Print Date & Time : 3 August 2025 Sunday 2:52 pm

‘জীবিকার তাগিদে’ লকডাউনেও খুলছে দোকানপাট

নিজস্ব প্রতিবেদক: মহামারির বিস্তার ঠেকাতে সরকার ঘোষিত ‘কঠোর লকডাউনে’ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ এড়িয়েই দোকানপাট খোলা হচ্ছে। রাজধানীর প্রধান সড়ক আর অলিগলিতে মানুষের চলাচলও বেড়েছে।

সকালে টহল পুলিশ, সেনা কিংবা বিজিবি সদস্যদের কম দেখা যাওয়ায় অনেকে দোকানপাট খুলছেন সুযোগ বুঝে। তারা বলছেন, বেলা ১১টার আগে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে মাঠে তৎপর হতে দেখা যায় না।

ঢাকার মোহাম্মদপুরে ইলেকট্রনিকসের একজন ব্যবসায়ী বৃহস্পতিবার দোকান খোলেন সকাল ৭টায়। পরিচিতি ক্রেতাদের তিনি বলে রেখেছেন, তারা যেন সাড়ে ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে আসেন।

বিধিনিষেধের বিষয়ে প্রশ্ন করতেই ওই ব্যবসায়ী বললেন, আমার ব্যাংক ঋণ অনেক। ব্যবসা না করলে শোধ করব কীভাবে?

এ এলাকার হার্ডওয়্যার ব্যবসায়ী সালাম মিয়া দোকানের অর্ধেক শাটার খুলে বাইরে এক কর্মচারীকে তালা চাবি দিয়ে রেখেছেন যেন পুলিশ এলে শাটার নামিয়ে তালা লাগিয়ে দেয়।

তিনি বলেন, কাস্টমার জেনে গেছে এভাবেই কিনতে হবে। ফলে অনেক সময় পুলিশের কারণে কাস্টমার ভেতরে রেখেই বাইরে থেকে কর্মচারী তালা লাগিয়ে দেয়।

মিরপুর এলাকার অলিগলিতে প্রায় সব ধরনের দোকানই খুলে গেছে। বেড়েছে মানুষের আনাগোনাও, যাদের অনেকেই স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা করছেন না।

লকডাউনের অষ্টম দিন বৃহস্পতিবার সকালে মিরপুরের মুসলিম বাজারে খেলনার দোকান, ফটোকপির দোকান, ক্রোকারিজ পণ্যের দোকানসহ প্রায় সবকিছুই খোলা দেখা যায়।

কোনো কোনো দোকানের শাটার অর্ধেক খোলা। কেউ কেউ আবার দোকানের বাইরে দাঁড়িয়ে নজর রাখছেন, পুলিশ আসে কি না।

বাজারের আতিয়া কসমেটিকসের মালিক আব্দুর রশিদকে শাটার কিছুটা খোলা রেখে বাইরে বসে থাকতে দেখা যায়। তিনি বলেন, সবাই-ই দোকান খুলছে, তাই আজই প্রথম খুললাম। কিন্তু ভয়ও হচ্ছে। মাঝে মাঝেই পুলিশ আসে। জরিমানা করে, ধরে নিয়ে যায়। পুলিশ এলে যাতে চলে যেতে পারি দ্রুত, সে ব্যবস্থা নিচ্ছি, মানসম্মান তো হারানো যায় না।

এ দোকানে মাস্ক ছাড়াই কেনাকাটা করতে এসেছিলেন পল্লবীর এক বাসিন্দা। জানতে চাইলে তিনি বললেন, মাস্ক পকেটে আছে। জরুরি কাজেই বের হয়েছিলাম। দোকান চোখে পড়ায় আসলাম। এখনই চলে যাব।

পাশেই হাঁড়ি-পাতিল বিক্রি করছিলেন আব্দুল হালিম। তিনি বলেন, পেট চালাতে তো দোকান খুলতেই হবে। পুলিশ এলে সবার যা গতি হবে, আমারও তাই হবে।

ভাই ভাই গিফট কর্নারের বিক্রেতা সৌরভ বললেন, লকডাউন চললেও মানুষের অনুষ্ঠান তো থেমে নাই। এখন বড় বড় শপিংমল বন্ধ। সেজন্য বাচ্চাদের আইটেমগুলো একটু বিক্রি হবে, এ কারণেই পেছনের শাটার খোলা রাখছি।

