জ্বালানি নিরাপত্তা তহবিলে স্বচ্ছতা নিশ্চিত হোক

যেকোনো দেশের উন্নয়নের জন্য জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেই গুরুত্ব বিবেচনা করেই সরকার জ্বালানি নিরাপত্তা তহবিল সৃষ্টি করেছে। কিন্তু এ তহবিলের অর্থ ব্যয়ের স্বচ্ছতা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠছে। দৈনিক শেয়ার বিজে গতকাল প্রকাশিত ‘জ্বালানি নিরাপত্তা তহবিল: এলএনজির ভর্তুকিতেই গেছে সোয়া ১২ হাজার কোটি টাকা’ শীর্ষক প্রতিবেদনে যে তথ্য উঠে এসেছে, তা বিশ্লেষণের দাবি রাখে বৈকি। আমদানি পর্যায়ে ভর্তুকি পরিশোধে কেন এত বেশি পরিমাণ অর্থ ব্যয় হচ্ছে, তা খতিয়ে দেখা উচিত বলে মনে করি।

প্রতিবেদনটির তথ্যমতে, জ্বালানি নিরাপত্তা সুরক্ষার জন্য ২০১৬ সালে এ ‘জ্বালানি নিরাপত্তা তহবিল’ গঠন করে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। গত জুন পর্যন্ত তহবিলের আকার দাঁড়ায় প্রায় সাড়ে ১২ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু এ তহবিলের প্রায় পুরোটাই এলএনজি আমদানির ভর্তুকি বাবদ ব্যয় করা হয়েছে। তহবিলটি গঠন করা হয়েছিল মূলত ভবিষ্যতে জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে। কিন্তু সে অর্থ যদি বর্তমানের ভর্তুকি মেটাতেই চলে যায়, তাহলে ভবিষ্যতের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে কীভাবে, তা নিয়ে ভাবনার অবকাশ রয়েছে বৈকি।

একটি দেশে জ্বালানি নিরাপত্তার পরিস্থিতি কেমন তার ওপর নির্ভর করে দেশীয় ও বিদেশি বিনিয়োগ, শিল্পায়ন ও সার্বিক উন্নয়ন। বিশেষ করে শিল্পোৎপাদন না বাড়ালে কোনো দেশে ব্যাপকভাবে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করা সম্ভব হয় না। আর শিল্পোৎপাদন বৃদ্ধির পূর্বশর্ত হচ্ছে জ্বালানির নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। বিভিন্ন সময় সরকারের কর্তাব্যক্তিদের সঙ্গে আলোচনায়ও বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতের তাগিদ দিয়েছেন। কাজেই জ্বালানি নিরাপত্তা তহবিল গঠন একটি সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত বলেই মনে করি। কিন্তু সেই তহবিলের সব অর্থ যদি খরচ হয়ে যায়, তাহলে ভবিষ্যতের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে কীভাবে?

এ কথা ভুলে গেলে চলবে না যে, আমাদের দেশীয় উৎসের গ্যাস খুব দ্রুত শেষ হয়ে যাচ্ছে। ২০২৭ সালের পর দেশের অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে গ্যাসের সরবরাহ পাওয়া কঠিন হবে বলে নানা সময়ে সরকারের তরফ থেকে জানানো হয়েছে। বর্তমানে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনসহ শিল্পোৎপাদনের জন্য জ্বালানির যে চাহিদা রয়েছে, তা মেটাতে হলে আমাদের অনেকাংশেই আমদানিনির্ভর হতে হবে। কিন্তু আমদানিনির্ভর কোনো খাত সাধারণত টেকসই হয় না। কাজেই আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির সার্বিক চিত্র বিশ্লেষণ করে দেশের অভ্যন্তরে জ্বালানির একটি টেকসই রিজার্ভ গড়ে তোলা আবশ্যক। আর সেটা করতে হলে প্রয়োজনীয় তহবিলের জোগান নিশ্চিত করতে হবে। সুতরাং জ্বালানি নিরাপত্তা তহবিলের আকার বাড়ানোর মাধ্যমে টেকসই জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কাজ এগিয়ে নিতে সরকার কাজ করবে বলেই আমাদের বিশ্বাস।