শেয়ার বিজ ডেস্ক: রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন দুই দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে চীনে গেছেন। সফরে তিনি চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে ইউক্রেন, এশিয়া, জ্বালানি ও বাণিজ্য নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। খবর: রয়টার্স ও সিএনএন।
পুতিন গতকাল বৃহস্পতিবার ভোরে চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে পৌঁছান। রাশিয়ার নতুন নিয়োগকৃত প্রতিরক্ষামন্ত্রী আন্দ্রি বেলুসোভ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ, নিরাপত্তা কাউন্সিলের সচিব সের্গেই শোইগু এবং উশাকভ চীন সফরে পুতিনের সঙ্গে রয়েছেন।
পরে গণ-মহাভবনে প্রেসিডেন্ট শি-র সঙ্গে সংক্ষিপ্ত বৈঠকে মিলিত হন তিনি। এ সময় শি দুই দেশের সম্পর্ক ‘পুনরুজ্জীবিত করতে’ প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেন, চীন সবসময় রাশিয়ার ভালো অংশীদার হবে। চীন-রাশিয়ার বর্তমান সম্পর্ক কষ্টার্জিত। দু’পক্ষেরই একে সযত্নে লালন ও আগলে রাখতে হবে। বিশ্বে ন্যায়বিচার ও ন্যায্যতা সমুন্নত রাখতে চীন রাশিয়ার সঙ্গে একযোগে কাজ করতে ইচ্ছুক।
এর আগে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া ইউক্রেনে আক্রমণ শুরু করার কয়েকদিন আগে পুতিন বেইজিং সফর করেন। তখন দুই দেশ তাদের মধ্যে ‘সীমাহীন’ অংশীদারিত্বের কথা ঘোষণা করে। ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা শুরু হওয়ার পর এ নিয়ে মোট চারবার দুই নেতার সাক্ষাৎ হলো। শুধু তা-ই নয়, ২০১২ সালে সি জিন পিং ক্ষমতায় আসার পর এ নিয়ে দুই নেতার মোট ৪৩ বার সাক্ষাৎ হয়েছে। বিশ্বের আর কোনো ক্ষেত্রে এমন নজির দেখা যায় না। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে পুতিনের ফোনে আলাপ হয়েছে মাত্র একবার।
যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ভূরাজনীতি ও অর্থনীতির গতি বদলেছে। রাশিয়া ও চীনের মধ্যকার রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও ঘনীভূত হয়েছে। দেশ দুটির মধ্যকার বাণিজ্য রেকর্ড উচ্চতায় উঠেছে। রাশিয়া চীন থেকে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সরঞ্জাম কিনেছে এবং বিনিময়ে চীনের ক্রেতারা ছাড়কৃত মূল্যে রাশিয়ার জ্বালানি তেল ব্যবহার করছে। এ যুদ্ধের পর বিশ্বের বিভিন্ন দেশ রাশিয়ার ওপর নানা ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলেও চীন সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়। এমনকি চীনের প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করেন, রাশিয়ার সঙ্গে সহযোগিতার ক্ষেত্রে সীমা-পরিসীমা থাকবে না।
রাশিয়ার ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পশ্চিমারা মূলত দেশটির যুদ্ধ করার সক্ষমতা কমানোর চেষ্টা করেছে। কিন্তু রাশিয়া নানাভাবে এসব নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে চীন, ভারতসহ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য করছে।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) জানিয়েছে, ২০২৩ সালে রাশিয়ার প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩ দশমিক ৬ শতাংশ। যুদ্ধ শুরুর বছরে দেশটির অর্থনৈতিক সংকোচন হয়েছিল। ২০২৪ সালেও রাশিয়ার ভালো অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আইএমএফের পূর্বাভাস, চলতি বছর রাশিয়ার প্রবৃদ্ধি হবে ২ দশমিক ৬ শতাংশ; যদিও দেশটির সরকারের পূর্বাভাস, প্রবৃদ্ধি হবে ২ দশমিক ৩ শতাংশ।
পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞার পর চীন রাশিয়ার বড় অর্থনৈতিক অংশীদার হয়ে উঠেছে। পরিকল্পনা ছিল, ২০২৪ সালের মধ্যে দেশটির দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ২০ হাজার কোটি ডলারে উন্নীত হবে। কিন্তু তার আগেই ২০২৩ সালে তা ২৪ হাজার কোটি ডলারে উঠে যায়। এ পরিস্থিতিতে চীন এখন রাশিয়ার শীর্ষ বাণিজ্য অংশীদার।
পুতিনের মুখপাত্র রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমকে বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন নয়, চীন এখন রাশিয়ার শীর্ষ বাণিজ্য অংশীদার। এ অর্জনে ভøাদিমির পুতিন ও সি চিন পিং উভয়ে খুশি।
উল্লেখ্য, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর রাশিয়ায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের রপ্তানি কমেছে প্রায় ৬০ শতাংশ। সেই শূন্যস্থান পূরণ করেছে চীন। ২০২৩ সালে রাশিয়ায় ১১ হাজার কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে চীন, অর্থাৎ ২০২১ সালের তুলনায় তাদের রপ্তানি বেড়েছে ৬৫ শতাংশ। এ সময়ে রাশিয়া সৌদি আরবকে হটিয়ে চীনের বৃহত্তম তেল সরবরাহকারী হয়ে ওঠে।