সকাল থেকে রামপুরা, হাজীপাড়া, মালিবাগ এলাকায় গলির ভেতরের বেশিরভাগ দোকান খোলা দেখা যায়। এসবের মধ্যে বিধিনিষেধের তালিকায় থাকা সেলুন, ইলেক্ট্রিক যন্ত্রপাতি, বই-খাতা, এমনিক চা-পানের দোকানও ছিল।

এলাকায় পুলিশের গাড়ি দেখলে দোকানের ঝাঁপ ফেলে সরে যান দোকানিরা। তবে এ এলাকার প্রধান সড়ক ডিআইটি রোডের দুইপাশের বেশিরভাগ দোকানপাট বন্ধ রয়েছে।

লকডাউনের অষ্টম দিনে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে যানবাহনের চাপ আরও বেড়েছে। যাত্রীবাহী বাস সিনজিচালিত অটোরিকশা না থাকলেও প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস ও মিনি ট্রাক চলছে নানা প্রয়োজনে।

মালিবাগ, রামপুরা, কাকরাইল, ফকিরেরপুল, শান্তিনগর, বিজয়নগর, তোপখানা রোডেও ছিল ব্যস্ততা। শান্তিনগরের কাছে টিসিবির ন্যায্য দামের পণ্যের জন্য নারী-পুরুষের লম্বা লাইন দেখা যায়।

কাকরাইল মোড়ে রিকশা ও যানবাহনের জট দেখে বেসরকারি বিমা কোম্পানির কর্মকর্তা শফিউর রহমান বলেন, এটাকে লকডাউন বলে না। এ রকম মানুষজন চলাচল করলে কীভাবে সংক্রমণ কমবে। গতকাল মৃত্যুর রেকর্ড আপনি দেখেছেন। তারপরও মানুষের মধ্যে কোনো ভয়ভীতি নেই। কী হবে বুঝতে পারছি না।

মোহাম্মদপুরের রিং রোড, টাউন হল, আসাদ গেট, শ্যামলী এলাকায় ঘুরে কর্মজীবী মানুষের চলাচল লক্ষ্য করা গেছে। শ্যামলীতে ট্রাফিক পুলিশও ছিল তৎপর।

কাকরাইল, মালিবাগ, নয়াপল্টন সড়কে গত কয়েকদিনের তুলনায় রিকশার সংখ্যা বেড়েছে। নাইটিঙ্গেল রেস্তোরাঁর কাছে পুলিশ চেকপোস্টে বেশ কয়েকটি প্রাইভেট কারকে জরিমানা করতে দেখা যায়।

সেখানকার চা-সিগারেট বিক্রেতা রহিম বলেন, গত সাত দিনে চোখের সামনে কতজনরে ফাইন করতে দেখলাম কিন্তু তাতে মানুষজনের কোনো হুঁশ হয় না। লকডাউন চলে, কিন্তু মানুষের মনে লকডাউন হচ্ছে না।

লকডাউনের অষ্টম দিনে রাজধানীর পুরান ঢাকার বিভিন্ন স্থান থেকে ‘অপ্রয়োজনে’ বের হওয়ায় ৭৫ জনকে আটক করেছে পুলিশ।

লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার জসিম উদ্দিন মোল্লা সাংবাদিকদের জানান গতকাল দুপুর ১২টা পর্যন্ত তাদের আটক করা হয়েছে।

লালবাগ বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার কুদরত-ই-খুদা বলেন, অলিগলিতে অপ্রায়োজনে ভিড় এড়াতে ৪০টির বেশি পেট্রোল টিম কাজ করছে, আর রয়েছে ১৭টি চেকপোস্ট।

কভিডের বিস্তার নিয়ন্ত্রণে ওই এলাকায় সচেতনমূলক কার্যক্রম পরিচালনাসহ দরিদ্র্য মানুষের মাঝে মাস্ক ও খাবার বিতরণ করছে পুলিশ।

পুলিশ কর্মকর্তা কুদরত-ই-খুদা বলেন, লালবাগ বিভাগে দুস্থ ৬০০ মানুষের মাঝে রান্না করার খাবার বিতরণ করা হয়েছে।

কভিড-১৯ সংক্রমণ উদ্বেগজনক হারে বেড়ে যাওয়ায় ১ জুলাই থেকে সাত দিনের কঠোর লকডাউন শুরু হয়। পরে তা আরও সাত দিন বাড়ানোর ঘোষণা দেয়া হয়।

পুলিশ বলছে, সরকারের নিষেধাজ্ঞার পরও যারা যৌক্তিক কারণ ছাড়া রাস্তায় বের হয়েছে কিংবা স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘন করবে, তাদেরই আইনের আওতায় আনা হচ্ছে।