্ট অ্যান্ড প্রমোশন কমিটির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এর আগে তিনি ব্যাংকের ডিএমডি হিসেবে ইন্টারন্যাশনাল ব্যাংকিং উইং এবং রিটেইল ইনভেস্টমেন্ট উইং প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ১৯৮৬ সালে ইসলামী ব্যাংকে প্রবেশনারি অফিসার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। ৩৭ বছরের অভিজ্ঞতাসমৃদ্ধ দক্ষ ও পেশাদার এ ব্যাংকার কর্মজীবনে ব্যাংকের বিভিন্ন শাখা ও জোনপ্রধান এবং প্রধান কার্যালয়ের বিভিন্ন উইং ও ডিভিশন প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। দেশ-বিদেশে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি দি ইনস্টিটিউট অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশের ডিপ্লোমায়েড অ্যাসোসিয়েট। তিনি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পেশাগত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে রিসোর্স পারসন হিসেবে নিয়মিত অংশগ্রহণ করে আসছেন। তিনি ব্যাংকিং ও অর্থনীতি বিষয়ে ট্রেইনিং ও সেমিনারে অংশ নিতে থাইল্যান্ড, বাহরাইন, ইতালি, শ্রীলংকা, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, মরক্কো, ইন্দোনেশিয়া ও সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশ সফর করেন।
শেয়ার বিজ কড়চা: আপনাদের গ্রাহকদের ভোক্তা বিনিয়োগের চাহিদা কেমন?
মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা: বর্তমানে মানুষের জীবনমান উন্নয়ন এবং চাহিদার পরিবর্তন ঘটেছে। গ্রাহকদের ভোক্তা বিনিয়োগের চাহিদা অনেক। ইসলামী ব্যাংকের মোট বিনিয়োগের প্রায় ৮ শতাংশ ভোক্তা বিনিয়োগ করা হয়েছে। এ খাতে ১৬টি স্কিমের আওতায় মোট ১০ হাজার ৮০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে। ইসলামী শরিয়াহ মোতাবেক ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালিত হওয়ায় অন্যান্য ব্যাংক থেকে ইসলামী ব্যাংকের বিনিয়োগের নিয়মও বেশ আলাদা। বাণিজ্যিক ব্যাংকে এ বিনিয়োগের নাম হলো পার্সোনাল লোন। ইসলামী ব্যাংকের ভোক্তা বিনিয়োগগুলো পণ্যের ধরন অনুযায়ী বিভিন্ন নামে রয়েছে। যে কেউ ব্যক্তিগত প্রয়োজনে ওই বিনিয়োগ গ্রহণ করে ভোগ্য পণ্য যেমন গাড়ি, ফ্রিজ ও কম্পিউটারসহ নানাবিধ পণ্য ক্রয় করতে পারবেন।
শেয়ার বিজ কড়চা: চাহিদার ধরনের পরিবর্তন আসছে কি না যেহেতু সবকিছুর দাম বেড়ে গেছে।
মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা: পারিপার্শ্বিক, বৈশ্বিক এবং প্রযুক্তির উন্নয়নের কারণে মানুষের চাহিদার ধরনের কিছুটা পরিবর্তন এসেছে। বর্তমানে সবাই প্রযুক্তির সঙ্গে মানিয়ে চলতে বিভিন্ন জিনিসপত্র ক্রয় করছে। জলবায়ুগত পরিবর্তনের কারণে ভোক্তাদের কাছে এসি ও ফ্রিজের চাহিদা ব্যাপক হারে বেড়েছে। আগে গৃহস্থালির জিনিসপত্র কেনার জন্য কনজ্যুমার বিনিয়োগ বেশি হতো। বর্তমানে তার পরিবর্তে জীবনমান উন্নয়ন করার লক্ষ্যে মানুষ প্রযুক্তিনির্ভর পণ্য ক্রয়ে পার্সোনাল বিনিয়োগের দিকে আগ্রহী হয়ে উঠছে।
শেয়ার বিজ কড়চা: বিনিয়োগ মুনাফা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। সেটা বাড়ানো হয়েছে কি না?
মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা: ইসলামী ব্যাংক সব বিনিয়োগ কার্যক্রমে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালার সঙ্গে সংহতি রাখে এবং পাশাপাশি গ্রাহকের সক্ষমতার বিষয়টি বিবেচনা করে। সামগ্রিকভাবে ব্যাংক খাতের বিনিয়োগের হারের দিকে লক্ষ্য রেখে এ ব্যাংক সহনীয় বিনিয়োগ মুনাফার হার নির্ধারণ করে থাকে। বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের জানুয়ারি থেকে জুন ২০২৩ মনিটরিং পলিসিতে ভোক্তা বিনিয়োগের বিপরীতে মুনাফা সর্বোচ্চ ১২ শতাংশ পর্যন্ত নির্ধারণ করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ইসলামী ব্যাংক এ খাতে মুনাফার হার পুনর্নির্ধারণ করেছে।
শেয়ার বিজ কড়চা: বিনিয়োগের হার বাড়ানোটা কি যৌক্তিক ছিল?
মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা: ব্যাংকগুলোর আমানত বিনিয়োগের বিষয়গুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নির্ধারণ করা হয়। গ্রাহকদের জমা টাকার বিপরীতে প্রদান ও ব্যাংকের পরিচালন ব্যয়সহ সার্বিক আমানতের ব্যয় বেশি হওয়া এবং মূল্যস্ফীতির কারণে গ্রাহকদের অধিক মুনাফা প্রাপ্তির প্রত্যাশা সব মিলিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিনিয়োগে মুনাফার নতুন হার নির্ধারণ করেছে। সবদিক বিবেচনা করে বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের মনিটরি পলিসিতে এ হার নির্ধারণ করে দিয়েছে। একই কারণে ইসলামী ব্যাংক মুনাফার হার বাড়ানোকে যৌক্তিক মনে করছে। মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় আমানতের বিপরীতে লভ্যাংশ বৃদ্ধি করার প্রয়োজনীয়তা বিবেচনা করে বিনিয়োগের হারও বাড়ানো যৌক্তিক বলে মনে করি।
শেয়ার বিজ কড়চা: অনেক ব্যাংকে ভোক্তা বিনিয়োগ নিতে গেলে অনৈতিক খরচ গুনতে হয়। ইসলামী ব্যাংকে এমন কোনো সমস্যা আছে কি না?
মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা: বাংলাদেশ ব্যাংকের শিডিউল অব চার্জের বাইরে কোনো অতিরিক্ত খরচ আদায় করার সুযোগ নেই। ইসলামী ব্যাংকের বিনিয়োগ নিতে কোনো অনৈতিক খরচ বহন করতে হয় না। এ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সততা ও আন্তরিকতার কারণে গ্রাহকরা কোনো প্রকার অতিরিক্ত খরচ ছাড়াই বিনিয়োগ পেয়ে থাকেন।
শেয়ার বিজ কড়চা: বিনিয়োগের পরিধি বাড়ানোর জন্য কোনো পরিবর্তন আসছে কি না?
মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা: আগে ইসলামী ব্যাংকে বাই-মুয়াজ্জাল ও এইচপিএসএম পদ্ধতিতে ভোক্তা বিনিয়োগ কার্যক্রম পরিচালিত হতো। গ্রাহকের চাহিদা মাথায় রেখে বিনিয়োগের পরিধি বাড়ানোর জন্য বিনিয়োগের ধরনে পরিবর্তন আনা হয়েছে। ইসলামী ব্যাংক বর্তমানে উপরোক্ত পদ্ধতির পাশাপাশি ফরোয়ার্ড ইজারা প্রয়োগ করছে। সাম্প্রতিক সময়ে নতুন এ পদ্ধতির আওতায় কিছু নতুন প্রোডাক্ট চালু করা হয়েছে। যার সুফল গ্রাহকরা ইতোমধ্যে পাওয়া শুরু করেছে। আমাদের বিনিয়োগের যে পরিধি আছে তার আওতায় বিনিয়োগের সব ধরন রয়েছে। ইসলামী ব্যাংককে বিনিয়োগের ধরনের পাশাপাশি শরিয়াহর বিষয়টিও দেখতে হয়। তাই চাইলেই ধরন পরিবর্তন করা যায় না।
শেয়ার বিজ কড়চা: ভোক্তা বিনিয়োগ বিতরণে কাদের গুরুত্ব দিচ্ছেন?
মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা: ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে মাকাসিদ এ শরিয়াহ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। শ্রেণি-বর্ণ নির্বিশেষে সব মানুষের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করছে এ ব্যাংক। চাকরিজীবী ছাড়াও অন্যান্য সব পেশার গ্রাহকদের মধ্যে ব্যাংকিং নিয়মাচার পরিপালন করে ভোক্তা বিনিয়োগ করা হয়। এক্ষেত্রে কোনো বিশেষ শ্রেণি বা পেশাকে গুরুত্ব দেয়া হয় না। ভোক্তা বিনিয়োগের ক্ষেত্রে শুধু প্রকৃত উপকার ভোগীদেরকেই গুরুত্ব দেয়া হয়।
শেয়ার বিজ কড়চা: ভোক্তা বিনিয়োগের প্রবৃদ্ধি কেমন? এ বাজার কতটা সম্ভাবনাময়?
মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা: ইসলামী ব্যাংক ইতোমধ্যে দেশে ভোক্তা বিনিয়োগ বিতরণে সুনাম অর্জন করেছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মধ্যবিত্ত ও নি¤œবিত্ত গ্রাহকগণই ভোক্তা বিনিয়োগ নিয়ে নিজেদের প্রয়োজন পূরণ করে থাকেন। ইসলামী ব্যাংকের ভোক্তা বিনিয়োগের প্রবৃদ্ধি ভালো। ভবিষ্যতে এ খাতটি আরও সম্ভাবনাময় হবে বলে আশা করছি। এসি, ফ্রিজ, কম্পিউটার ও স্বর্ণালঙ্কারসহ নানা ধরনের ইলেকট্রনিক ও ভোগ্য পণ্যসামগ্রী ক্রয়ের জন্য এ বিনিয়োগের চাহিদা অনেক। চাহিদার এ বিষয়টি মাথায় রেখে ইসলামী ব্যাংক প্রতিনিয়ত এ বিনিয়োগ বৃদ্ধি করছে।
শেয়ার বিজ কড়চা: এ খাতে তো খেলাপি খুব কম। এটা কি ব্যাংকগুলোকে ভোক্তা বিনিয়োগের দিকে ঝুঁকতে উৎসাহিত করছে কি না?
মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা: ভোক্তা বিনিয়োগে খেলাপি কম, আদায়ের হার ভালো, এটা যেমন ইতিবাচক দিক তেমনি নেতিবাচক দিক হলো বিনিয়োগের ব্যয় অন্যান্য বিনিয়োগের তুলনায় অনেক বেশি। কল্যাণমুখী ব্যাংকিং ধারার প্রবর্তক এই সেøাগানকে ধারণ করে গ্রাহকদের জন্য বৃহত্তর কল্যাণ ছড়িয়ে দেয়ার লক্ষ্যে বিনিয়োগের পরিচালন ব্যয় বেশি হওয়া সত্ত্বেও ভোক্তা বিনিয়োগে গুরুত্ব দিয়ে যাচ্ছে ইসলামী ব্যাংক। এ বিনিয়োগগুলো ব্যক্তিগত জামিনদার এবং অ্যাসেট বেইজড হওয়ার কারণে খেলাপি হওয়ার সম্ভাবনা কম। করপোরেট বিনিয়োগের সঙ্গে সমন্বয় রেখে এবং বার্ষিক পরিকল্পনা মোতাবেক এ কর্মসূচি প্রণয়ন করা হয়।
শেয়ার বিজ কড়চা: ভোক্তা বিনিয়োগের জন্য নতুন কোনো প্রোডাক্ট আনার পরিকল্পনা আছে কি না?
গ্রাহকের বর্ধিত চাহিদা ও ক্রমপরিবর্তনশীল ধরন বিবেচনায় ইসলামী ব্যাংক ভোক্তা বিনিয়োগে নতুন নতুন প্রোডাক্ট চালু করেছে। স্বপ্ন কুঠির, স্বপ্ন যাত্রা, স্বপ্ন বুনন এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষা নামে আমাদের নতুন ৪টি প্রোডাক্ট ইতোমধ্যে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ভবিষ্যতে গ্রাহকের চাহিদার কথা বিবেচনায় নিয়ে আরও নতুন প্রোডাক্ট নিয়ে আসার পরিকল্পনা রয়েছে।