জ্বর হচ্ছে নানা কারণে

জ্বর আসলে কোনো রোগ নয়, রোগের উপসর্গ। চারদিকে ডেঙ্গুসহ নানা জ্বরে আক্রান্ত অনেকেই। মৌসুমে ডেঙ্গু তো বাড়ছেই, বাড়ছে অন্যান্য সংক্রমণও। তাই জ্বর হলে অবহেলা না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়াই উত্তম। জ্বর সাত দিনের কম স্থায়ী হলে বলা হয় অ্যাকিউট ফিভার। ১৪ দিন পর্যন্ত থাকলে বলে সাবঅ্যাকিউট ফিভার। ১৪ দিনের বেশি স্থায়ী হলে বলা হয় ক্রনিক বা পারসিস্ট্যান্স ফিভার। কেন জ্বর হয়েছে, তা চিকিৎসক লক্ষণ পরীক্ষার মাধ্যমে নির্ণয় করেন।

কারণ: ঠাণ্ডা লাগা, পেটে সংক্রমণ, ফুসফুসে সংক্রমণ রক্তস্বল্পতা হলেও জ্বর হয়। ঋতু পরিবর্তন, ভাইরাল ইনফেকশন বা অন্য বড় রোগের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় কারও কারও জ্বর হয়। মানুষের শরীরের মধ্যে মেটাবলিজম চলাকালে যে ক্রিয়াবিক্রিয়া চলতে থাকে, তা থেকেই বাড়তে পারে শরীরের তাপমাত্রা। তবে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার কারণ নানা কিছু হতে পারে। ফ্লু, চিকেন পক্স, নিউমোনিয়া, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, হিট স্ট্রোক, অ্যালকোহল উইথড্রয়াল, ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু টাইফয়েড থেকে শুরু করে নানা কারণে জ্বর আসতে পারে।

লক্ষণ: জ্বর হলে শরীরের তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কাঁপুনি, খিদের অভাব, ডিহাইড্রেশন, ডিপ্রেশন, মাথাব্যথা, অবসাদ ঘুমঘুম রেশ থাকে। অতিরিক্ত জ্বরে খিঁচুনিও হতে পারে। তবে জ্বরের পাশাপাশি আনুষঙ্গিক লক্ষণই কিন্তু বলে দেবে আসলে কেন জ্বর হয়েছে।

চিকিৎসা: তাপমাত্রা ক্রমাগত বাড়তে থাকলে কিংবা রোজই একই সময়ে অল্প তাপমাত্রা বাড়লে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। জ্বরকে যেহেতু লক্ষণ হিসেবেই ধরা হয়, তাই চিকিৎসক জ্বরের কারণ বোঝার জন্য রক্ত পরীক্ষা, ইউরিন টেস্ট, এক্সরে প্রভৃতি করাতে পারেন।

জ্বর হলেই প্রাথমিকভাবে প্যারাসিটামলজাতীয় ওষুধ খেতে পারেন। জ্বর কমাতে প্রয়োজন বুঝে চার থেকে ছয় ঘণ্টা পরপর প্যারাসিটামল খাওয়া যাবে। তবে তিন দিনের বেশি জ্বর থাকলে এবং অন্য সব গুরুতর লক্ষণ প্রকাশ পেলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনোভাবেই অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ সেবন করা যাবে না। ডেঙ্গু, ফ্লু, ঠাণ্ডা লাগা, কিংবা ভাইরাল ফিভার হলে শুধু অ্যান্টিবায়োটিকে কাজ হয় না। সে ক্ষেত্রে চিকিৎসক পরীক্ষা করে অন্য ওষুধ দেবেন। জ্বর হলে প্যারাসিটামলের পাশাপাশি প্রচুর পরিমাণে পানি পানীয়জাতীয় খাবার খেতে হবে। তাপমাত্রা বাড়লে শরীর পানিশূন্য হওয়ার আশঙ্কা থাকে। জ্বর হলে প্রথম দিন থেকেই গুরুত্ব দিন। যেহেতু এখন ডেঙ্গুর মৌসুম, তাই প্রথম বা দ্বিতীয় দিন পরীক্ষা করে নিশ্চিত হয়ে নিন ডেঙ্গু কি না। আর চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনে খাবেন না।

ডা. মো. জাহাঙ্গীর আলম

অধ্যাপক পরিচালক, পেডিয়াট্রিক রেসপিরেটরি মেডিসিন

বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ইনস্টিটিউট, শ্যামলী, ঢাকা