জৌলুস হারিয়েছে বগুড়ার বেনারসি পল্লি

পারভীন লুনা, বগুড়া: বগুড়ার শেরপুর উপজেলার ঘোলাগাড়ী কলোনি গ্রামে বেনারসি পল্লির সেই জৌলুস আর নেই। এ পল্লিতে এখন আর খুব একটা শোনা যায় না তাঁতের খটখট শব্দ। এ পেশার সঙ্গে জড়িতরাও জীবন-জীবিকার তাগিদে রিকশা অথবা অটোভ্যান নিয়ে রাস্তায় নেমেছেন।
বগুড়া থেকে প্রায় ২৮ কিলোমিটার দূরে শেরপুর উপজেলার ঘোলাগাড়ী কলোনি গ্রামে বেনারসি পল্লি। এ পল্লির মানুষগুলোর আদি বাড়ি ভারতের বিহার রাজ্যে। ঘোলাগাড়ী কলোনি গ্রামের স্থানীয়রা তাদের বিহারি হিসেবে জানেন। ঘোলাগাড়ী গ্রামেই আরেক পাড়ার নাম নদীয়াপাড়া। এ পাড়ার বাসিন্দারা ভারতের নদীয়া জেলা থেকে এসে বসতি গড়ায় পাড়ার নামও হয়েছে নদীয়াপাড়া। ঘোলাগাড়ী কলোনি গ্রামের এক ব্যক্তি ১৯৯৫ সালে ঢাকায় প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর তাঁত মেশিন বসিয়ে বেনারসি শাড়ি তৈরির কাজ শুরু করেন। এরপর ধীরে ধীরে ওই গ্রামে আরও প্রায় ৭৫টি তাঁত বসানো হয়। সে সময় ছিল ওই পল্লির মানুষদের জন্য স্বর্ণযুগ। প্রায় দেড় যুগের বেশি তাদের অবস্থান ঠিক থাকলেও ভারতীয় শাড়ির দাপটে ধীরে ধীরে তাদের অর্থনীতির চাকায় ঘুণে ধরে। পল্লিতে কমতে থাকে তাঁত মেশিন ও কারিগরের সংখ্যা।
সে সময় ৭৫টি তাঁতে বেনারসি শাড়ি তৈরি হলেও এখন এর পরিমাণ দাঁড়িয়েছে পঁচিশে। চালু তাঁতগুলোতে তৈরি হচ্ছে ঈদ উপলক্ষে কাতান ও জামদানি শাড়ি। যেগুলোর দাম এক হাজার ৮০০ থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত।
তাঁত মালিকরা জানান, এক হাজার ৮০০ টাকা পাইকারি দামে যে শাড়ি বিক্রি করেন, ঢাকায় শোরুমে ওই শাড়ি বিক্রি হয় চার হাজার টাকা। বেনারসি পল্লিতে এখন বেনারসি শাড়ি তৈরি না হলেও তৈরি হচ্ছে জামদানি, কাতান, ধুপিয়ানসহ তাঁতে তৈরি নকশা করা শাড়ি। তাও আবার সীমিত পরিসরে। দিন দিন চাহিদা কমে যাওয়ায় শাড়ি উৎপাদন কমে যাচ্ছে। পাশাপাশি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে একের পর এক তাঁত।
তাঁত কারিগর আবদুল ওয়াহেদ জানান, ঢাকার মিরপুরের বেনারসি পল্লিতে ১৫ বছর কাজ করার পর এ গ্রামে ১৯৯৫ সালে নিজের বাড়িতে তাঁত বসিয়ে তিনিই প্রথম বেনারসি শাড়ি তৈরি শুরু করেন। দিন দিন শাড়ির চাহিদা বাড়তে থাকলে ঘোলাগাড়ী কলোনি ও নদীয়াপাড়ায় নারী-পুরুষ উভয়েই তাঁতের কাজ শুরু করেন। তাঁতের সুন্দর নকশা আর দক্ষতার সঙ্গে পারিপাটি করে কাজ করার কারণে এলাকাবাসীর মুখে মুখে এ গ্রামটি পরিচিত হয়ে ওঠে। বেনারসি পল্লিতে তৈরি শাড়ির চাহিদা এতটাই ছিল যে, ঢাকার বিভিন্ন শাড়ির শোরুম থেকে আগাম টাকা দিয়ে তাদের শাড়ির অর্ডার দেওয়া হতো। সারা বছর চাহিদার পাশাপাশি রমজান মাসে চাহিদা থাকে সবচেয়ে বেশি। গত কয়েক বছর ধরে ভারত থেকে শাড়ি আসায় তাদের কদর কমে গেছে। তাই ভালো নেই এ শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা। বাধ্য হয়ে তারা পেশার পরিবর্তন করছেন।