নিজস্ব প্রতিবেদক: জ্বালানি সংকট নিরসনে সারাদেশে ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করার দাবি জানিয়েছে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন। একই সঙ্গে রাজধানীতে হেঁটে ও বাইসাইকেলে যাতায়াতের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করার আহ্বান জানান তারা।
গতকাল শনিবার রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে আয়োজিত ‘জ্বালানি সংকট মোকাবিলায় ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা হোক’ শীর্ষক অবস্থান কর্মসূচিতে এ আহ্বান জানানো হয়।
পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা), প্রত্যাশা মাদকবিরোধী সংগঠন, মানবাধিকার উন্নয়ন কেন্দ্রসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সামাজিক সংগঠন এ অবস্থান কর্মসূচির আয়োজন করে। এসময় সবাইকে সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ করা হয়।
ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা সময়ের দাবি বলে উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, বর্তমানে সংকটে ভুগছে দেশের জ্বালানি খাত। ফলে স্থানীয় পর্যায়ে সরবরাহে ঘাটতি রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে সরকার জ্বালানি সাশ্রয়ে ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে আনার লক্ষ্যে সপ্তাহে এক দিন পেট্রলপাম্প বন্ধ রাখা, সরকারি কর্মকর্তাদের গাড়ির তেলের বরাদ্দ হ্রাস, একই গাড়িতে একাধিক কর্মকর্তার অফিসে যাতায়াতে উৎসাহিত করাসহ বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়েছে। সম্প্রতি এলজিআরডি থেকে ব্যক্তিগত গাড়ির পরিবর্তে অফিসের বাসে যাতায়াতের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
তারা বলেন, জ্বালানি সংকট বিবেচনায় সরকার জ্বালানি সাশ্রয়ে ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে নানা উদ্যোগ নিয়েছে। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত গাড়ির পরিবর্তে অফিস বাস ব্যবহারের নির্দেশনা দিয়েছে। আমরা সরকারের এসব উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। পাশাপাশি এসব উদ্যোগের কঠোর বাস্তবায়ন ও মনিটরিং নিশ্চিত করার আহ্বান জানাই।
বক্তারা আরও বলেন, শুধু জ্বালানি অপচয় নয়, ব্যক্তিগত গাড়ির অধিক ব্যবহারের ফলে যানজট, শব্দ ও বায়ুদূষণ, দুর্ঘটনাসহ নানা সমস্যা বাড়ে। অধিক জ্বালানি খরচের মাধ্যমে নগরের তাপমাত্রা বাড়ছে ও জলবায়ু বিপর্যয়ের আশঙ্কাও বেড়ে চলেছে। ব্যক্তিগত গাড়ির পার্কিং সুবিধা দিতে গিয়ে হেঁটে যাতায়াত ও সামাজিকীকরণের সুযোগ থেকে জনগণ বঞ্চিত হচ্ছে। জনগণের জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে সামগ্রিকভাবে নগর যাতায়াতে ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন। ঢাকা শহরে অনেকে হেঁটে যাতায়াত করেন। তাদের সুবিধার কথা বিবেচনায় হাঁটা, সাইকেল ও গণপরিবহনে যাতায়াতের নিরাপদ ও সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করা আবশ্যক।
অনুষ্ঠান থেকে কয়েকটি সুপারিশ তুলে ধরেন বক্তারা। সেগুলো হলোÑব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ গ্রহণ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাতায়াতে ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার নিষিদ্ধ, স্বল্প দূরত্বে হেঁটে, সাইকেলে ও রিকশায় যাতায়াতের উপযোগী অবকাঠামো তৈরি, যাতায়াতের ক্ষেত্রে গণপরিবহনকে প্রাধান্য দিয়ে পরিকল্পনা প্রণয়ন, পথচারীর উপযোগী করে ফুটপাত নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণ, সপ্তাহে এক দিন ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচল বন্ধ রাখার পদক্ষেপ গ্রহণ, ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ন্ত্রণে আমদানি কর বৃদ্ধি, ব্যক্তিগত গাড়িবান্ধব অবকাঠামো (এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, ফ্লাইওভার) নির্মাণ থেকে বিরত থাকা।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন প্রত্যাশা মাদকবিরোধী সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হেলাল আহমেদ। ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টের সহকারী প্রকল্প কর্মকর্তা মো. মিঠুনের সঞ্চালনায় এতে বক্তব্য দেন মানবাধিকার উন্নয়ন কেন্দ্রের সভাপতি ও সিইও মাহবুবুল হক, ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট পরিচালক গাউস পিয়ারী, প্রজেক্ট ম্যানেজার নাঈমা আকতার, রায়েরবাজার উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক তাহাজ্জোত হোসেন প্রমুখ।