জ্বালানি নিরাপত্তা নিয়ে আগাম সতর্কতা জরুরি

‘জেট ফুয়েলের দাম বেড়ে লিটারপ্রতি ১৩০ টাকা’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে গতকালের শেয়ার বিজে। আমাদের প্রতিবেদক জানাচ্ছেন, ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে জেট ফুয়েলের দাম ছিল প্রতি লিটার ৪৬ টাকা। আর চলতি মাসে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩০ টাকা। অর্থাৎ গত ২০ মাসে দাম বেড়েছে ১৮৩ শতাংশ। অতিরিক্ত মূল্য বৃদ্ধির কারণে চাপে রয়েছে দেশের উড়োজাহাজ পরিবহন খাত।

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) সহযোগী প্রতিষ্ঠান পদ্মা অয়েল কোম্পানি সম্প্রতি অভ্যন্তরীণ রুটে জেট ফুয়েলের দাম ১১১ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৩০ টাকা নির্ধারণ করে। আর আন্তর্জাতিক রুটে  প্রতি লিটারের দাম মূল্য ১ ডলার ৯ সেন্ট থেকে বাড়িয়ে করা হয়েছে ১ ডলার ২২ সেন্ট।

জেট ফুয়েলের দাম বেড়ে যাওয়ায় জ্বালানি নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কায় বিপিসি। রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাটির মাসে চাহিদা ৭৫ কোটি ডলারের ঋণপত্র। কিন্তু কিস্তিতেও পরিশোধ করা যাচ্ছে না তেলের দাম। দাম পরিশোধে অপারগতা প্রকাশ করছে ব্যাংকগুলো। এদিকে বারবার তাগিদা দিচ্ছে তেল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান। জেট ফুয়েলসহ জ্বালানি পণ্যের আমদানি ব্যয় বেড়েছে ১১১ শতাংশ।

আগে থেকেই আছে ডলার-সংকট। এখন যুক্ত হয়েছে জ্বালানির উচ্চ মূল্য। আমদানি কমলে সামনে আরও ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হবে বলে আশঙ্কা করছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা। এ সংকটে শুধু বিদ্যুৎ নয়, পরিবহন খাতও চাপে পড়বে। বড় ধরনের বিপর্যয় এড়াতে হলে তেলের দাম পরিশোধে ডলার দিতেই হবে।

আন্তর্জাতিক মুদ্রাবাজারে ডলারের দর বাড়ছেই। ফলে দরপতন হচ্ছে বিভিন্ন দেশের স্থানীয় মুদ্রার। সমস্যা মোকাবিলায় দেশগুলো বিকল্প ব্যবস্থা নেয়া শুরু করেছে। যেমন, রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া ঘোষণা করেছে, রুপির মাধ্যমেই যাতে আন্তর্জাতিক লেনদেন করা যায়, তেমন ব্যবস্থা চালু করা হচ্ছে। অর্থাৎ চীন, রাশিয়ার পর তারাও ডলারকে পাশ কাটানোর নীতি গ্রহণ করেছে।

কোনো দেশের মুদ্রাকে তখনই ‘আন্তর্জাতিক’ বলা হয়, যখন সেটিরা মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ লেনদেন করতে চায়। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য হচ্ছে আমেরিকান ডলার। আমাদের নিজস্ব মুদ্রা ‘আন্তর্জাতিক’ বাণিজ্যে ব্যবহার করা সুযোগ নেই। জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধিও ঠেকানো যাবে না।  আপাতত কৃত্রিম সংকট যেন কেউ সৃষ্টি করতে না পারে সে লক্ষ্যে মনোযোগ বাড়াতে হবে। মনে রাখতে হবে, জ্বালানি ব্যয় বেড়ে গেলেই তার প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়ে, আবার পণ্য পরিবহনের ব্যয় বেড়ে গেলে মূল্যস্ফীতির পরোক্ষ প্রভাব পড়বে সাধারণ মানুষের ওপর। ডলারের সংকটে জ্বালানি তেল আমদানি করতে ব্যাংকে ঋণপত্র খোলা যাচ্ছে না, সরবরাহকারী বিদেশি সংস্থার পাওনা পরিশোধ হচ্ছে না। দেশের চাহিদার প্রায় শতভাগ জ্বালানি তেল বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়। তাই পর্যাপ্ত পরিমাণ ডলারের সংস্থান ও ঋণপত্র খোলার বিষয়ে সহযোগিতা করা যেমন জরুরি, তেমনই মজুদ বা অভ্যন্তরীণ কোনো অনিয়মে যেন সমস্যা প্রকট না হয়, সেদিকেও লক্ষ রাখতে হবে।