রোহান রাজিব: বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ঋণ ও আমানতের সুদহারের ব্যবধান কিছুটা বেড়েছে। চলতি বছরের জুনে ঋণ ও আমানতের সুদহারের ব্যবধান বা স্প্রেড ২ বেসিস পয়েন্ট বেড়ে ২ দশমিক ৯৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা মে মাসে ছিল ২ দশমিক ৯১ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।
গত জুন মাসে ব্যাংকগুলোর গড়ে ৪ দশমিক ৩৮ শতাংশ সুদে আমানত নিয়েছে। আর ঋণ বিতরণ করেছে গড়ে ৭ দশমিক ৩১ শতাংশ সুদে। এতে করে ব্যাংক খাতের ঋণ ও আমানতের মধ্যকার সুদহারের ব্যবধান (স্প্রেড) দাঁড়িয়েছে ২ দশমিক ৯৩ শতাংশ। আর গত মে মাসে ব্যাংকগুলোর স্প্রেড ছিল ২ দশমিক ৯১ শতাংশ। ব্যাংকগুলো গড়ে ৪ দশমিক ৪১ শতাংশ সুদে আমানত নিয়ে ঋণ বিতরণ করেছে গড়ে ৭ দশমিক ৩২ শতাংশ সুদে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী (সিইও) সৈয়দ মাহবুবুর রহমান শেয়ার বিজকে বলেন, স্প্রেড বাড়াটা ভালো। কারণ এক সময় স্প্রেডটা ৪ শতাংশ ছিল। তা এখন অনেক কমে গেছে। স্প্রেড কমা ব্যাংক খাতের জন্য ভালো দিক নয়। ব্যাংকের টেকসই নির্ভরতা করে মার্জিনের ওপর। কোর ব্যবসা কিন্তু টাকা দেয়া এবং টাকা নেয়া। মার্জিন কমতে থাকলে সেই টেকসই হয় না। স্প্রেড এখন ধারাবাহিকভাবে বাড়তে থাকবে। কারণ জুলাই থেকে নতুন সুদহার চালু হয়েছে। একটা ব্যাংকের টেকসই অবস্থান বুঝাতে হলে ভালো মার্জিন থাকা দরকার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী, ব্যাংকগুলো সর্বোচ্চ ৪ শতাংশ স্প্রেডে ঋণ বিতরণ করতে পারে। চলতি বছরের জুনে দেশের ৬১টি ব্যাংকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আমানত ও ঋণের স্প্রেড ব্যবধান ছিল বিদেশি খাতের ব্যাংকগুলোর।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, জুনে রাষ্ট্রায়ত্ত ছয় ব্যাংকের গড় স্প্রেড দাঁড়িয়েছে ২ দশমিক ২৮ শতাংশ। এর মধ্যে দু’টি ব্যাংকের স্প্রেড ঋণাত্মক ২ শতাংশ ছাড়িয়েছে। জুন শেষে বেসিক ব্যাংকের স্প্রেড ঋণাত্মক ২ দশমিক ৩৬ শতাংশ। ওই মাসে ব্যাংকের আমানতের গড় ছিল ৬ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ আর ঋণ বিতরণের গড় ছিল ৩ দশমিক ৭০ শতাংশ। আমানতের চেয়ে ঋণে কম সুদহার হওয়াতে স্প্রেড ঋণাত্মক অবস্থায় দাঁড়িয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (বিডিবিএল) স্প্রেড ঋণাত্মক ছিল ১ দশমিক ২৫ শতাংশ। জুনে ব্যাংকটির আমানতের গড় সুদহার ছিল ৬ দশমকি ১২ শতাংশ আর ঋণের গড় সুদহার ছিল ৪ দশমকি ৮৭ শতাংশ।
জুনে বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর আমানত ও ঋণের গড় ব্যবধান (স্প্রেড) ছিল ১ দশমিক ২০ শতাংশ। আর বিদেশি ব্যাংকগুলোর গড় ব্যবধান ছিল ৬ দশমিক ৬০ শতাংশ। বিদেশি ব্যাংকগুলোর আমানত ও ঋণের স্প্রেড বেশি হওয়ার অন্যতম কারণ ছিল এ খাতের ব্যাংকগুলোর ঋণের গড় সুদহার বেশি ছিল। আমানতের গড় সুদহার ছিল কম। জুনে বিদেশি ব্যাংকগুলোর আমানতের গড় সুদহার ছিল ১ দশমিক ১৭ শতাংশ আর ঋণে ছিল ৭ দশমিক ৫৭ শতাংশ। জুনে ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান আমানত ও ঋণের স্প্রেড ঋণাত্মক ছিল ২ দশমিক ৬৪ শতাংশ। ব্যাংকটি গড়ে আমানত নিয়েছে ২ দশমিক ৬৫ শতাংশে আর গড় ঋণ বিতরণ করেছে শূন্য দশমিক শূন্য ১ শতাংশে।
আর বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোর গড় স্প্রেড হয়েছে ২ দশমিক ৯৪ শতাংশীয় পয়েন্ট। প্রতিবেদন অনুযায়ী, জুনে দেশের বেসরকারি ব্যাংকের ঋণের গড় সুদহার দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ৫৪ শতাংশীয় পয়েন্ট। এ সময়ে আমানতের গড় সুদহার ছিল ৪ দশমিক ৬০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোর মধ্যে তিনটি ব্যাংকের স্প্রেড ঋণাত্মক দাঁড়িয়েছে। জুনে আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকের ঋণাত্মক ২ দশমিক ৪৫ শতাংশ, পদ্মা ব্যাংকের ঋণাত্মক ৪ দশমিক ৫৩ শতাংশ ও বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের ঋণাত্মক শূন্য দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ।
খাত-সংশ্লিষ্টরা বলেন, সাধারণভাবে খেলাপি ঋণ অনেক বাড়লে স্প্রেড ঋণাত্মক হয়। কেননা, খেলাপি হওয়া একটি অংশের বিপরীতে আয় দেখানো যায় না। সুদ খাত হলো ব্যাংকের আয়ের প্রধান উৎস। সেখান থেকে আয় না হলে ব্যাংকের মুনাফা কমে যায়। এসব প্রতিষ্ঠানের পরিস্থিতির উন্নতি করতে চাইলে একদিকে আদায়ে জোরদার করতে হবে। পরিচালনা পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের সদিচ্ছা থাকলে পরিস্থিতির উন্নতি সম্ভব।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত জুন শেষে ব্যাংক খাতের আমানত দাঁড়িয়েছে ১৫ লাখ ৯৪ হাজার ৫৯০ কোটি টাকা। মে মাসের তুলনায় আমানতে ১ দশমিক ৯৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। আর এক বছরের ব্যবধানে ৮ দশমিক ৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
অপরদিকে জুন শেষে ঋণ দাঁড়িয়েছে ১৫ লাখ ১১ হাজার ৮৭১ কোটি টাকা। গত মে মাসে ছিল ১৪ লাখ ৮৭ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। আর গত বছরের জুনে ছিল ১৩ লাভ ৫৯ হাজার ১১৪ কোটি টাকা।