নিজস্ব প্রতিবেদক: আড়াই কোটি টাকা হলেই জেমিনি সি ফুড নিয়ে মেতে ওঠা যায়। এ পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করে মাত্র দু-তিনজন বিনিয়োগকারী হলেই কোম্পানিটির শেয়ারদর নিয়ন্ত্রণ করা যায়। আর এতেই হল্টেড হয় কোম্পানির শেয়ার। দর বেড়ে যায় প্রায় অর্ধশত টাকা। এভাবে কোম্পানিটির শেয়ারদর বেড়ে হাজার টাকার বেশি বেচাকেনা হয়েছে, আবার একইভাবে কমতে দেখা যায়। কোম্পানির শেয়ার লেনদেনে এমনই চিত্র ফুটে উঠেছে। আর এতে বড় ধরনের কারসাজির আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
তথ্যমতে, গতকাল জেমিনি সি ফুডের ৫০ হাজার ২৯৭টি শেয়ার বেচাকেনা হয়েছে। প্রতিটি শেয়ারের সর্বশেষ দর ছিল ৫২২ টাকা। এদিন কোম্পানির শেয়ার মোট দুই কোটি ৬২ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে। দর বেড়ে এ পরিমাণ লেনদেনেই হল্টেড হয়েছে কোম্পানিটি। আগের দিন কোম্পানিটির শেয়ার সর্বশেষ ৪৮০ টাকা লেনদেন হয়েছে। স্বল্প মূলধনি এবং কম শেয়ার হওয়ার কারণে কোম্পানিটি নিয়ে বড় ধরনের কারসাজি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বিষয়টি নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে খতিয়ে দেখতে পরামর্শ দেন।
এর আগে গত অক্টোবর মাসে লভ্যাংশ ঘোষণার আগের দিন থেকে কোম্পানিটির দর বাড়তে থাকে। লভ্যাংশ ঘোষণার আগে ২৫ অক্টোবর কোম্পানির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৬০৩ টাকা ২০ পয়সা। পরের দিন কোম্পানিটি ১২৫ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ ঘোষণা করে। এর পর থেকে কোম্পানির শেয়ারদর বাড়তে থাকে। শেয়ারদর বেড়ে গত ৯ নভেম্বর সর্বোচ্চ এক হাজার ৬০ টাকা ৪০ পয়সা বেচাকেনা হয়েছে। এর পর থেকে কোম্পানির শেয়ারদর পতন হয়। টানা ১০ দিন পতনের পর ফের দুদিন ধরে কোম্পানির শেয়ারদর বাড়তে দেখা গেছে। গত এক বছরে কোম্পানির শেয়ারদর সর্বনি¤œ ৪৮০ টাকা ১০ পয়সা এবং সর্বোচ্চ দুই হাজার টাকা বেচাকেনা হয়েছে।
এদিকে কোম্পানিটির ১২৫ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ দেওয়ার পর তা সমন্বয় হয়েছে। পরবর্তী সময়ে দর বাড়ছে। এর মধ্যে কোম্পানিটি প্রথম প্রান্তিকের প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। তাতে শেয়ারপ্রতি আয় কমতে দেখা গেছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী কোম্পানিটির জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর তিন মাসে শেয়ারপ্রতি আয় হয়েছে চার টাকা ৮ পয়সা, আগের বছর একই সময়ে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি আয় হয়েছিল পাঁচ টাকা ৩২ পয়সা । অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি আয় কমেছে এক টাকা ২৪ পয়সা। আয় কমার পরও কোম্পানির শেয়ারদর বাড়ায় বিনিয়োগকারীসহ সংশ্লিষ্টদের মধ্যে সংশয় দেখা দিয়েছে।
কী কারণে দর বাড়ছে, জানতে কোম্পানি সচিব নজরুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, একদিকে জেমিনি সি ফুড স্বল্প মূলধনি কোম্পানি অন্যদিকে কোম্পানির শেয়ারসংখ্যা কম। আড়াই থেকে তিন কোটি টাকার বিনিয়োগ হলেই কোম্পানিটির শেয়ার হল্টেড হয়ে যায়। তাই খুবই সহজেই কোনো চক্র কোম্পানির শেয়ার নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। কয়েক দিন আগে কোম্পানিটির লভ্যাংশকে কেন্দ্র করে এক হাজার টাকার বেশি দরে শেয়ার বেচাকেনা হয়েছে। পরবর্তী সময়ে পতন হলে অর্ধেকের চেয়ে নিচে নেমে গেছে শেয়ারদর। ফের বাড়ছে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারদর। কম শেয়ার হওয়ার কারণে কারসাজিচক্র এটা নিয়ে সহজে মেতে উঠতে পারে। কোম্পানিটির প্রথম প্রান্তিকে আয় কমার পরও স্বাভাবিকভাবে শেয়ারদর বাড়ার কথা নয়। তবে এর মধ্যে একজন উদ্যোক্তা পরিচালক শেয়ার বিক্রির ঘোষণা দিয়েছে। এ সুযোগে একটি চক্র শেয়ারটি নিয়ে সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করবে বলে মনে করছেন তারা।
এ সম্পর্কে অধ্যাপক আবু আহমেদ শেয়ার বিজকে বলেন, যেসব কোম্পানির শেয়ারসংখ্যা কম সেগুলোর দর হঠাৎ বাড়ে-কমে। কখনও স্বল্প মূলধনি আবার কখনও লোকসানি কোম্পানির শেয়ার হঠাৎ বাড়তে দেখা যায়। এসব কোম্পানিতে বিনিয়োগের আগে বিনিযোগকারীদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন তিনি।
পুঁজিবাজারে ১৯৮৫ সালে তালিকাভুক্ত হওয়া কোম্পানিটির অনুমোদিত মূলধন দুই কোটি টাকা এবং পরিশোধিত মূলধন এক কোটি ৬৫ লাখ টাকা। কোম্পানির শেয়ারসংখ্যা ১৬ লাখ ৫০ হাজার। এর মধ্যে উদ্যোক্তা পরিচালকদের কাছে ৩৯ দশমিক ৬০ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ১০ দশমিক ৯৯ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে ৪৯ দশমিক ৪১ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।