শেয়ার বিজ ডেস্ক: আন্তর্জাতিক বাজারে গতকাল সোমবার অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দামে ব্যাপক দরপতন হয়েছে। মার্কিন ডলারের দাম বৃদ্ধি এবং এশিয়া তথা চীনে নতুন করে কভিডের ডেল্টা ধরনের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় বৈশ্বিক তেলের চাহিদা কমে যাওয়ার আশঙ্কায় জ্বালানির দাম হ্রাস পেয়েছে বলে মনে করা হয়। গতকাল আন্তর্জাতিক বাজারে সব ধরনের তেলের দাম তিন শতাংশের বেশি পড়ে গেছে। আগের সপ্তাহেও জ্বালানি তেলের দাম প্রায় ছয় শতাংশ পড়ে গিয়েছিল। খবর: রয়টার্স।
বৈশ্বিক জ্বালানি পুনরুদ্ধারে চীন ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে। গত মাসে চীনের হেনান প্রদেশে বন্যার পর এখন দেশটির সিচুয়ান প্রদেশেও বন্যা চলছে। উভয় বন্যায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া সম্প্রতি দেশটিতে কভিড সংক্রমণ বাড়ছে। রোববার সর্বোচ্চ ৯৬ জনের সংক্রমণের পর গতকাল ১২৫ জন সংক্রমণ ধরা পড়েছে। এ অবস্থায় বৈশ্বিক ফ্লাইট বাতিলসহ শিল্পকারখানা বন্ধের শঙ্কা করছেন। ফলে জ্বালানির চাহিদা কমে যাবে। এছাড়া এশিয়ার মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়ায় কভিডের বিস্তার বেড়েই চলছে।
গতকালের বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, লন্ডনের ব্রেন্ট ক্রুড ফিউচারস গত সপ্তাহে ছয় শতাংশ হ্রাসের ব্যারেলপ্রতি দুই দশমিক ৪৩ ডলার বা সাড়ে তিন শতাংশ কমে ব্যারেল বিক্রি হয়েছে ৬৮ দশমিক ২৭ ডলার। গত চার মাসের মধ্যে সপ্তাহে বড় পতন। অন্যদিকে, ইউএস ওয়েস্ট ট্যাক্সাস ইন্টারমিডিয়েট (ডব্লিউটিআই) ক্রুড ফিউচারস গত সপ্তাহে প্রায় সাত শতাংশ হ্রাসের ব্যারেলপ্রতি দুই দশমিক ৪১ ডলার বা তিন দশমিক ছয় শতাংশ কমে ব্যারেল বিক্রি হয়েছে ৬৫ দশমিক ৮৭ ডলার। গত ৯ মাসের মধ্যে সপ্তাহে বড় পতন।
এ বিষয়ে আরবিসি বিশ্লেষক গর্ডন রামসে সম্ভাব্য বৈশ্বিক জ্বালানির চাহিদা হ্রাস সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ডেল্টা ধরনের সংক্রমণ হার বৃদ্ধির কারণে তেলের চাহিদা হ্রাস পাচ্ছে।
আর এএনজেডের বিশ্লেষকরা বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম তেল ভোক্তা দেশ চীনে নতুন করে কভিডের বিধিনিষেধ আরোপের ইঙ্গিত করছেন, যা তেলের প্রবৃদ্ধিকেই হ্রাস করার প্রধান কারণ হতে পারে।
ইতোমধ্যে চীনে বিধিনিষেধের আওতায় কিছু ফ্লাইট বাতিল, দেশের ৪৬টি শহরে ভ্রমণে সতর্কতা এবং সীমাবদ্ধতা, বেশি সংক্রমিত এমন ১৪৪টি এলাকায় গণপরিবহন এবং ট্যাক্সি সেবায় বিধিনিষেধ আরোপ করেছে।
গতকাল সোমবারও চীনে নতুন ১২৫ জন কভিড পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে, যা উদ্বেগ
বাড়িয়েছে দেশটিতে। এ জন্য কভিডের উৎপত্তিস্থল উহানের সব নাগরিকের কভিড টেস্ট করানো হয়েছে।
এদিকে, কভিডের বিস্তার ও গত মাসে দেশটির হেনান প্রদেশে বন্যায় ৩০০-এর বেশি নাগরিকের মৃত্যুতে অনেক উৎপাদন কারখানা বন্ধ রাখতে হয়েছে। ফলে কভিড-পরবর্তী অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করার পর আবার জুলাইয়ে উৎপাদনে ধাক্কা খেল চীন।
এ বিষয়ে ওনডার জ্যৈষ্ঠ বাজার বিশ্লেষক জেফ্রি হ্যালি বলেন, উভয় (বেঞ্চমার্ক) তেলের বাজারে জন্য সামনে আরও খারাপ সংবাদ অপেক্ষা করছে। যদি চীনে ভাইরাসের দ্রুত উন্নতি না হয়।
চলতি বছরের জুলাইয়ে চীনের তেল আমদানি ২০২০ সালের থেকেই কমে রেকর্ড নিচে নেমে গেছে। ধারণা করা হয়, ২০ শতাংশ জ্বালানি তেল আমদানি কমেছে জুলাইতে।
এদিকে শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের লেবার ডিপার্টমেন্ট জুলাইয়ে কর্মসংস্থানের প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ওই প্রতিবেদনে রেকর্ড ৯ লাখ ৪৩ হাজার নতুন কর্মী নিয়োগ দেয়ার কথা জানানো হয়। এছাড়া গত বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণার পর মার্কিন ডলারের দাম বেড়ে যায়। শুক্রবার ইউরোর বিপরীতি ডলারের দাম গত চার মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ বৃদ্ধি পায়, যা তেলের দাম হ্রাসে ভূমিকা রাখে। ফলে তেলের বাজারে অন্য মুদ্রার বিপরীতি ডলার শক্তিশালী হয়।