জ্বালানি তেলের দাম দ্রুত সমন্বয়ের উদ্যোগ নিন

দেশে পেট্রোলিয়াম পণ্য আমদানি, মজুত, বিপণন, বিতরণ-সংক্রান্ত সব কার্যক্রম তত্ত্বাবধান, সমন্বয় ও নিয়ন্ত্রণ এবং পেট্রোলিয়াম তেল লুব্রিক্যান্ট ব্যবসায়ের অবকাঠামোগত সুবিধাদি উন্নয়ন প্রতিষ্ঠায় সংবিধিবদ্ধ রাষ্ট্রীয় সংস্থা বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। সংস্থাটির মূল দায়িত্ব দেশের সর্বত্র নিরবচ্ছিন্নভাবে সুলভ মূল্যে জ্বালানি পণ্য বিতরণ নিশ্চিতকরণ। রাষ্ট্রীয় সংস্থাটি জ্বালানি পণ্য আমদানি, রপ্তানি, পরিশোধন ও বণ্টনের মাধ্যমে দেশের সর্বত্র জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং পরিচালন কার্যক্রমে আধুনিকায়ন করলেও সুলভ মূল্যে জ্বালানি পণ্য বিতরণ নিশ্চিত করেনি কিংবা করতে পারেনি। গতকাল শেয়ার বিজ কড়চায় প্রকাশিত প্রতিবেদন ‘সংবাদ সম্মেলনে সিপিডি: জ্বালানি তেলের দাম লিটারে ৫-১০ টাকা কমানো সম্ভব’ শীর্ষক প্রতিবেদন বিষয়টি নতুন করে সামনে এনেছে। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও নাগরিক সংগঠন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) বলছে,   অকটেন, পেট্রল, ডিজেলসহ জ্বালানি তেলে গ্রাহক পর্যায়ে প্রতি লিটারে এই মুহূর্তে পাঁচ থেকে ১০ টাকা কমানোর সুযোগ আছে। আন্তর্জাতিক বাজার থেকে তেল কেনার পর বর্তমানে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) প্রতি লিটার ডিজেলে পাঁচ টাকা এবং প্রতি লিটার অকটেনে ১৩ টাকা মুনাফা করে। শনিবার ‘স্টেট অব দ্য বাংলাদেশ ইকোনমি ২০২২-২৩: তৃতীয় পর্যালোচনা’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে সিপিডি এ কথা জানায়।

সিপিডি বলেছে, ২০১৫-১৬ থেকে ২০২১-২২ অর্থবছর পর্যন্ত এই সাত বছরে বিপিসি মোট ৪৩ হাজার ৮০৪ কোটি টাকা লাভ করেছে। কর দেয়ার পর নিট মুনাফা ৩৬ হাজার ৭৪ কোটি টাকা। আর এই সময়ে সাত হাজার ৭২৭ কোটি টাকা কর দিয়েছে বিপিসি। সরকার দীর্ঘদিন ধরে জ্বালানি খাতে বেশি ভর্তুকি দিয়েছে। এখানে এখন কিছু করা যেতে পারে।

রাষ্ট্রীয় সংস্থা হওয়ায় বিপিসির ব্যবসা করার সুযোগ নেই। সাধারণ মানুষের করের টাকায় প্রতিষ্ঠানটির নানা ব্যয় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন সংকুলান হয়। আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে বিশ্বের অধিকাংশ দেশ তেলের দাম কমালেও আমাদের দেশে কমানো হয় না। শুধু তা-ই নয়, বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে সময় সময় গ্রাহক পর্যায়ে জ্বালানি কেনা বাবদ ব্যয় বাড়িয়েছেন বিক্রেতারা। বর্তমানে করোনা পরিস্থিতির কারণে গণপরিবহনের ভাড়া বাড়িয়েছে সরকার। তেলের দাম কমানো গেলে ভাড়া না বাড়িয়েও পরিস্থিতি সামাল দেয়া যেত।

বিপিসির বিরুদ্ধে কয়েক হাজার কোটি টাকা ভ্যাট পরিশোধ না করার অভিযোগ রয়েছে। বিপিসি রাষ্ট্রীয় কোষাগারে বছরের পর বছর রাজস্ব বকেয়া রাখবে। আবার কম দামে কিনে বেশি দামে জ্বালানি করবে, এটি কোনোভাবেই প্রত্যাশিত নয়। বাংলাদেশে জ্বালানির বহুমুখী ব্যবহার রয়েছে। দেশে ধান উৎপাদনের সবচেয়ে বড় মৌসুম বোরো আবাদে ট্রাক্টর ও সেচ পাম্পের প্রায় ৭০ শতাংশই ডিজেলে চলে। তেলের দাম কমলে প্রান্তিক চাষিরাই সুফল পেত।  জ্বালানির দাম কমলে পরিবহন ভাড়া ও বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচও কমবে। তাই বলা যায় জ্বালানি তেলের দাম কমালে সাধারণ মানুষই বেশি উপকৃত হবে এবং তাতে সার্বিক অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। সরকার বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনায় নিয়ে শিগগির কার্যকর ব্যবস্থা নেবে বলেই প্রত্যাশা।