জুলাই-নভেম্বরে কৃষিঋণ বিতরণ কমেছে ১৪.৫%

নিজস্ব প্রতিবেদক: চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) কৃষি খাতে ঋণের পরিমাণ ১৪ দশমিক ৩৯ শতাংশ কমে ৫৪ হাজার ৮১০ কোটি টাকায় নেমেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
তথ্য অনুযায়ী, সদ্যসমাপ্ত বছরের নভেম্বর শেষে কৃষিঋণ বিতরণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৫৪ হাজার ৮১০ কোটি টাকা। এর মধ্যে আদায় হয়েছে ১৬ হাজার ৭০ কোটি। বকেয়া রয়েছে ২৯ হাজার ১৯৪ কোটি টাকা এবং মেয়াদোত্তীর্ণ বকেয়ার (খেলাপি নয়) পরিমাণ ১১ হাজার ৬৬৭ কোটি। মোট ঋণের মধ্যে ৫ হাজার ৪৯৮ কোটি টাকা খেলাপি হয়ে পড়েছে, যা বিতরণকৃত মোট ঋণের ১০ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, ২০২৪ সালের শেষার্ধে ব্যাংকসহ পুরো ব্যবসায়িক কার্যক্রমই ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে পুরো ব্যাংক খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধিও কমে গেছে। তাছাড়া পরপর তিনটি বন্যার ফলে কৃষিঋণ বিতরণ কমে গেছে। বেড়েছে বকেয়ার পরিমাণও। আগামীতে এই ঋণের প্রবৃদ্ধি বাড়বে বলে আশা করা যায়।

চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের শুরুতে জুলাই মাসের প্রথম ভাগে জামালপুর, আগস্টের শেষে ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালী এবং সেপ্টেম্বরের শেষে বন্যায় প্লাবিত হয় দেশের উত্তরাঞ্চল। ফলে কৃষকরা পুরোপুরি ফসল ফলাতে পারেননি। ব্যাহত হয়েছে উৎপাদন ও বিপণন। এই বন্যার কারণে কমে গেছে কৃষিঋণ বিতরণের পরিমাণও। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে দেশের কৃষি খাতে ৩৮ হাজার কোটি টাকার ঋণ বিতরণের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রথম পাঁচ (জুলাই-নভেম্বর) মাসে ১৩ হাজার ৮১ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করেছে ব্যাংকগুলো, যা বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রার ৩৪ শতাংশ। কিন্তু গত অর্থবছরের একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল ১৫ হাজার ২৮০ কোটি টাকা। অর্থাৎ আগের বছরের তুলনায় ১৪ দশমিক ৩৯ শতাংশ কৃষিঋণ বিতরণ কমেছে।


একটি বেসরকারি ব্যাংকের কৃষিঋণ বিভাগের প্রধান বলেন, জুলাইয়ের পর সার্বিক ঋণ প্রবৃদ্ধি কমে এসেছিল। তখন মানুষ বের হতে পারেনি। আবার ১০ থেকে ১২ ব্যাংক কিছুটা সমস্যায় পড়েছিল। তারাও তখন ঋণ দিতে পারেনি। তাই সার্বিক কৃষিঋণ বিতরণে এটা প্রভাব ফেলেছিল। কিন্তু কৃষিঋণের টার্গেট দেয়া থাকায় এটা আমাদের দিতেই হবে। আগামীতে আশা করছি ঋণ বিতরণ বাড়বে।
সাম্প্রতিক দুটি বন্যায় কৃষি উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আবার নিত্যপণ্যের বাজারেও রয়েছে অস্থিরতা। এ অবস্থায় কৃষিঋণ বিতরণ কমে আসায় আসন্ন রবি ও বোরো মৌসুমে উৎপাদন ব্যাহত হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা।

তারা বলছেন, সাম্প্রতিক দুটি বন্যা ও এর আগের খরার প্রভাবে এবার আরও বেশি করে কৃষিঋণ প্রয়োজন ছিল। কিন্তু ব্যাংকগুলো কৃষিঋণ বিতরণে জোর না দেয়ায় ঋণপ্রবাহ কমেছে। এতে উৎপাদন কমে খাদ্য সরবরাহে ঘাটতি সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। এমনকি সামনের দিনগুলোয় মূল্যবৃদ্ধির প্রবণতা আরও জোরালো হয়ে উঠতে পারে। তথ্য অনুযায়ী, ব্যাংক খাতের সার্বিক খেলাপি ঋণের হারের চেয়ে কৃষিঋণের খেলাপি ঋণের হার অনেক কম। কারণ বর্তমানে ব্যাংক খাতে মোট ঋণ ১৬ লাখ ৮২ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি হয়ে গেছে দুই লাখ ৮৪ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণ করা ঋণের প্রায় ১৭ শতাংশ।