জুলাইয়ে এক হাজার ৫৭৪ কোটি টাকার কৃষিঋণ বিতরণ

নিজস্ব প্রতিবেদক: চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রথম (জুলাই) মাসে এক হাজার ৫৭৪ কোটি টাকার কৃষি ঋণ বিতরণ করেছে দেশের ব্যাংকগুলো। এটা লক্ষ্যমাত্রার সাত দশমিক ৭২ শতাংশ। প্রসঙ্গত, চলতি অর্থবছরে ২০ হাজার ৪০০ কোটি টাকার কৃষি ও পল্লী ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা ধরেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিতরণকৃত এক হাজার ৫৭৪ কোটি টাকার মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ও বিশেষায়িত ব্যাংকগুলো বিতরণ করেছে প্রায় ৩৯৯ কোটি টাকা। এছাড়া বেসরকারি ও বিদেশি ব্যাংকগুলো বিতরণ করেছে এক হাজার ১৭৫ কোটি টাকা। কৃষিঋণ বিতরণে শীর্ষে রয়েছে শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড। চলতি অর্থবছরের জুলাইয়ে বেসরকারি খাতের এই ব্যাংকটি প্রায় ২৫৩ কোটি টাকা বিতরণ করেছে। অর্থবছরের এক মাসেই লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৯ শতাংশ বেশি ঋণ বিতরণ করেছে এ ব্যাংকটি। পুরো অর্থবছরের জন্য এ ব্যাংকের লক্ষ্যমাত্রা ২৩১ কোটি টাকা। এরপরই রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক। গত জুলাই মাসে ব্যাংকটি ২৪৮ কোটি টাকার কৃষিঋণ বিতরণ করেছে। অর্থবছরের এক মাসে লক্ষ্যমাত্রার পাঁচ শতাংশ ঋণ বিতরণ করেছে এ ব্যাংক। চলতি অর্থবছরে ব্যাংকটির লক্ষ্যমাত্রা চার হাজার ৯০০ কোটি টাকা। কৃষিঋণ বিতরণে তৃতীয় অবস্থানে আছে বেসরকারি খাতের ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড। অর্থবছরের জুলাই মাসে ব্যাংকটি ১২০ কোটি টাকা বিতরণ করেছে, যা অর্থবছরের এক মাসে লক্ষ্যমাত্রার ১০ শতাংশ। কৃষিঋণ বিতরণে পুরো অর্থবছরের জন্য ব্যাংকটির লক্ষ্যমাত্রা এক হাজার ১৫৭ কোটি টাকা।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বিতরণকৃত কৃষিঋণের অধিকাংশই শস্য খাতে বিতরণ করা হয়েছে। শস্য খাতে ৭৩৬ কোটি টাকা বিতরণ করেছে ব্যাংকগুলো। এছাড়া পোলট্রি খাতে ৩২৪ কোটি টাকা, মস্য খাতে ১৮৯ কোটি টাকা, সেচ যন্ত্রাংশ খাতে ১০ কোটি টাকা, কৃষি যন্ত্রাংশে প্রায় ১০ কোটি টাকা, খাদ্য ভাণ্ডার খাতে ছয় কোটি টাকা, দারিদ্র্য বিমোচনে ৮৪ কোটি টাকা এবং অন্যান্য খাতে ২১৩ কোটি টাকার কৃষিঋণ বিতরণ করেছে ব্যাংকগুলো।

জানা গেছে, চলতি অর্থবছরে কৃষিঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা এর আগের অর্থবছরের তুলনায় ১৬ দশমিক ২৪ শতাংশ বেশি। গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ১৭ হাজার ৫৫০ কোটি টাকার কৃষিঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। তবে অর্থবছর শেষে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৯ দশমিক ৬৫ শতাংশ বেশি ঋণ বিতরণ করেছিল ব্যাংকগুলো।

চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশ ব্যাংকের বার্ষিক নীতিমালায় কৃষিঋণ বিতরণের নতুন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২০ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। এ বছর বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর বাইরে বাংলাদেশ সমবায় ব্যাংক ২০ কোটি টাকা এবং বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড (বিআরডিবি) ৭২০ কোটি টাকার কৃষিঋণ বিতরণ করবে বলে নীতিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে। নতুন নীতিমালা অনুযায়ী, শস্য বা ফল চাষের জন্য সর্বোচ্চ আড়াই লাখ টাকা পর্যন্ত কৃষিঋণের ক্ষেত্রে সিআইবি প্রতিবেদন ও তদন্তের প্রয়োজন হবে না।

এদিকে ব্যাংকঋণের সুদহারের নিম্নমুখী প্রবণতা বিবেচনায় নিয়ে অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত খাত হিসেবে কৃষিঋণের সুদের হার কমানো হয়েছে। ১ জুলাই থেকে কৃষি ও পল্লী ঋণের সুদহারের ঊর্ধ্বসীমা ৯ শতাংশ নির্ধারণ করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আগে এই ঋণের  ঊর্ধ্বসীমা ছিল ১০ শতাংশ। ৯ শতাংশ সুদে এ ঋণ বিতরণে ব্যাংকগুলোকে উৎসাহ দিতে সাধারণ সঞ্চিতি (প্রভিশন) সংরক্ষণের হার কমিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। চলতি অর্থবছর থেকে ১০০ টাকা কৃষিঋণ বিতরণের বিপরীতে মাত্র ২৫ পয়সা প্রভিশন রাখতে হবে। আগে ১০০ টাকা কৃষিঋণের বিপরীতে আড়াই টাকা সংরক্ষণ করতে হতো।

বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, বেসরকারি অনেক ব্যাংক এখন কৃষিঋণ বিতরণ করছে। রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলোও লক্ষ্যমাত্রার আলোকে ঋণ বিতরণ করছে। ফলে আগের চেয়ে কৃষিঋণ বিতরণের হার অনেক বেড়েছে। কৃষিঋণ বিতরণে দু-একটা অনিয়ম হলেও এই ঋণের গুণগত মান আগের চেয়ে বেড়েছে।

প্রসঙ্গত, কৃষিঋণ পুনঃতফসিল করতে বিশেষ সুবিধা পাচ্ছেন বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক। কোনো ডাউন পেমেন্ট ছাড়াই তাদের কৃষিঋণ পুনঃতফসিল করতে পারবেন। কোনো ধরনের জমা ছাড়াই নতুন ঋণ পাবেন। এছাড়া  ঋণ পুনঃতফসিলের ক্ষেত্রে ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে সর্বোচ্চ ছয় মাস গ্রেস পিরিয়ড (কিস্তি আদায় বন্ধ) প্রদান করা যাবে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের।