জুনে আরামকোর শেয়ার বিক্রির পরিকল্পনা সৌদি আরবের

শেয়ার বিজ ডেস্ক: আরামকোর শতকোটি ডলারের শেয়ার বিক্রির পরিকল্পনা করছে সৌদি আরব। আগামী মাসে এই শেয়ার বিক্রি হতে পারে। খবর: রয়টার্স।

সৌদি আরবের রাষ্ট্রায়ত্ত জ্বালানি প্রতিষ্ঠান আরামকোর শেয়ার বিক্রি হতে চলেছে মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলের বাজারে শেয়ার ছাড়ার সবচেয়ে বড় ঘটনা। দুটি সূত্রের বরাত দিয়ে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা এ তথ্য জানিয়েছে। রয়টার্স যে দুটি সূত্রের সঙ্গে কথা বলেছে, তাদের মধ্যে একজন জানিয়েছেন, আরামকোর শেয়ার বিক্রির মাধ্যমে এক হাজার কোটি ডলার বাজার থেকে তোলা হতে পারে। এ-সংক্রান্ত প্রস্তুতি চলছে, ফলে শেষ মুহূর্তে কিছু পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। যে সূত্রগুলো এ নিয়ে কথা বলেছে, তারা পরিচয় গোপন রাখতে অনুরোধ করেছে।

আরামকোর শেয়ার রিয়াদে তালিকাভুক্ত করা হবে। অল্প সময়ের মধ্যে সব শেয়ার একসঙ্গে ছাড়া হবে না। বরং শেয়ারগুলো বাজারের মাধ্যমে ধীরে ধীরে বিক্রি করা হবে। সৌদি সরকারের যোগাযোগবিষয়ক দপ্তর ও আরামকোর কাছে এ বিষয়ে মন্তব্য চাওয়া হলেও তারা সাড়া দেয়নি।

রয়টার্স এর আগে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছিল, সিটি গ্রুপ, গোল্ডম্যান স্যাকস এবং এইচএসবিসির মতো ব্যাংক আরামকোর শেয়ার বিক্রির ব্যবস্থাপনা করতে আগ্রহ দেখিয়েছিল।

সৌদি আরব এখন একটি অর্থনৈতিক পালাবদলের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এটি পরিচিত ‘ভিশন ২০২৩’ হিসেবে। এর অন্যতম লক্ষ্য হলো, তেলবহির্ভূত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করা এবং বেসরকারি খাতকে আরও বেশি সুযোগ দেয়া। আরামকোর সবচেয়ে বড় শেয়ারহোল্ডার হলো সৌদি সরকার। মোট ৯০ শতাংশ শেয়ারের মালিক সরকার এই কোম্পানি থেকে পাওয়া লভ্যাংশের ওপর অনেকটাই নির্ভর করে।

চলতি মাসের শুরুর দিকে আরামকো জানিয়েছিল, তারা তিন হাজার ১০০ কোটি ডলার লভ্যাংশ দেবে। ২০২৪ সালের প্রথম প্রান্তিকে আরামকোর আয় কমেছে। এর মূল কারণ, তেলের দাম কমে যাওয়া এবং আগের তুলনায় কম পরিমাণ তেল বিক্রি।

২০১৯ সালে সর্বপ্রথম আরামকোর শেয়ার পুঁজিবাজারে ছাড়া হয়। সে সময়ে এটি ছিল বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণপ্রস্তাব। তখন মাত্র দেড় শতাংশ শেয়ার বাজারে ছেড়ে আড়াই হাজার কোটি ডলারের বেশি মূলধন সংগ্রহ করার লক্ষ্য নিয়ে রোববার প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের হালনাগাদ প্রসপেক্টাস প্রকাশ করে কোম্পানিটি। প্রথমে ৩০ থেকে ৩২ রিয়ালে প্রতিটি শেয়ার বাজারে ছাড়া হয়েছিল। শেয়ারের সর্বোচ্চ দর ধরে আইপিওর মোট দাম সর্বোচ্চ ৯৬ বিলিয়ন রিয়াল বা দুই হাজার ৫৬০ কোটি ডলার হয়। আইপিও বিক্রির মধ্য দিয়ে আরামকোর বাজার মূলধন দাঁড়ায় ১ দশমিক ৭ ট্রিলিয়ন (এক লাখ ৭০ হাজার কোটি) ডলারে। এটা দুই ট্রিলিয়ন ডলারের লক্ষ্যমাত্রা চেয়ে কম হলেও বিশ্বের সবচেয়ে মূল্যবান কোম্পানিতে পরিণত হয় আরামকো। গত বছর প্রতিটি শেয়ারের দাম সর্বোচ্চ ৩৮ দশমিক ৬৪ রিয়ালে উঠেছিল। তবে বৃহস্পতিবার দিন শেষে আরামকোর প্রতিটি শেয়ারের দাম ছিল ২৯ দশমিক ৯৫ রিয়াল।

বড় প্রকল্পে অর্থায়ন ও নতুন শিল্প গড়তে এ অর্থ ব্যয় হবে। শুরুতে দুটি স্টক এক্সচেঞ্জÑরিয়াদের তাদাউল একচেঞ্জ ও লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জের মতো কোনো পশ্চিমা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রাথমিক শেয়ার ছেড়ে ১০ হাজার কোটি ডলার মূলধন সংগ্রহের পরিকল্পনা ছিল আরামকোর। কিন্তু ২০১৯ সালে জলবায়ু পরিবর্তন, রাজনৈতিক ঝুঁকি ও ব্যবসায়িক স্বচ্ছতা নিয়ে সংশয় দেখালে সেই পরিকল্পনা থেকে সরে আসে সৌদি আরব। পরে সৌদি বিনিয়োগকারী ও উপসাগরীয় আরব মিত্রদের কেন্দ্র করে আইপিও ছাড়ার পরিকল্পনা করে। আইপিও নিয়ে দেশজুড়ে বিজ্ঞাপনী প্রচারণা শুরুর পর সৌদি ব্যাংকগুলো শেয়ার কেনার জন্য স্বল্প সুদে ঋণ দেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করে। প্রসঙ্গত, আরামকো ২০১৯ সালে পুঁজিবাজারে নিবন্ধনের পর সবচেয়ে বেশি পরিমাণ লাভের নতুন রেকর্ড গড়ার ঘোষণা দেয়।

উল্লেখ্য, এর আগে চীনের শীর্ষ ই-কমার্স কোম্পানি আলিবাবা ২০১৪ সালে নিউইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাকাভুক্ত হয়ে আড়াই হাজার কোটি ডলার মূলধন সংগ্রহ করেছিল।