Print Date & Time : 11 September 2025 Thursday 7:34 am

জ্বালানি সংকট নিরসনে দ্রুত উদ্যোগ নিন

উন্নয়নের প্রাণভোমরা হচ্ছে বিদ্যুৎ-জ্বালানি আর যোগাযোগ অবকাঠামো। তাই বিশ্বের সব দেশ এসব খাতের ওপর গুরুত্ব দেয়। বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য তিনটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদানÑ গ্যাস, কয়লা ও খরস্রোতা নদী আমাদের রয়েছে। তারপরও বিদ্যুৎ নিয়ে যে হিমশিম খেতে হচ্ছে; তার জন্য সংশ্লিষ্টদের অদূরদর্শিতা, পরিকল্পনাহীনতা এবং ব্যাপক দুর্নীতি দায়ী। বিদ্যুৎ উৎপাদন চাহিদা অনুযায়ী বাড়ানো একটি জটিল ও সময়সাপেক্ষ প্রক্রিয়া। এর জন্য স্বল্পমেয়াদি, মধ্যমেয়াদি এবং দীর্ঘমেয়াদিÑ তিন ধরনের প্রকল্পই নিতে হয়। তা না করে সরকারের শেষ সময়ে কারও ওপর দায় না চাপিয়ে যথোপযোগী ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রায়ই শোনা যায়, হাজার মেগাওয়াট নতুন উৎপাদন ক্ষমতা বিদ্যুৎ খাতে যুক্তই হচ্ছে, কিন্তু তা সত্ত্বেও সুফল পাচ্ছেন না ভোক্তারা। সাফল্য যদি হবেই তাহলে কেন বিদ্যুৎ বিভ্রাট, কোনো লোডশেডিং; কেন শিল্পকারখানা বন্ধ থাকা অনেক এলাকায় আগে মাঝেমধ্যে বিদ্যুৎ যেত, এখন মাঝেমধ্যে আসে।

দেশের শ্রমশক্তির উল্লেখযোগ্য অংশ এখন তৈরি পোশাকসহ শিল্প খাতে নিয়োজিত। রপ্তানি আয়ের প্রায় পুরোটাই শিল্প খাত থেকে আসছে। দেশের কৃষিকে কেন্দ্র করেও এখন দেশে অনেক ধরনের শিল্পকারখানা গড়ে উঠেছে। সরকার কয়েক দফায় গ্যাস, জ্বালানি তেল ও বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে। প্রয়োজন ও বাস্তবতা বিবেচনায়ই হয়তো বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু উচিত ছিল দাম বাড়ার পরও দেশের শিল্পকারখানাগুলো যেতে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস ও বিদ্যুৎ পায়; সেজন্য সর্বাত্মক ব্যবস্থা নেয়া। গ্যাস বিদ্যুৎনির্ভর কারখানাগুলো ধুঁকছে। অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। উৎপাদন সচল থাকলেও অনেক কারখানার সক্ষমতার পুরোটা ব্যবহার করা যাচ্ছে না। শিল্পের উৎপাদন নির্বিঘœ রাখার জন্য নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস ও বিদ্যুৎ প্রয়োজন। কৃষিভিত্তিক অর্থনীতির বাংলাদেশ এখন অনেকটাই শিল্পনির্ভর, কিন্তু বিদ্যুৎ-জ্বালানি সংকটে শিল্পকারখানা বিপাকে আছে। উন্নয়ন, অগ্রগতি অব্যাহত রাখতে. শিল্পকারখানা চালু রাখতে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।

আমাদের চট্টগ্রাম প্রতিনিধি জানিয়েছেন, জ্বালানি সংকটে শিল্পোৎপাদন উৎপাদন অর্ধেকে নেমেছে। চলমান গ্যাস ও বিদ্যুতের সংকটে ব্যাহত হচ্ছে সব ধরনের শিল্প উৎপাদন। ভারী শিল্পখ্যাত সিমেন্ট, ইস্পাত, সিরামিকস, তেল পরিশোধন, চিনি পরিশোধন, পোশাক উৎপাদন ও গাড়ি সংযোজনের কাজ চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। দিনের অর্ধেক সময়ে বিদ্যুৎ না থাকায় উৎপাদন নেমে এসেছে অর্ধেকের চেয়ে বেশি। অন্যদিকে বিকল্প জ্বালানি ব্যবহারের কারণে বেড়েছে উৎপাদন ব্যয়।

বিদ্যুৎ উৎপাদন নিয়ে অনেক সমালোচনা আছে। সেগুলো খণ্ডনে কালক্ষেপণ না করে কীভাবে সরবরাহ নিশ্চিত করা যায়, সে উদ্যোগ নিতে হবে। বলা হয়ে থাকে, দ্রুত চাহিদা মেটাতে তেলচালিত কেন্দ্রগুলোয় বিদ্যুৎ উৎপাদন অনেক বাড়াতে হয়। কোনো বিদ্যুৎ উৎপাদন না করেই বেসরকারি কোম্পানিগুলো নিয়ে যাচ্ছে হাজার হাজার কোটি টাকা। বসে থাকা বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর জন্য নাকি পিডিবিকে গুনতে হয় হাজার হাজার কোটি টাকার ক্যাপাসিটি চার্জ। এখন যেভাবেই হোক নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। জ্বালানি সংকট নিরসনে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।