Print Date & Time : 6 July 2025 Sunday 3:29 am

জুলাইয়ে বন্ধ হয়েছে পাঁচ লাখ বিও হিসাব

জুবাইয়া ঝুমা: চলতি বছরের শুরুতে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য ৮২ হাজার নতুন বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) হিসাব খুলেছিলেন বিনিয়োগকারীরা। আর জুলাইয়ে পাঁচ লাখেরও বেশি হিসাব বন্ধ হয়ে গেছে। নবায়ন না করায় এসব হিসাব বন্ধ হয়েছে বলে জানা গেছে।

সেন্ট্রল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিডিবিএল) তথ্যমতে, জুলাইয়ের শুরুতে অর্থাৎ ১ জুলাই বিও হিসাব ছিল ২৫ লাখ ২৮ হাজার ৭৭০টি। গত বৃহস্পতিবার ২৯ জুলাই সেটা দাঁড়িয়েছে ২০ লাখ ২০ হাজার ৩৯০টিতে। সে হিসাবে পাঁচ লাখের বেশি বিও হিসাব কমেছে জুলাইয়ে। এদিকে পুঁজিবাজার ভালো থাকলেও করোনা মহামারির কারণে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের মাঝে বিরাজ করছে এক ধরনের অনিশ্চয়তা ও অস্থিরতা। ফলে তারা অতিরিক্ত বিও রাখতে চাচ্ছেন না। এর জের ধরে বিও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।

সূত্র জানায়, ২০১০ সালে পুঁজিবাজারে ব্যাপক ধসের পর থেকে বিনিয়োগকারীরা খুব বেশি বাজারমুখী হতে চাননি। এরপর মাঝেমধ্যে বাজার ঊর্ধ্বমুখী হলেও তা বেশিদিন টেকসই হয়নি। ফলে গত ছয় বছরে ৯ লাখের মতো বিও অ্যাকাউন্ট বন্ধ হয়ে গেছে। নিয়মানুযায়ী, প্রতি বছর জুনে বিও অ্যাকাউন্ট ফি পরিশোধ না করলে অ্যাকাউন্ট এমনিতে বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে বিও নবায়ন ফি ৪৫০ টাকা।

সিডিবিএলের তথ্যমতে, গত বছর ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিও হিসাবের সংখ্যা ছিল ২৫ লাখ ৫২ হাজার ১৬৮টি। আর চলতি বছর ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৬ লাখ ৩৩ হাজার ৯৯৭টি। আর জুলাই শেষে বিও হিসাবের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০ লাখ ২০ হাজার ৩৯০টিতে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে এবিসি সিকিউরিটিজের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শীর্ষ কর্মকর্তা শেয়ার বিজকে বলেন, বিও হিসাব কেন কমেছে, এটা একটা কঠিন প্রশ্ন। তবে এটা হতে পারে যে হয়তো অনেকে ফি দিয়ে হিসাবগুলো নবায়ন করেননি। এমনও হতে পারে, কেউ মার্কেটে থাকবেন না, এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, অথবা অর্থের সংকটও থাকতে পারে।

এছাড়া বাজারে করোনার প্রভাব তো আছেই। এ কারণে বিনিয়োগকারীদের মধ্যেও এক ধরনের অনিশ্চিয়তা কাজ করছে। ফলে বাজার চাঙা রাখতে সরকার ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কার্যকর এবং জোরালো ভূমিকা থাকা জরুরি বলে তিনি মনে করেন।

বিশ্লেষকরা মনে করেন, করোনার মহামারির কারণে মানুষের আয়-রোজগার কমেছে। সব ধরনের ব্যবসা-বাণিজ্যে বিরাজ করছে মন্দাভাব। চরম বিপর্যয় নেমেছে দেশের ও বিশ্বের অর্থনীতিতে। অনেক কোম্পানি লোকসান সামলাতে না পেরে বন্ধ হয়ে গেছে। বহু মানুষ কাজ হারিয়ে বেকার হয়ে পড়েছেন। আবার কেউ কেউ সঞ্চয় ভেঙে জীবন চালিয়ে নিচ্ছেন কোনোমতে। পুঁজিবাজারে এর প্রভাব পড়েছে। এখন বাজারের অবস্থা ভালো হলেও বিনিয়োগকারীরা পর্যবেক্ষকের ভূমিকায় রয়েছেন। বাজার পরিস্থিতি ও করোনা মহামারি পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে ভেবেচিন্তে নতুন বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। এ কারণে অনেকে অ্যাকাউন্ট নবায়ন করেননি। ফলে তা বন্ধ হয়ে গেছে।

এদিকে বিও অ্যাকাউন্ট বন্ধের প্রধান কারণ আইপিওতে লটারি প্রথা বন্ধ হয়ে যাওয়া। এখন সবার জন্য শেয়ার বরাদ্দ হয়েছে। আর এভাবে শেয়ার পেতে হলে প্রতিটি অ্যাকাউন্টে সেকেন্ডারি মার্কেটে ২০ হাজার টাকার বিনিয়োগ থাকতে হবে। ফলে যারা বেশিসংখ্যক বিও পরিচালনা করতেন, তারা শর্ত পালন না করতে পেরে অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দিয়েছেন। ফলে ঝরে গেছে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বিও।